অরুণাচল প্রদেশের প্রত্যন্ত মিমে গ্রামে জল জীবন মিশন পৌঁছেছে

Published By: Khabar India Online | Published On:

খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ ছোট্ট এক স্রোতের পাশে সবুজ ধানখেতের মাঝে নির্মল এবং কিছুটা কুয়াশায় ঢাকা ছোট্ট গ্রাম মিমে। চৌখাম ব্লকের অন্তর্গত জেলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত অরুণাচল প্রদেশের পূর্ব অংশের নামসাই জেলার প্রত্যন্ত মিমে গ্রামে প্রায় ৪২টি পরিবারের বসবাস। গ্রামবাসীরা অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় এবং বৌদ্ধধর্মের অনুরাগী। কৃষি তাঁদের মূল পেশা। যদিও কয়েকজন সরকারি চাকুরিজীবী রয়েছেন, তথাপি গ্রামের মানুষ অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জীবন নির্বাহ করেন। তবে, এই গ্রামের একটি বড় সমস্যা হল পানীয় জলের অভাব। দীর্ঘ বহু বছর ধরে এই গ্রামের মানুষ পানীয় জলের সমস্যাকে সঙ্গে বহন করে চলেছেন।

এই গ্রামেরই এক পরিবারের মহিলাকে ছোট্ট ওই জলধারা থেকে বাড়ির ব্যবহারের জল সংগ্রহ করতে হয়। তাঁর বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে ওই জলধারাটি বয়ে চলেছে। বাড়িতে রান্না ও স্নানের পাশাপাশি, বিশুদ্ধ পানীয় জল তাঁকে রোজ সংগ্রহ করতে যেতে হয়। অবশ্য, তাঁর বাড়ির পিছনের দিকে একটি হ্যান্ডপাম্প রয়েছে। কিন্তু এই পাম্পের জল দূষিত এবং জলে লৌহের পরিমাণ বেশি। তাই, এই জল থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং জামা-কাপড় কাচলে তাতে লালচে দাগ পড়ে যায়। তাই, এই হ্যান্ডপাম্পের জল কেবল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, শৌচাগারের ব্যবহার ও অন্যান্য কাজে ব্যবহারের উপযোগী। যখন ওই পরিবারের মহিলা জল আনতে যেতে পারেন না, তখন তাঁর কন্যা তাঁকে জল আনার কাজে সাহায্য করে। বর্ষার মরশুমে ছোট্ট ওই ধারা যখন প্লাবিত হয়ে যায়, তখন তার জল ঘোলাটে ও কাদা মিশ্রিত অবস্থায় বাহিত হয়। এ কারণেই বর্ষার মরশুমে ওই মহিলার মতো গ্রামের অন্যদেরকেও পানীয় জলের চাহিদা পূরণে হ্যান্ডপাম্পের জলের ওপর ভরসা করতে হয়। হ্যান্ডপাম্পের জল পান করে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এমনকি তারা বিদ্যালয়ের ষান্মাসিক পরীক্ষায় বসতে পারে না। গ্রামের এক চিকিৎসক শিশুদের অসুস্থতা প্রসঙ্গে বলেছেন, তারা দূষিত জল পান করার ফলেই রোগের শিকার হয়েছে। মিমে গ্রামের প্রতিটি পরিবারের কাহিনী প্রায় এরকমই। এই গ্রামের সকলকেই ছোট্ট ওই ধারার দূষিত জলের ওপরই অথবা হ্যান্ডপাম্পের জলের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। এ কারণেই কালের নিয়মে মহিলাদেরকেও সমস্যায় পড়তে হয়েছে এবং বর্ষার মরশুমে তাঁদের সমস্যা দ্বিগুণ হয়েছে।

আরও পড়ুন -  New Logo: নীল পাখি চলে গেলো টুইটারের, মাস্ক বসালেন ‘ডগি’ লোগো

মিমে গ্রামের এক গ্রামসভার বৈঠকে গ্রামবাসীরা জল জীবন মিশন ফ্ল্যাগশিপ কর্মসূচি চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি ও জল সরবরাহ দপ্তরের আধিকারিকরা জল জীবন মিশন সম্পর্কে গ্রামবাসীদের অবহিত করেছেন। এই কর্মসূচির আওতায় প্রত্যেক বাড়িতে জলের সংযোগের সুবিধা গ্রামবাসীদের জীবনে আনন্দাশ্রু নিয়ে এসেছে। গ্রামবাসীদের সক্রিয় সহযোগিতায় এই কর্মসূচি রূপায়িত হচ্ছে। কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে এখন গ্রামবাসীরা দ্বিগুণ খুশি হয়েছেন। জল জীবন মিশন কর্মসূচি রূপায়ণের লক্ষ্যে গ্রামসভার বৈঠকের পাশাপাশি, প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

আরও পড়ুন -  কোভিড-১৯ মহামারীর পরিস্থিতি এবং টিকা উদ্ভাবন, বন্টন ও টিকাকরণের বিষয়ে বৈঠকের পৌরহিত্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী

গ্রামসভার বৈঠকে সৌরবিদ্যুৎচালিত জল পরিশোধন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্যেক বাড়িতে পানীয় জলের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। গ্রামবাসীরাই রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় পাইপ বসানোর পরিকল্পনা করেছেন। এই লক্ষ্যে গ্রামস্তরে একটি ওয়াটার ও স্যানিটেশন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি জল জীবন মিশন কর্মসূচি রূপায়ণের দায়িত্বে রয়েছে।

আরও পড়ুন -  ৩৮৫ গ্রাম ব্রাউন সুগার সহ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করল ইংরেজবাজার থানার পুলিশ

রাজ্যস্তরীয় প্রকল্প অনুমোদন কমিটির বৈঠকে মিমে গ্রামে জল সরবরাহের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০২১-এর মার্চ মাসের মধ্যে প্রত্যেকটি বাড়িতে জল সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার কাজ শেষ করার লক্ষ্য স্থির হয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের ফ্ল্যাগশিপ কর্মসূচি ‘জল জীবন মিশন’ রাজ্যগুলির সহযোগিতায় রূপায়িত হয়। এই কর্মসূচি গ্রহণের উদ্দেশ্য হল, ২০২৪ সালের মধ্যে গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে পাইপবাহিত জল সংযোগ পৌঁছে দেওয়া। পাইপবাহিত জল সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার ফলে প্রতিটি গ্রামীণ পরিবার, পরিবারপিছু দৈনিক ৫৫ লিটার জল পাবে। এর ফলে, গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রায় আরও মানোন্নয়ন ঘটবে বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্র – পিআইবি।