‘কালবেলা’, ‘কালপুরুষ’, সৃষ্টির কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের শেষকৃত্য সম্পন্ন

Published By: Khabar India Online | Published On:

শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে প্রখ্যাত লেখক সমরেশ মজুমদারের। মঙ্গলবার সকালে হাসপাতাল থেকে কলকাতার শ্যামপুকুর স্ট্রিটের বাড়িতে তার মরদেহ আনা হয়। নিমতলা মহাশ্মশানে তার শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ভিড় করেন বহু অনুরাগী।

শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসের ডেপুটি হাই-কমিশনার এবং সাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের পুত্র আন্দালিব ইলিয়াস, প্রথম সচিব প্রেস রঞ্জন সেন, কলকাতার মহা নাগরিক মেয়র এবং পশ্চিমবঙ্গের নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য, প্রদেশ কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল, বামফ্রন্ট সেক্রেটারি বিমান বসু, সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম,পশ্চিমবঙ্গের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা।

মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘যারা সৃষ্টি করেন তারা কখনও মারা যান না। তার লেখা, সৃষ্টি, রচনার মধ্যে দিয়ে তিনি সারাজীবন বেঁচে থাকেন। মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকেন। যতবার তার বইগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি হবে, তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসবেন। বাংলার পাশাপাশি সমস্ত পাঠক এবং মানুষের হৃদয় তিনি স্পর্শ করেছেন। সে কারণেই বাংলাদেশ, ঢাকা, সুদূর লন্ডন থেকে শোকবার্তা আসছে। সমরেশের লেখা সেখানকার মানুষের কাছে পৌঁছেছে, সেখানকার মানুষের হৃদয়কে ছুঁয়েছে।’

আরও পড়ুন -  আসছে রথযাত্রা

মন্ত্রী শশী পাজা বলেন, ‘সৃষ্টিটা থেকে যাবে আবার স্রষ্টাকেও বাঁচিয়ে রাখা যায় তার তা সৃষ্টির রচনা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে। এত বড় মাপের লেখক হলেও তিনি সেভাবে নিজেকে জাহির করতেন না।’

বিমান বসু বলেন, ‘সমরেশ মজুমদার তার জীবদ্দশায় কিছু দিয়েছেন। বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে তার সাহিত্য সম্ভার গড়ে উঠেছে। যারা তাকে বাস্তবের দর্পণে দেখেন নি, তারা তাকে হারিয়ে ফেললেন। তারা আর তাকে পাবেন না।

আরও পড়ুন -  US Drone Strike: আল-কায়েদার শীর্ষ নেতা নিহত, মার্কিন ড্রোন হামলায়

তিনি বলেন, ‘সমরেশের বই বাংলাদেশেও অসম্ভব জনপ্রিয়। কারণ, মাটির সোঁদা গন্ধ তার লেখার মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠত।’

আন্দালিব ইলিয়াস জানান, ‘সমরেশ মজুমদার একজন কিংবদন্তি উপন্যাসিক ছিলেন। তার প্রয়াণে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই শোক প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের সকল জনগণ ও উপ দূতাবাসের তরফ থেকে আমি এখানে এসে শোক প্রকাশ করছি। এই চলে যাওয়া দুই বাংলার কাছেই অপূরণীয় ক্ষতি।

 বেশ কিছু দিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। গত ২৫ এপ্রিল মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে ভর্তি করানো হয়েছিল সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারজয়ী সাহিত্যিককে। তারপর শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা বাড়তে থাকে। আগে থেকেই সমরেশের সিওপিডির সমস্যা ছিল।

আরও পড়ুন -  Iman-Shovan: শোভনের সুরে ভালোবাসার গানে গলা মেলালেম ইমন, ‘তোমার কপালের শীতঘুমে’

১৯৬৭ সালে দেশ পত্রিকায় ‘দৌড়’ প্রকাশিত হওয়ার পর ‘কালবেলা’, ‘কালপুরুষ’, ‘উত্তরাধিকার’ লিখেন সমরেশ মজুমদার। এ ছাড়া ‘সাতকাহন’, ‘গর্ভধারিণী’, ‘অর্জুন’, ‘মেজরের অ্যাডভেঞ্চার’সহ অনেক পাঠকপ্রিয় উপন্যাস লিখেছেন তিনি, পেয়েছেন অনেক সম্মাননা। চিত্রনাট্যকার হিসেবে বিএফজেএ, দিশারী ও চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির পদকও রয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৮ সালে সমরেশ মজুমদারকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মান প্রদান করে। তিনি সাহিত্য আকাদেমি অ্যাওয়ার্ড, আনন্দ পুরস্কার, বিএফজেএ পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন।

সমরেশ মজুমদারের জন্ম ১৯৪৪ সালের ১০ মার্চ, জলপাইগুড়ির চা বাগান ঘেরা ডুয়ার্সে। স্কুলজীবন কেটেছে জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে। এরপরে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেন।

ফাইল ছবি