পাকিস্তানের প্রাক্তন সেনাপ্রধান এবং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ দীর্ঘদিন অসুস্থায় ভুগে মারা গেছেন। রবিবার ৭৯ বছর বয়সী এই প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে মারা যান।
জেনারেল মুশারফ ১৯৪৩ সালের ১১ আগস্ট তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের সময় তার পরিবার পাকিস্তানে পাড়ি জমায় সেখানে তিনি সেন্ট প্যাট্রিক স্কুলে পড়াশোনা করেন। তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন, ১৯৬৪ সালে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন।
১৯৬৫ সালের পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেন পারভেজ। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭২সাল পর্যন্ত এলিট স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপে (এসএসজি) দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের পর, তিনি বেশ কয়েকটি সামরিক কাজে দক্ষতা অর্জন করতে থাকেন, সেনাবাহিনীতে দ্রুত পদোন্নতি লাভ করেন।
১৯৯৮ সালের অক্টোবরে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ তাকে সেনাপ্রধান নিযুক্ত করেন।
১৯৯০ সালের ১২ অক্টোবর শ্রীলঙ্কা থেকে ফেরার পথে তাকে করাচি বিমানবন্দরে নামতে বাধা দেয় প্রধানমন্ত্রী। পরে তার আদেশে দেশটির সেনাবাহিনী প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন দখল করে নেয়।
পরবর্তীতে তিনি সংবিধান অমান্য করে জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করেন। প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেন। এ নিয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে কোনো আন্দোলন না হলেও, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পারভেজ ব্যাপক সমালোচনা করে।
২০০৪ সালে জেনারেল মুশারফ সংবিধানের ১৭তম সংশোধনী এনে নিজেকে সেনাপ্রধান রাখা অবস্থায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করেন। সে বছরই এক নির্বাচনে তিনি আবারও দেশটির প্রেসিডেন্ট হন। ২০০৭ সালে জেনারেল দেশটির সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বাধ্যতামূলক পদত্যাগের বিষয়ে একটি অসাংবিধানিক উদ্যোগ নেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সে দেশে ‘বিচারবিভাগ পুনর্বহাল’ আন্দোলন নামে বিচারকদের একটি আন্দোলন শুরু হয়। এর এক বছর পর ২০০৮ সালে দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত আন্দোলনের ফলে জেনারেল মুশারফ ১৮ আগস্ট ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
২০১০ সালে, মুশারফ তার রাজনৈতিক দল অল পাকিস্তান মুসলিম লীগও (এপিএমএল) চালু করেছিলেন। ২০১৩ সালে তাকে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের নাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। ২০১৬ সালে ১৭ মার্চ দুবাই চলে যান আর দেশে ফেরেননি।
সূত্রঃ বিবিসি। ফাইল ছবি