খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ ভারতে গত সপ্তাহে বুনিয়াদী পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আরও একটি উচ্চাকাঙ্খী পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটর (এএ) নেটওয়ার্ক, যা আর্থিক তথ্য বিনিময়ের একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে বিনিয়োগ এবং ঋণদানের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনতে পারবে। একইভাবে, লক্ষ লক্ষ গ্রাহক তাঁর আর্থিক খতিয়ান সহজেই হাতে পাবেন এবং তার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন। অন্যদিকে, এই তথ্য ঋণদাতা ও আর্থিক প্রযুক্তি-নির্ভর সংস্থাগুলিকেও সরবরাহ করা যাবে। অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটররা ব্যক্তি-বিশেষের আর্থিক তথ্য নিয়ন্ত্রণ করতে ক্ষমতা যোগায়। অন্যথায়, এই তথ্য গোপন থেকে যায়।
ভারতে নিজস্ব ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা চালু করার ক্ষেত্রে এটি প্রথম পদক্ষেপ। শুধু তাই নয়, নিজস্ব এই ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ গ্রাহক নিরাপদে এবং পারদর্শিতার সঙ্গে নিজের আর্থিক তথ্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিময় করতে এবং এ ধরনের তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে হাতের নাগালে পাবার সুবিধা পাবেন।
ভারতের বৃহৎ ৮টি ব্যাঙ্ককে সঙ্গে নিয়ে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা ব্যবস্থায় অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটর পদ্ধতির সূচনা হয়েছে। এই ব্যবস্থায় ঋণদান ও সম্পদ পরিচালনা আরও দ্রুততর হবে এবং স্বল্প খরচেই করা যাবে।
১) একজন অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটর আসলে কি?
একজন অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটর (এএ) আসলে আরবিআই নিয়ন্ত্রণাধীন একধরণের সংস্থা (এদের এনবিএফসি-এএ লাইসেন্স থাকে)। এরা ব্যক্তি বিশেষকে কোন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজের অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য নিরাপদে ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে অন্য একটি নিয়ন্ত্রিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যেটি এএ নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত সেখানে বিনিময়ে সাহায্য করেন। তবে, ব্যক্তি বিশেষের সম্মতি ছাড়া তথ্য লেনদেন সম্ভব নয়।
একজন ব্যক্তি অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটরের মধ্য থেকে একজনকে চিহ্নিত করতে পারেন। অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটররা দীর্ঘস্থায়ী ভাবে এবং ব্ল্যাঙ্ক চেক গ্রহণে কন্ডিশন ফর্ম সম্পর্কিত ব্যবস্থা দূর করতে সাহায্য করে, সেই সঙ্গে ধাপে ধাপে অনুমতি সাপেক্ষে ব্যক্তি বিশেষের তথ্য ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার পায়।
২) কিভাবে নতুন অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটর নেটওয়ার্ক একজন গড়পরতা ব্যক্তির আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটাবে?
ভারতের অর্থ ব্যবস্থায় এখন গ্রাহকদের কাছে একাধিক বাধাবিপত্তি রয়েছে – এজন্য তাদের বাস্তবিক স্বাক্ষর, ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টের স্ক্যান কপি, নোটারির কাছি ছুটে যাওয়া বা স্ট্যাম্প ডকুমেন্ট অথবা ব্যক্তিগত ইউজার নেম এবং পাশওয়ার্ড পর্যন্ত গোপনীয় তথ্য তৃতীয় পক্ষকে জানাতে হয়। কিন্তু অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটর নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় খুব সহজেই এই বাধা-বিপত্তি দূর হবে। মোবাইল ভিত্তিক সরল ও নিরাপদ ডিজিটাল ডেটা পাওয়া ও বিনিময়ের সুবিধা মিলবে। এর ফলে, এক নতুন ধরণের পরিষেবার সুযোগ তৈরি হবে, যা পক্ষান্তরে নতুন ধরণের ঋণ পরিষেবা গ্রহণের মত।
এই সুবিধা গ্রহণে ব্যক্তি বিশেষের ব্যাঙ্ককে অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটর নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে হবে। ইতিমধ্যেই ৮টি ব্যাঙ্ক এতে যুক্ত হয়েছে – এবং ৪টি ব্যাঙ্ক (এক্সিস, আইসিআইসিআই, এইচডিএফসি এবং ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্ক) সম্মতির ভিত্তিতে তথ্য লেনদেন শুরু করেছে। বাকি ৪টি ব্যাঙ্ক (ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক, কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক, আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাঙ্ক এবং ফেডারেল ব্যাঙ্ক) শীঘ্রই লেনদেন প্রক্রিয়া শুরু করবে।
৩) আধার ইকেওয়াইসি সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়, ক্রেডিট ব্যুরো তথ্য বিনিময় এবং পিকেওয়াইসি-র মত প্ল্যাটফর্মগুলির তুলনায় অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটররা কিভাবে পৃথক ?
