নিজস্ব প্রতিনিধি, খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, পশ্চিম বর্ধমানঃ আসানসোলের চর্যাপদ বর্তমান সময়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তরুণ নাট্যদল। প্রতিবছর নিয়ম করে দুটি নাট্যমেলা, কয়েকটি নাট্য সেমিনার, নাট্য কর্মশালা এবং নাট্য পত্রিকা প্রকাশ সহ সারা বাংলা জুড়ে নিয়মিত নাট্য প্রদর্শন করে থাকেন। এবছর লকডাউনে কাজগুলি একটু দেরীতে হলেও তা সম্পূর্ণ করলো চর্যাপদ। নভেম্বর ২০২০ তে অন্তরঙ্গ নাট্যোৎসবের ঠিক ৪ মাস পরেই এবার অষ্টম নাট্যমেলার আয়োজন করলো তারা।
দুটি পর্যায়ে নাট্য উৎসব আয়োজিত হলো গত ২১ ও ২৩ মার্চ ২০২১ এ পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে আসানসোল রবীন্দ্রভবন ও আসানসোল জেলা গ্রন্থাগারে। গাছে জল প্রদানের মাধ্যমে উদ্বোধন হয় নাট্যমেলার। শুধু তাই নয়, উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, চর্যাপদ সর্বদাই অভিনবত্বে ভরা কাজ করে থাকে। তাই নাট্যমেলার প্রবেশপত্র সংগ্রহের জন্য দর্শকদের কোনও নির্দিষ্ট মূল্য বেঁধে দেননি তারা। মানুষ নিজের ইচ্ছা ও সাধ্যমূল্যে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করেন। ও প্রেক্ষাগৃহকে কানায় কানায় ভরে তোলেন। মোট তিনটি নাট্য প্রযোজনা মঞ্চস্থ হয়। ২১ শে মার্চ দেখতে পাই, আসানসোল চর্যাপদের নাট্য প্রযোজনা ‘দেবতার গ্রাস’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশিষ্ট কবিতার এক অসাধারণ নাট্যরূপ দেখতে পাই আমরা এই প্রয়াসে। নাটকটির পরিচালনা ও একক অভিনয়ে রুদ্র প্রসাদ চক্রবর্তী তার দক্ষতা প্রদর্শন করেন যথাযথ ভাবে। সংগীত, কোরাস, মঞ্চসজ্জা আলো ও পোশাক প্রভৃতিও ছিলো অনবদ্য। দ্বিতীয় প্রযোজনা বার্ণপুর দিশারীর ‘একটি সকালের অপেক্ষায়’। নাটক রচনা করেছেন সমীর দত্ত, পরিচালনা করেছেন অর্ঘ্য চক্রবর্তী। স্বপন দেওয়ানজীর লেখা দুর্গাপুর আলাপনের নাটক ‘পয়দা বাজার’ দেখি সব শেষে। পরিচালনায় ছিলেন রঞ্জিতা দেওয়ানজী।
এই বছর চর্যাপদ চারুকলা সম্মান প্রাপকেরা ছিলেন দুই জন নাটকের মানুষ। তারা হলেন; দোমোহানী বাজার নাট্যসেনার প্রদীপ কুমার সাধু ও আসানসোল কথাভাষ্যের তাপস দত্ত মহাশয়। চর্যাপদের সেরা ছাত্রীর সম্মান পান, ‘চর্যাপদের মুখ’ হিসেবে ঐন্দ্রিলা তালুকদার। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করেন সুদীপ্ত রায় ও দীপান্বিতা দাস।
এরপরে ২৩ শে মার্চ জেলা গ্রন্থাগারে নাট্যমেলার দ্বিতীয় পর্যায় আয়োজন করে আসানসোল চর্যাপদ। গাব্বুখেলা, হজবরল, নরক গুলজার, আবোলতাবোল,তিন পয়সার পালা নাটকের গান দিয়ে শুরু হয় এই দিনের অনুষ্ঠান। সংগীত পরিবেশনে ছিলেন গীতিকার ও সুরকার উৎপল সিনহা ও কানাইলাল কারফারমা। কল্লোল চন্দ, নিলোৎপল সরকার ও কাকলী দেবনাথ এই গানের অনুষ্ঠানে সহোযোগী হিসেবে ছিলেন।
একই দিনে, ”থিয়েটার, দায়বদ্ধতা ও শিল্প” বিষয়ে আয়োজিত হয় একটি দুর্দান্ত নাট্য সেমিনারের। যাদের বক্তব্যে এই নাট্যালোচনা সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে তারা হলেন; রানীগঞ্জের আশীষ চক্রবর্ত্তী, কুলটির গৌতম ভট্টাচার্য এবং আসানসোলের পলি চ্যাটার্জী।
সেমিনারের বিষয়ে দর্শকদের সরাসরি প্রশ্নের উত্তর দেন বক্তারা আলোচনা শেষে। নাট্যালোচনাটি এক সূত্রে বাঁধেন সঞ্চালক হিসেবে চর্যাপদের পরিচালক রুদ্র প্রসাদ চক্রবর্তী।
এরপরে বিশ্ব নাট্য দিবসের দিন ২৭ মার্চ আয়োজিত হয়। বার্ষিক আভ্যন্তরীণ নাট্য কর্মশালা। চর্যাপদের সকল শিক্ষার্থীরা এই দিন সকালে কর্মশালার প্রশিক্ষক, সংগীতজ্ঞ উৎপল সিনহার কাছে কন্ঠ, স্বর, ধ্বনি, সুর ও তাল ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন।
ঐ দিনই বিকেলে বিশ্বনাট্য দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেন আসানসোলের সকল নাট্যদলের প্রতিনিধিরা। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, বিশ্ব নাট্য দিবসের বিশেষ দিনে চর্যাপদ প্রকাশ করেন তাদের নিয়মিত বার্ষিক নাট্য পত্রিকা “এবং নাটক” এর নাট্যোৎসব সংখ্যা। বিভিন্ন বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্বদের সাক্ষাৎকারে এইবার পত্রিকাটি সেজে উঠেছে।