খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডঃ হর্ষ বর্ধন আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিঃ গ্রেগরি অ্যান্ড্রু হান্ট-এর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে দুটি দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া স্বাস্থ্য ও ওষুধের বিষয়ে ২০১৭-র ১০ই এপ্রিল একটি সমঝোতাপত্রে স্বাক্ষর করেছিল। ম্যালেরিয়া এবং যক্ষ্মার মতো সংক্রমিত ব্যাধি, মানসিক স্বাস্থ্য, সংক্রমিত নয় এরকম অসুখ, জীবাণুনাশক প্রতিরোধী সমস্যা, ওষুধ নির্মাণ সংক্রান্ত নিয়মকানুন, টিকা, চিকিৎসা সরঞ্জাম সহ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় এই চুক্তিতে স্থান পেয়েছে। কোভিড মহামারীর মতো জনস্বাস্থ্যের জরুরি পরিস্থিতি দেখা দিলে কি করণীয়, ওই সমঝোতাপত্রটিতে সেই বিষয়টিও উল্লেখ করা আছে।
ডঃ হর্ষ বর্ধন, মিঃ গ্রেগরি হান্টের দাতব্য সংস্থাটির প্রশংসা করেন। এই দাতব্য সংস্থা স্বমগ্নতায় (অটিজম) থাকা শিশুদের জন্য ৫ কিলোমিটারের দৌড় এবং নাবালকদের ডায়াবেটিসের বিষয়ে সচেতনতা নিয়ে নানা কর্মসূচী পালন করে থাকে। ডঃ হর্ষ বর্ধন আলোচনার সময় অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে একযোগে কাজ করার বিষয়ে উল্লেখ করেন। উন্নত দেশগুলির মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বেশ ভালো। ভারতের স্বাস্থ্যক্ষেত্রের পরিধি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ১০ বছরে এর আর্থিক মূল্য দাঁড়াবে ২৭,৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমতুল। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা আন্তর্জাতিক স্তরে অর্থনীতির মন্দাভাব সত্ত্বেও ক্রমশ বাড়ছে। ভারত গবেষণা ও উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য পর্যটনে নতুন নতুন সুযোগ তৈরি করছে। এদেশের আয়ুর্বেদ এবং যোগ অস্ট্রেলিয়ার স্থুলতা ও এর ফলে সৃষ্ট নানা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা মেটাতে সাহায্য করবে।
ডঃ হর্ষ বর্ধন জানান, প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী স্বাস্থ্যকে সামাজিক আন্দোলনের রূপ দিচ্ছেন। ভারতের সর্বজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা ౼ আয়ুষ্মান ভারত ১০ কোটি পরিবারকে চিকিৎসার পরিষেবার সুযোগ করে দিয়েছে। গত বছর ১ কোটি মানুষ এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। ২০২৫ সালের মধ্যে ভারত যক্ষ্মা রোগকে নির্মূল করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। উচ্চ রক্তচাপ সহ স্তন, ফুসফুস, গলা এবং মুখের ক্যান্সারের মতো সংক্রামিত নয় এরকম অসুখের জন্য দেশে নিয়মিত নজরদারি চালানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের জন্য ডিজিটাল প্রক্রিয়ার সাহায্য নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে যাতে প্রতিটি নাগরিক স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে পারেন। এছাড়াও, ক্যান্সার এবং হৃদরোগের ওষুধ যেন স্বল্প মূল্যে পাওয়া যায় এবং হৃদরোগীরা বিভিন্ন যন্ত্র বা স্টেন্ট যেন সহজেই বসাতে পারেন, সেই লক্ষ্যে ‘অমৃত’ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। ডঃ বর্ধন জানান, ৪০ কোটি দরিদ্র মানুষ যেন স্বাস্থ্য পরিষেবা পান, প্রধানমন্ত্রী সেটি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছেন।
মিঃ হান্ট বলেন, প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন। অস্ট্রেলিয়ার সর্বজনীন টেলি-মেডিসিন ব্যবস্থা সে দেশের ১ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষের কাছে সহায়ক হয়ে উঠেছে। অস্ট্রেলিয়ায় সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। স্বল্পমূল্যের জেনেরিক ওষুধের ৬০ শতাংশ সারা পৃথিবীতে ভারত সরবরাহ করে – এই বিষয়টি উল্লেখ করে মিঃ হান্ট বলেন, অস্ট্রেলিয়ার নতুন নতুন ওষুধ নিয়ে গবেষণার কাজে এবং জিন বিন্যাস ও স্টেম সেল প্রযুক্তির গবেষণায় ভারতের সাহায্যের প্রয়োজন।
কোভিড মহামারীর সময়ে ভারতীয় স্বাস্থ্যক্ষেত্রে যুক্ত ব্যক্তিদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে ডঃ হর্ষ বর্ধন জানান, এই মহামারী নিয়ন্ত্রণে এদেশের স্বাস্থ্যকর্মীরা অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করছেন। তিনি বলেন, একদিকে যেমন নতুন ওষুধ উদ্ভাবনে তাঁরা সাহায্য করছেন, অন্যদিকে পুরনো ওষুধ সংক্রমিতদের ওপর প্রয়োগ করার বিষয়েও পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। তাঁরা এই ভাইরাসের জিনের বিন্যাস নিয়েও কাজ করছেন। জানুয়ারি মাসে দেশে মাত্র একটি পরীক্ষাগারে যেখানে নমুনা পরীক্ষা করা হত, আজ দেশ জুড়ে ১,২০০ পরীক্ষাগারে এই সুবিধা গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়াও তিনি জানান, ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি ১৪০টি দেশে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন সরবরাহ করেছে।
দু’দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা স্বাস্থ্য সহ পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করার বিষয়ে অঙ্গীকার করেছেন। সূত্র – পিআইবি।