আধার ইকেওয়াইসি এবং সিকেওয়াইসি ব্যবস্থায় কেবল চারটি পরিচিতি সম্পর্কিত তথ্য কেওয়াইসি-র জন্য বিনিময় করা হয়। এগুলি হল নাম, ঠিকানা, লিঙ্গ প্রভৃতি। একই ভাবে, ক্রেডিট ব্যুরো ডেটায় কেবল ঋণ সম্পর্কিত খতিয়ান এবং / বা ক্রেডিট সম্পর্কিত পরিসংখ্যান থাকে। অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটর নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সেভিং / ডিপোজিট / কারেন্ট অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য বা ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট সম্পর্কিত তথ্য বিনিময় করা যায়।
৪) কি ধরণের তথ্য বিনিময় করা যেতে পারে ?
এখন, ব্যাঙ্কিং লেনদেন সম্পর্কিত তথ্য (উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, কারেন্ট বা সেভিং অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত ব্যাঙ্ক তথ্য) সেই সমস্ত ব্যাঙ্কগুলি যারা নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে তাদের মধ্যে বিনিময় করা যায়।
ধীরে ধীরে অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটর কাঠামোয় কর, পেনশন, সিকিউরিটি (মিউচুয়াল ফান্ড এবং ব্রোকারেজ) এবং বীমা সম্পর্কিত তথ্য সহ যাবতীয় আর্থিক তথ্য ধীরে ধীরে গ্রাহকদের কাছে সহজলভ্য হবে। এমনকি এই কাঠামোয় আর্থিক ক্ষেত্রের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও টেলিযোগাযোগ সম্পর্কিত তথ্য অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটরদের মাধ্যমে ব্যক্তি বিশেষের কাছে পৌঁছে যাবে।
৫) অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটররা কি ব্যক্তিগত তথ্য দেখতে বা একত্রিত করতে পারেন ? তাহলে তথ্যের লেনদেন কি নিরাপদ ?
অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটররা কোন তথ্যই দেখতে পান না; তারা কেবল একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যক্তি বিশেষের সম্মতির ভিত্তিতে অন্য একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এই তথ্য বিনিময় করতে পারেন। ব্যক্তি বিশেষের নাম নির্বিশেষে তারা আপনার কোন তথ্যই একত্রিত করতে পারেন না। অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটররা কোন একটি প্রযুক্তি নির্ভর সংস্থার মত নয়, যারা আপনার তথ্য একত্রিত এবং আপনার সম্পূর্ণ বিবরণ বা প্রোফাইল তৈরি করতে পারে।
অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটররা যে তথ্য বিনিময় করেন তা প্রেরকের পক্ষ থেকে লিপিবদ্ধ হয় এবং কেবল প্রাপ্তি স্বীকারকারীরা এই তথ্য মুছে ফেলতে পারেন। আগাগোড়া লিপিবদ্ধকরণ প্রক্রিয়া এবং ডিজিটাল সিগনেচারের মত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে তথ্য বিনিময় ব্যবস্থা কাগজের নথিপত্র আদান-প্রদানের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ।
৬) একজন গ্রাহক তথ্য বিনিময় না করার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কি ?
হ্যাঁ। একটি অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটর নেটওয়ার্কের সঙ্গে নিবন্ধিকরণের বিষয়টি গ্রাহকের সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাধীন। গ্রাহক যে ব্যাঙ্কের পরিষেবা নিচ্ছেন, সেই ব্যাঙ্ক যদি এই নেটওয়ার্কে ইতিমধ্যেই যুক্ত হয়ে থাকে, তাহলে একজন ব্যক্তি অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটর নেটওয়ার্কে নথিভুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ব্যাঙ্কের কোন অ্যাকাউন্টের সঙ্গে নেটওয়ার্ক লিঙ্ক করতে চান এবং কোন অ্যাকাউন্ট থেকে তথ্য বিনিময় করতে চান, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে, নতুন কোন ঋণ দাতা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটরের সম্মতির মাধ্যমে তথ্য বিনিময় করা যেতে পারে। একজন গ্রাহক তথ্য বিনিময়ের সম্মতি সম্পর্কিত অনুরোধ যে কোন সময় খারিজ করতে পারেন। যদি একজন গ্রাহক একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রেকারিং পদ্ধতিতে তথ্য বিনিময়ে সম্মতি দেন, তবে তিনি যে কোন সময় এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে পারেন।
৭) একজন গ্রাহক যদি আমার তথ্য একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একবার বিনিময় করেন, তাহলে তারা কতদিন এটি ব্যবহার করতে পারবেন ?
