গত ৫০ বছর ধরে বিশ্বকাপ ট্রফি তৈরি করে আসছে এক ইতালীয় পরিবার। চলতি মাসের ২০ নভেম্বর কিক-অফের আগে সোনায় মোড়ানো বিশ্বকাপ ট্রফি অবশেষে কাতারে পৌঁছেছে। বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী ৩২টি দেশ ঘুরে অবশেষে কাতারে ট্রফি।
বিশ্বকাপ ট্রফিটি ১৮ ক্যারেট খাটি সোনায় তৈরি, ১৪ ইঞ্চি লম্বা ও ১৩ পাউন্ড ওজনের। ট্রফিটি একবার হাতে নেয়ার স্বপ্ন দেখেনি, এমন ফুটবলার খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। এটি একটি গ্লোব উঁচুতে ধরে থাকা দুটি মানব মূর্তিকে চিত্রিত করেছে, এটিই হলো বর্তমানের বিশ্বকাপ ট্রফির নকশা। যদিও এটি তৈরির সময় প্রায় ৫০ হাজার ডলার খরচ হয়েছিল, বর্তমানে এটির মূল্য প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার!
ফিফার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট জুলে রিমে প্রথম বিশ্বকাপ আয়োজনের কর্নধার হওয়ায় তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে ১৯৪৬ সালে প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফিটির নামকরণ করা হয়েছিল ‘জুলে রিমে ট্রফি’। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল।
১৯৭০ সালে ব্রাজিল তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের পর ট্রফিটি একেবারেই তাদের দিয়ে দেয়া হয়। এরপর ১৯৭১ সালে ইতালির মিলানের শিল্পী সিলভিও গাজ্জানিগা নতুন বিশ্বকাপ ট্রফিটি নকশা করেন।
ফিফার কাছে বিশ্বের ৭টি দেশের ৫৩ জন ভাস্কর বিশ্বকাপ ট্রফির নকশা জমা দেন, এদের মধ্যে গাজ্জানিগার নকশাটি চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়। তখন থেকে নাম হয়ে যায় ‘ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি’।
২০০২ সালে এপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে গাজ্জানিগা বলেন, আমি এই ট্রফিকে বীরত্বের পুরস্কার হিসেবে বিবেচনা করে নকশা করেছিলাম। কোনো সুপারহিউম্যানের বীরত্ব ভেবে নয়। এটা প্রচলিত কোনো কাপ নয়।২০১৬ সালের নভেম্বরে ৯৫ বছর বয়সে সিলভিও গাজ্জানিগার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর তার ছেলে জর্জিও গাজ্জানিগা বার্তা সংস্থা এপিকে বলেছিলেন, বিশ্বকাপ ট্রফির নকশা করার সময়ই তার বাবা বুঝেছিলেন যে তার আঁকা নকশাটি দেখে অনেকে বুঝতে নাও পারেন, তিনি সঙ্গে করে একটি প্লাস্টার মডেল নিয়ে গিয়েছিলেন।
জর্জিওর বলেছিলেন,আয়োজকরা নকশাটি দেখার সঙ্গে সঙ্গেই বুঝেছিলেন, এটি খুবই ফটোজেনিক একটি নকশা হবে। হাতে তুলে ধরা সহজ এবং তুলে ধরার পর দেখতেও নান্দনিক লাগে। ফিফার এই প্রতিযোগিতার শর্ত ছিল যে বিজয়ী তার কাজের স্বত্ত্বাধিকার রাখবে না। তাই সিলভিও গাজ্জানিগা বিশ্বকাপ ট্রফির নকশা করে সরাসরি কোনো মুনাফা পাননি।
জর্জিও বলেন, বিশ্বকাপ ট্রফির নকশাকার হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর তিনি আরও অনেকগুলো ট্রফির নকশা করেছেন, এটাই ছিল লাভ। সিলভিও গাজ্জানিগা উয়েফা কাপ, ইউরোপিয়ান সুপার কাপসহ অনেক আন্তর্জাতিক ট্রফির নকশা করেছেন।সবশেষে, বিশ্বকাপ ট্রফির জন্যই তিনি বিখ্যাত হয়ে থাকবেন।
সূত্রঃ আল জাজিরা, ফাইল ছবি।