খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় প্রবীন্দ কুমার জুগনাউথজী; উপস্থিত মন্ত্রীগণ এবং মরিশাসের বিশিষ্ট জনেরা; শ্রদ্ধেয় অতিথিবর্গ; নমস্কার, বোঁজো,
আপনাদের সকলকে আমার অভিনন্দন। প্রথমত, আমি মরিশাস সরকার ও জনগণকে বিশ্ব জুড়ে কোভিড মহামারী তাঁদের দেশে সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, ভারত সঠিক সময়ে ওষুধ পাঠিয়ে এবং বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়ে আপনাদের সাহায্য করতে পেরেছে।
বন্ধুগণ, আজ ভারত ও মরিশাসের মধ্যে বিশেষ বন্ধুত্বের সম্পর্কের আরেকটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত উপস্থিত। পোর্ট ল্যুই’তে নতুন সুপ্রিম কোর্ট ভবন আমাদের সহযোগিতা এবং সমমূল্যবোধের প্রতীক। ভারত ও মরিশাস౼ দুটি দেশই আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসাবে নিরপেক্ষ বিচার-ব্যবস্থাকে সম্মান করে। আধুনিক কারিগরি ব্যবস্থায় নির্মিত এই নজর কাড়া ভবনটি সেই সম্মানেরই প্রতিফলন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, এই প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ হয়েছে এবং এর জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল, তার মধ্যেই এই নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জুগনাউথজী , মাস কয়েক আগেই আমরা যৌথভাবে মেট্রো প্রকল্প ও অত্যাধুনিক হাসপাতালের উদ্বোধন করেছিলাম। আমি জেনে আনন্দিত যে, মরিশাসের জনগণের কাছে এই প্রকল্পগুলি অত্যন্ত কার্যকর হয়েছে।
বন্ধুগণ, ভারতের ‘সাগর’ – এই অঞ্চলে সকলের জন্য নিরাপত্তা ও উন্নয়ন পরিকল্পনাটি আমি মরিশাসেই প্রথম জানিয়েছিলাম। এর কারণ হ’ল – ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মরিশাস আমাদের হৃদয়ে রয়েছে। আর আজ আমি আরও জানাতে চাই, ভারতের উন্নয়নমুখী অংশীদারিত্বের উদ্যোগে মরিশাস কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
বন্ধুগণ, মহাত্মা গান্ধী সঠিভাবেই বলেছিলেন, আর আমি তাঁর সেই বক্তব্য উদ্ধৃত করছি – “আমি সারা বিশ্বের কথা ভাবতে চাই। আমার দেশাত্মবোধ মানবজাতির কল্যাণে নিয়োজিত। তাই, ভারতের প্রতি আমার সেবা মানবজাতির প্রতি সেবারই অঙ্গ” – এটিই হ’ল ভারতের দর্শন। ভারত চায় উন্নয়ন এবং অন্যদেরকে তাদের উন্নয়নে সাহায্য করতে সে ইচ্ছুক।
বন্ধুগণ, ভারতের উন্নয়ন হ’ল মানব-কেন্দ্রিক। আমরা মানবজাতির কাজ করতে চাই। ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে যে, উন্নয়নমূলক সহযোগিতার নামে বিভিন্ন রাষ্ট্র নির্ভরতার অংশীদারিত্বে বাধ্য করায় ౼এর থেকেই সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিক শাসনের সূত্রপাত। এর মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক শক্তিধর দেশগুলির একটি গোষ্ঠী তৈরি হয় আর মানবজাতি তার ফল ভোগ করে।
বন্ধুগণ, ভারতের উন্নয়নমূলক সহযোগিতার নীতি ‘সম্মান’, ‘বৈচিত্র্য’, ‘ভবিষ্যতের প্রতি যত্নবান হওয়া’ এবং ‘স্থিতিশীল উন্নয়ন’ – এর উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে।
বন্ধুগণ, ভারতের কাছে উন্নয়নমূলক সহযোগিতার মূল নীতি হ’ল আমাদের সহযোগীদের সম্মান করা। উন্নয়নের শিক্ষা ভাগ করে নেওয়াই আমাদের অনুপ্রেরণা। আর তাই, আমাদের উন্নয়নমূলক সহযোগিতায় কোনও শর্ত আরোপ করা হয় না। কোনও রাজনৈতিক বা বাণিজ্যিক বিবেচনাও এখানে প্রভাব বিস্তার করে না।
