আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার ‘ইন্ডিয়া’ নাম পরিবর্তন করে ‘ভারত’ করতে চলেছে বলে ইতিপূর্বেই গুঞ্জন ছিল। এবার জি ২০ সম্মেলন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে যে নৈশ্যভোজের আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে তাতে ইংরেজিতে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’ লেখা হয়েছে। এই নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, কেন্দ্রের সরকার সংবিধান অমান্য করে দেশের নামও পরিবর্তন করে দিচ্ছে। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতেই বিরোধী দলগুলো এক ছাতার নিছে এসেছে।
বিজেপি বিরোধী জোটের নাম ইন্ডিয়া। জোটের এই নামকরণের পর কম হয়নি রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্ক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এ নিয়ে সরব হতে দেখা গেছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, লোকসভা ভোটে ইন্ডিয়া জোট মোদি সরকারকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে চলেছে বলে বিশ্বাস বিরোধীদের।
বিরোধীদের পাল্টা চাপে রাখতে তড়িঘড়ি ইন্ডিয়ার পরিবর্তে ভারত নামকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই ইঙ্গিত মিলল রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে জারি করা জি ২০ সম্মেলনে নৈশ্যভোজের আমন্ত্রণপত্রে। এই আমন্ত্রণপত্র ঘিরে ইতিমধ্যেই তোলপাড় শুরু হয়েছে দেশের রাজনীতিতে।
প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। এক্স-বার্তায় তিনি লিখেছেন, এনডিএ সরকারের পদক্ষেপ নিন্দাজনক। তিনি লেখেন, খবর আসলেই সত্য। ৯ সেপ্টেম্বর আয়োজিত জি ২০ সম্মেলনের নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছে রাষ্ট্রপতি ভবন। তাতে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’ লেখা হয়েছে।
দেশের নাম হিসেবে শুধু ‘ভারত’ ব্যবহারের পক্ষে বিজেপি। তাদের দাবি, ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটি বিদেশী। ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটলেও রয়ে গেছে এই নাম। এবার দেশের নামের মধ্যেও নিজস্বতা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের ছোঁয়া ধরে রাখতে বিজেপি সাংসদ হরনাথ সিং যাদব দেশের নাম পাকাপাকি ভাবে ‘ভারত’ করার প্রস্তাব দেন।
পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশন ডাকার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের সংবিধান থেকে ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটি বাদ দেওয়ার দাবি আরও জোরদার হয়েছে।
দু’দিন আগে, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত গুয়াহাটিতে একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করার সময় ‘ইন্ডিয়া’কে ‘ভারত’ বলে অভিহিত করেছিলেন। লোকদের অভ্যাস গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে ভাগবত বলেছিলেন, ভারত নামটি প্রাচীনকাল থেকে অব্যাহত রয়েছে, এটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য সংসদের বিশেষ অধিবেশনে এই প্রস্তাব সংক্রান্ত বিল আনার দাবি জানাচ্ছেন বিজেপি নেতারা। শোনা যাচ্ছে, সরকার বিশেষ সংসদ অধিবেশন চলাকালীন সংবিধান থেকে ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটা অপসারণের বিল পেশ করতে পারে। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশি জানিয়েছেন, অমৃতকালে সংসদে ফলপ্রসূ আলোচনা এবং বিতর্ক চায় সরকার। পাঁচ দিনের এই বিশেষ অধিবেশনে, ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’, ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’, ‘মহিলা সংরক্ষণ’ সংক্রান্ত বিল পেশ করা হতে পারে।
সূত্রঃ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।