Road Cleaning Devices: নর্দমার জল কাজে লাগিয়ে সড়ক পরিষ্কারের যন্ত্র উদ্ভাবন হলো

Published By: Khabar India Online | Published On:

দুর্গাপুরের সিএসআইআর-সিএমইআরআই প্রতিষ্ঠানটি পরিশোধিত নর্দমার জল কাজে লাগিয়ে সড়ক পরিষ্কার রাখার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। নর্দমা বা ম্যানহোল থেকে নোংরা জল প্রথমে পাম্প করে সংগ্রহ করা হয়। এরপর, নোংরা জল একাধিক রাখার পাত্রে জমা করার আগে বিভিন্ন আকারের ছাঁকনি অথবা চালানি দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। প্রাথমিকভাবে পরিষ্কার হওয়া এই জলে রাসায়ণিক উপাদান মিশিয়ে জীবাণু-মুক্ত করা হয়। পরিশেষে, পরিশোধিত এই জল পৃথক একটি চেম্বার বা পাত্রে জমিয়ে রাখা হয়। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা গেছে, পরিশোধিত এই জল ভূপৃষ্ঠের পক্ষে ক্ষতিকারক নয় এবং সড়ক নির্মাণে যে বিটুমিন ব্যবহার করা হয়, তাতেও কোন ক্ষতিসাধন হয় না। এই জল পরিবেশ -বান্ধব-ও বটে। পরিশোধিত এই জল একটি বড় পাত্রে ভরে রাস্তা পরিষ্কারের জন্য কাজে লাগানো হয়। রাস্তায় জল ছেটানোর সময় পাত্র থেকে নির্গত জলে যে প্রেশার বা চাপ সৃষ্টি করা হয় তার ফলে রাস্তার ওপর পড়ে থাকা জঞ্জাল সহজেই সরিয়ে ফেলা সম্ভব। রাস্তার ওপর ছেটানো এই জল নিকাশী নালা ও ম্যানহোলের মাধ্যমে আবার বয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে এই জল আবার একই পদ্ধতিতে সংগ্রহ করে তা কাজে লাগানো হয়। দুর্গাপুরের এই প্রতিষ্ঠানটি নর্দমা ও ম্যানহোল থেকে নোংরা জল সংগ্রহের জন্য যে যন্ত্র উদ্ভাবন করেছে, তার ক্ষমতা এক হাজার লিটারের বেশি। এমনকি, এই যন্ত্রটির সাহায্যে সড়কের ৫০ থেকে ৭০ মিটার অংশ জল ছিটিয়ে পরিষ্কার করা সম্ভব।

আরও পড়ুন -  অকালবোধন

ভারতে জল সম্পদের সুষম পরিচালনা একটি বড় সমস্যা। মহাসড়ক ও রাস্তা পরিষ্কারের ক্ষেত্রে অনেক সময় জলের ঘাটতি দেখা দেয়। রাস্তায় জমা হওয়া বিভিন্ন জঞ্জাল পরিষ্কারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জলের প্রয়োজন হয়। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে এধরণের জঞ্জাল পরিষ্কারের জন্য জলের পর্যাপ্ত সংস্থান থাকে না।

সড়ক ও মহাসড়কগুলির পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে বাঁশের ঝাঁটা দিয়ে কায়িক পরিশ্রমে সড়ক পরিষ্কার করা (ভারতে সড়ক পরিষ্কারের ক্ষেত্রে এটি একটি চিরাচরিত পদ্ধতি), রাস্তার জঞ্জাল একত্রিত করে তা পর্যায়ক্রমে সংগ্রহ করা প্রভৃতি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁটা বা ব্রাশের ব্যবহার পাল্টাচ্ছে। কারণ, জঞ্জাল পরিষ্কারের এই উপকরণগুলি ক্ষয়িষ্ণু। তাই সড়ক পরিষ্কারের ক্ষেত্রে ঝাঁটা বা ব্রাশের প্রচলিত পদ্ধতি আর সময়োপযোগী নয়।

আরও পড়ুন -  TRP: প্রথম স্থান ছিনিয়ে নিল কে? গৌরী-জগদ্ধাত্রীর মধ্যে টেক্কা!

অনেক সময় সড়ক পরিষ্কারের ক্ষেত্রে ভ্যাকুয়াম স্যুইপিং পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু, স্যাঁতস্যাঁতে ও আর্দ্র পরিবেশে এই পদ্ধতিও কার্যকর নয়। এমনকি, এই পদ্ধতিতে অধিকাংশ সময়ই সড়কে জঞ্জাল সংগ্রহ করা পুরোপুরি সম্ভব হয় না। ভ্যাকুয়াম স্যুইপিং মেশিন রাস্তার ওপরে পড়ে থাকা জঞ্জাল সংগ্রহের সঙ্গে সঙ্গে ধুলো-বালিও টেনে নেয়। কিন্তু এই পদ্ধতি ব্যবহারের সময় রাস্তার ধুলো-বালি পরিবেশের সঙ্গে মিশে যায়। ফলে, স্থানীয় ভাবে বায়ু দূষণের সম্ভাবনা থাকে।

সাম্প্রতিক অতীতে এও দেখা গেছে যে, যানবাহন থেকে নির্গত কার্বন, সড়কের উপরের স্তরের ব্যবহারের ফলে ধুলো ও বালিকণার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, যানবাহনের টায়ার থেকে বিভিন্ন উপাদানের নির্গমণের ফলেও সড়কে ধুলো ও বালিকণার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই কায়িক পরিশ্রমে রাস্তার জঞ্জাল পরিষ্কারের তুলনায় পরিশোধিত জল ব্যবহার করে রাস্তা পরিচ্ছন্ন রাখার পদ্ধতি অনেক বেশি কার্যকর। কয়েকটি প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গেছে, জল ছিটিয়ে রাস্তা পরিষ্কারের পদ্ধতির ফলে ধুলো-বালির মত উপাদান সড়ক পরিষ্কারের প্রথম এক ঘন্টায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত এবং দৈনিক ভিত্তিতে প্রায় ১৮ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়। এই পদ্ধতিতে রাস্তা পরিষ্কারের পর জমে থাকা জঞ্জাল অবিলম্বে সংগ্রহ করে নিতে হয়। কারণ, জলে ভিজে থাকা জঞ্জাল বেশি সময় পড়ে থাকলে তা সড়ক নির্মাণে ব্যবহৃত বিটুমিনের ক্ষতিসাধন করতে পারে। এমনকি, গরমের সময় জলের বাষ্পীভূত হওয়া একটি সাধারণ প্রক্রিয়া। তাই, জল ছিটিয়ে রাস্তা পরিষ্কারের পদ্ধতি রাস্তার উপরের অংশকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এই প্রেক্ষিতে পরিশোধিত জলের সদ্ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকর। সেদিক থেকে প্রতিষ্ঠানের এই যন্ত্রটি নিয়মিত ভাবে সড়ক পরিষ্কারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর হবে বলে প্রতিষ্ঠানের তরফে জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন -  CBI: সিবিআইয়ের তদন্ত শুরু, ওড়িশায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার

এই প্রয়োজনীয়তার বিষয়গুলিকে বিবেচনায় রেখেই দুর্গাপুরের সিএসআইআর-সিএমইআরআই প্রতিষ্ঠানটি এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এখন দেখার বিষয় বাস্তবে এই প্রযুক্তি কিভাবে সদ্ব্যবহার করা যায়। সূত্রঃ পিআইবি