বন্ধুগণ, ভারতের উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্ব বৈচিত্র্যপূর্ণ। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে সংস্কৃতি, বিদ্যুৎ থেকে প্রযুক্তিবিদ্যা, স্বাস্থ্য থেকে আবাসন, তথ্য প্রযুক্তি থেকে পরিকাঠামো, খেলাধূলা থেকে বিজ্ঞান – ভারত সারা বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে এই বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করছে। ভারত যেমন আফগানিস্তানের সংসদ ভবন নির্মাণে সাহায্য করার সম্মান অর্জন করে, একই সঙ্গে সে নিগারে মহাত্মা গান্ধী কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ কাজেও যুক্ত হয়। নেপালের স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে আপৎকালীন ও ট্রমা হসপিটাল নির্মাণ কাজে সাহায্য করতে পেরে আমরা আনন্দিত। একইভাবে, শ্রীলঙ্কার ৯টি প্রদেশের সবকটিতেই আপৎকালীন অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবায় সাহায্য করতে পেরেও আমরা খুশি।
আমরা আনন্দিত যে, নেপালের সঙ্গে তেলের পাইপ লাইনের কাজ করার মধ্য দিয়ে, সেদেশে পেট্রো পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত হয়েছে। একইভাবে, মালদ্বীপের ৩৪টি দ্বীপে পানীয় জল ও পয়ঃপ্রণালী নিষ্কাশণের কাজ করতে পেরে আমরা আনন্দিত। আমরা আফগানিস্তান ও গিয়ানার মতো দেশে ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করার জন্য স্টেডিয়াম সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা গড়ে তুলতে সাহায্য করেছি।
ভারতে প্রশিক্ষণের পর তরুণ আফগান ক্রিকেট দল যখন উদীয়মান শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়, সেটি দেখে আমরা রোমাঞ্চিত হই। মালদ্বীপেও ক্রিকেট খেলোয়াড়দের মেধার বিকাশের জন্য আমরা একই রকম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। শ্রীলঙ্কায় একটি বৃহৎ আবাসন প্রকল্পে যুক্ত হতে পেরে আমরা গর্বিত। আমাদের সহযোগী রাষ্ট্রগুলির উন্নয়নে শরিক হওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্বের দিকটি প্রতিফলিত হয়।
বন্ধুগণ, ভারত আপনাদেরকে সহায়তা করতে পেরে গর্বিত। আপনাদের যুবসম্প্রদায়ের উন্নত ভবিষ্যৎ গড়তে সাহায্য করায় আমরা তৃপ্ত। আর তাই, আমাদের উন্নয়নমূলক সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বিকাশ, এর মধ্য দিয়ে আমাদের সহযোগী রাষ্ট্রগুলি আত্মনির্ভর হয়ে উঠবে এবং তাদের ভবিষ্যৎ এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে বলে আমরা আশাবাদী।
বন্ধুগণ, ভবিষ্যৎ হ’ল স্থিতিশীল উন্নয়নের। প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের বিবাদ করলে চলবে না। আর তাই, আমরা বিশ্বাস করি জনসাধারণের ক্ষমতায়ন এবং প্রকৃতির প্রতি যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। এই দর্শনের ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক সৌর জোটের মতো নতুন সংগঠন গড়ে তোলায় ভারত উদ্যোগী। বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা মোকাবিলায় পরিকাঠামো গড়ে তুলতে একটি মজবুত জোটের জন্য আমরা কাজ করে চলেছি। এই উদ্যোগগুলি দ্বীপ রাষ্ট্রগুলির জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেভাবে এই প্রয়াসগুলিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তা অত্যন্ত উৎসাহ-ব্যঞ্জক।
বন্ধুগণ, এতক্ষণ যে মূল্যবোধের কথা আপনাদের আমি বললাম, তা আসলে মরিশাসের সঙ্গে বিশেষ অংশীদারিত্বের অন্যতম কারণ। মরিশাসের সঙ্গে আমাদের যেমন ভারত মহাসাগরীয় সম্পর্ক রয়েছে, একইভাবে আত্মীয়তা, সংস্কৃতি এবং ভাষাগত মিলও রয়েছে। আমাদের সৌহার্দ্য, অতীত থেকে শুরু হয়েছে আর আমরা ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। মরিশাসের জনসাধারণের সাফল্যে ভারত গর্বিত। পবিত্র অপ্রবাসী ঘাটের সরু ধাপ থেকে মরিশাসের আজকের এই আধুনিক ভবন তার কঠোর পরিশ্রম এবং উদ্ভাবনের কারণেই সফল হয়েছে। মরিশাসের মানসিকতা অনুপ্রেরণা যোগায়। আগামী দিনগুলিতে আমাদের সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে।
ভিভ লামিতে এন্ত্র লাঁদ এ মরিস
ভারত ও মরিশাসের মৈত্রী দীর্ঘজীবী হোক
লং লিভ ইন্ডিয়া – মরিশাস ফ্রেন্ডশিপ
অনেক অনেক ধন্যবাদ। সূত্র – পিআইবি।