সবকিছুই অনলাইন হতে শুরু করেছে। আর এই অনলাইনকরণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে করোনাভাইরাস অতিমারি। বর্তমানে পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সবাইকেই মানিয়ে নিতে হবে, তাই, এবারে বিহারের একজন ভিখারিও হয়ে উঠেছেন ডিজিটালি উন্নত। বর্তমানে ৪০ বছর বয়সী বিহারের বেতিয়া জেলার ভিখারি রাজু প্যটেল ডিজিটালভাবে ভিক্ষা গ্রহণ করছেন। যেকোনো ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণ করেন তিনি। বিহারের বেতিয়া রেলওয়ে স্টেশনে তিনি বহু বছর ধরে ভিক্ষা করেন এবং সম্প্রতি তিনি একটি কিউআর কোড প্ল্যাকার্ড নিয়ে ভিক্ষা করার নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে ফেলেছেন।
একটি ডিজিটাল ট্যাবলেট এবং একটি কিউআর কোড প্ল্যাকার্ড তিনি ঝুলিয়ে রাখেন নিজের গলায়। একটি সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থার সঙ্গে কথা বলার সময় রাজু বললেন, “আমি ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহন করি এবং যেটুকু আমি পাই তাতে আমার দিন চলে যায়। আমি একেবারে শৈশবকাল থেকে ভিক্ষা করতে শুরু করেছিলাম। তবে সম্প্রতি আমি ভিক্ষার পদ্ধতি একটু পাল্টানোর চেষ্টা করেছি।” তিনি আরো বলছেন, “সারাদিন ভিক্ষা করার পরে আমি এই স্টেশনেই ঘুমাই। অন্য কোন বসতবাড়ি কিংবা ঠিকানা আমার কাছে নেই। অনেক সময় যারা আমাকে ভিক্ষা দিতে চান তারা বলেন, এই মুহূর্তে যখন সবকিছুই ক্যাশলেস হয়ে যাচ্ছে। তাই এই সময় ক্যাশ টাকা পকেটে নিয়ে ঘোরার কোন প্রয়োজন নেই। ছোট অংকের ক্যাশ টাকা নিয়ে ঘুরতে কেউ পছন্দ করেনা এই মুহূর্তে। অন্যদিকে, ইলেকট্রনিক-ওয়ালেট এবং ফোন পে এর যুগে, ক্যাশ পকেটে নিয়ে অনেকেই চলতে চান না। ঠিক এই কারনেই আমি একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ওপেন করেছি এবং একটি ইলেকট্রনিক ওয়ালেট ওপেন করেছি। এর মাধ্যমে আমি ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহন করতে পারি।”
রাজু বলছেন, এখনো পর্যন্ত অনেকেই আছেন যারা আমাকে হাতে ভিক্ষা দিতে বেশি সাবলীল কিন্তু অনেকে এমনও আছেন যারা আমাকে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ভিক্ষা দিয়ে থাকে। রাজু আরো বলছেন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় তার কাছ থেকে প্যান কার্ড এবং আধার কার্ড চাওয়া হয়েছিল। আধার কার্ড তার ছিলই কিন্তু ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য তিনি একটি প্যান কার্ড পর্যন্ত তৈরি করিয়েছেন। বেতিয়া জেলার স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার প্রধান ব্রাঞ্চে রাজু প্যাটেল অ্যাকাউন্ট খুলেছেন নিজের। সেখান থেকেই তিনি একটি ইলেকট্রনিক ওয়ালেট তৈরি করে ফেলেছেন।
বেতিয়া রেলওয়ে স্টেশনের সামনাসামনি এলাকায় ডিজিটাল মাধ্যমে ভিক্ষা করে থাকেন। রাজু প্যাটেল নিজেকে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের সমর্থক বলে দাবি করেন এবং তিনি বলেন তিনি লালু প্রসাদ যাদবের প্রত্যেকটি অনুষ্ঠান নিয়মিতভাবে দেখতে পছন্দ করেন। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মন কি বাত’ রেডিও অনুষ্ঠানটিও তিনি নিয়মিত ফলো করেন। নেটদুনিয়ায় অনেকেই রাজুর এই ডিজিটাল ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়েছেন।