তথ্য প্রাপক প্রতিষ্ঠানটি সঠিক কত সময় ধরে আপনার তথ্য ব্যবহার করবে তা সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের তথ্য বিনিময়ে সম্মতি দেওয়ার সময় জানা যাবে।
৮) কিভাবে একজন গ্রাহক অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটরের কাছে নথিভুক্ত হতে পারেন ?
আপনি অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটদের কাছে নথিভুক্ত হতে পারেন। অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটররা আপনাকে ইউজার নেম দেবে। এই ইউজার নেম তথ্য বিনিময়ে সম্মতির সময় ব্যবহার করা যেতে পারে।
বর্তমানে অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটরদের সঙ্গে নথিভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে ডাউনলোড করা সম্ভব এমন চারটি অ্যাপ রয়েছে। এগুলি হল ফিনভু, ওয়ানমানি, ক্যামস ফিন্সার্ভ এবং এনএডিএল। আরও তিনটি অ্যাপ আরবিআই-এর কাছ থেকে নৈতিক অনুমোদন পেয়েছে। শীঘ্রই ফোনপে, ওডলি এবং পারফিওস এই তিনটি অ্যাপের সূচনা হবে।
৯) একজন গ্রাহকের প্রত্যেক অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটর নেটওয়ার্কে নিবন্ধিকরণের প্রয়োজনীয়তা আছে কি ?
না, একজন গ্রাহক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত যে কোন ব্যাঙ্ক থেকে তথ্য পরিষেবা নিতে যে কোন অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটরের সঙ্গে নিবন্ধিকরণ করতে পারেন।
১০) একজন গ্রাহকের এই সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটরকে কোন মাশুল দেওয়া প্রয়োজন কি ?
মাশুল মেটানোর বিষয়টি নির্ভর করবে অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটরের ওপর। কয়েকটি ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটর নেটওয়ার্কের পরিষেবা নিঃশুল্ক হতে পারে, কারণ অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটর আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পরিষেবা শুল্ক নিয়ে থাকে। অবশ্য কয়েকটি ক্ষেত্রে পরিষেবা ব্যবহারের দরুণ অল্প মাশুল দিতে হতে পারে।
১১) অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটর নেটওয়ার্কে তথ্য বিনিময় ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ব্যাঙ্কের কাছ থেকে একজন গ্রাহক নতুন কি পরিষেবা পেতে পারেন ?
গুরুত্বপূর্ণ যে দুটি পরিষেবার মান বাড়বে, তারমধ্যে প্রথমটি হল একজন ব্যক্তি ঋণের সুবিধা পাবেন এবং দ্বিতীয়টি হল অর্থ পরিচালনার সুবিধা। যদি একজন গ্রাহক এখন ছোট ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত ঋণ নিতে চান, সেক্ষেত্রে ঋণ দাতার সঙ্গে একাধিক নথিপত্র বিনিময় করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই এটি সময় সাপেক্ষ পদ্ধতি হলেও বর্তমানে এই প্রক্রিয়া মেনেই ঋণ দেওয়া হয়। এর ফলে, ঋণ দানের সম্মতির ক্ষেত্রেও সময় লাগে এবং ঋণ সুবিধা নিতেও দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়। একই ভাবে অর্থ পরিচালনা এখন বেশ জটিল প্রক্রিয়া। কারণ, তথ্য বিভিন্ন জায়গায় একত্রিত হয়ে থাকে এবং এই তথ্য একত্রিত করে বিশ্লেষণ করাও সময় সাপেক্ষ।
কিন্তু অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটর নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একটি সংস্থা দ্রুততার সঙ্গে এই তথ্য পেতে পারে এবং তথ্য ফাঁসেরও কোন সম্ভাবনা থাকে না। এর ফলে, ঋণ সুবিধা সংক্রান্ত মূল্যায়ণ প্রক্রিয়া দ্রুততর হয় এবং সংশ্লিষ্ট গ্রাহক সহজেই ঋণ হাতে পান। এছাড়াও একজন গ্রাহক কোন জামানত ছাড়াই ঋণ সুবিধার সুযোগ নিতে পারেন। তবে, সেক্ষেত্রে জিএসটি বা জিইএম-এর মত সরকারি ব্যবস্থা থেকে তথ্য বিনিময় করা যেতে পারে। সূত্রঃ পিআইবি।