খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব শ্রী রাজেশ ভূষণ পশ্চিমবঙ্গ, কেরল এবং দিল্লির কোভিড পরিস্থিতি এবং জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা পর্যালোচনা করলেন ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে। ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন, নীতি আয়োগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সদস্য ড. ভি. কে পল, আইসিএমআর-এর ডিজি ড. বলরাম ভার্গব, রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য সচিবরা এবং অন্যান্য বরিষ্ঠ স্বাস্থ্য আধিকারিক। এই রাজ্যগুলিতে সংক্রমণ বেড়ে চলায় বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
দিল্লিতে আজ পর্যন্ত অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ২৯,৩৭৮, মৃত্যুর হার ১.৭৬ শতাংশ, পজিটিভিটির হার ৭.৯ শতাংশ। গত ২৪ ঘন্টায় ৫৬৭৩টি নতুন সংক্রমণ ঘটেছে। গত ৪ সপ্তাহের মধ্যে নতুন সংক্রমণ প্রায় ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৪ সপ্তাহে পজিভিটিভির হার বেড়েছে ৯ শতাংশ। দিল্লির প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ উৎসবের জমায়েত, বায়ুর গুণমান হ্রাস, শ্বাসপ্রশ্বাসের অসুবিধার ঘটনা বৃদ্ধি এবং কাজের জায়গায় পজিটিভ কেসের ভিড়। অগ্রবর্তী কর্মীদের মধ্যে ক্লান্তির বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।
কেন্দ্রশাসিত ঐ অঞ্চলকে জোরদার ভাবে নমুনা পরীক্ষা বৃদ্ধি, আরটি-পিসি পরীক্ষা বৃদ্ধি এবং সংক্রমণের খবর পাওয়া মাত্র প্রথম ৭২ ঘন্টার মধ্যে আইসোলেশন কার্যকর করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়াও কনটেইনমেন্ট এলাকা এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নীতি – নির্দেশিকা কঠোরভাবে পালনের পরামর্শ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে আইইসি ব্যবস্থার ওপরে অতিরিক্ত জোর এবং অতি সক্রিয়ভাবে মাস্ক পরা এবং অন্য কোভিড বিধি মেনে চলার ওপর জোর দিতে বলা হয়।
পশ্চিমবঙ্গে আজ পর্যন্ত অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ৩৭,১১১, রাজ্যে মৃত্যুর হার ১.৮৪ শতাংশ এবং পজিটিভিটির হার ১.৩ শতাংশ। রাজ্যে গত ২৪ ঘন্টায় ৩৯২৪টি নতুন সংক্রমণ হয়েছে। গত ৪ সপ্তাহে দৈনিক গড় সংক্রমণ ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৪ সপ্তাহে পজিটিভিটির হার বেড়েছে ১ শতাংশ। দার্জিলিং, নদীয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, জলপাইগুড়িতে সংক্রমণ বৃদ্ধির লক্ষণ পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, কোচবিহার, কলকাতা এবং দার্জিলিং-এ গত সপ্তাহে মৃত্যুর সাপ্তাহিক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজ্যের প্রতি ১০ লক্ষ জনসংখ্যায় ৪১,২৬১টি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। যেখানে জাতীয় গড় ৭৭,২২০।
রাজ্যকে কঠোরভাবে “টেস্ট-ট্র্যাক-ট্রিট” রণকৌশল অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে নমুনা পরীক্ষা নিয়ে কোনো রকম সমঝোতা না করতে এবং দৈনিক নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর বিশেষ করে আরটিপিসিআর পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরিষেবার সঠিক গুণমান এবং দ্রুত চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এও বলা হয়েছে, নিয়মিতভাবে উপসর্গ উৎপত্তি এবং বাড়িতে নিভৃতবাসে থাকা রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করার প্রবণতার ওপর নজর রাখতে। রাজ্যকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, দ্রুত কনট্যাক্ট ট্রেসিং এবং সংক্রমণ ঘটলেই দ্রুত নিভৃতবাস বলবৎ করার ।
কেরলে সংক্রমণ বৃদ্ধির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এপর্যন্ত মোট অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ৯৩,৩৬৯। গত ৪ সপ্তাহে দৈনিক গড় সংক্রমণ ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১৪ দিনে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ৯৮,৭৭৮। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে সংক্রমণ হয়েছে ৮৭৯০টি। ত্রিচুর আলাপূজা, কোট্টায়াম, পাথনমথিট্টা, মল্লপুরম জেলায় সংক্রমণ বৃদ্ধির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে রাজ্যে মৃত্যুর ঘটনা কম। রাজ্যে মৃত্যুর হার ০.৩৪ শতাংশই রয়ে গেছে, যদিও সাপ্তাহিক মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে ত্রিচুর (১৩৩ শতাংশ), কল্লম (৭৫ শতাংশ), আলাপূজা (৩১ শতাংশ), এরনাকুলাম (৩০ শতাংশ) এবং কান্নুরে (১৫ শতাংশ)।
প্রতি ১০ লক্ষ জনসংখ্যায় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ৬৬,৭৫৫। পজিটিভিটির হার উল্লেখ্যযোগ্যভাবে খুব বেশি ১৬.৫ শতাংশ। পজিটিভিটির হার গত ৪ সপ্তাহে ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এটা বলা হয়েছে যে উৎসবের কারণে নতুন সংক্রমণ বৃদ্ধির ঘটনা গভীর উদ্বেগের। রাজ্যকে আইইসি ব্যবস্থা জোরদার করার এবং কঠোরভাবে মাস্ক পরানোর ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কেরলে সংলগ্ন জেলা এবং রাজ্যের সীমান্তে কনট্যাক্ট ট্রেসিং-এর ওপর নজরদারী চালানো হচ্ছে, তবে কয়েকটি জেলা যেখানে পজিটিভিটির হার বেশি যেমন মালাপ্পুরম, সেখানে আরো ভালো ব্যবস্থাপনা বলবৎ করার প্রয়োজন আছে।
রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা যেমন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, স্যানিটাইজেশন, মাস্ক পরা ইত্যাদি বলবৎ নিশ্চিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সূত্র – পিআইবি।