বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৯২১ সালের ২ মে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন সত্যজিৎ রায়। জন্মের মাত্র তিন বছর বয়সেই বাবা সুকুমার রায়ের মৃত্যু হয়। মা সুপ্রভা দেবী বহু কষ্টে তাকে বড় করে তোলেন। সত্যজিৎ কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অর্থনীতিতে পড়াশোনা শুরু করেন। যদিও চারুকলার প্রতি ছিল তার গভীর দুর্বলতা। ১৯৪০ সালে মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা কালজয়ী উপন্যাস ‘পথের পাঁচালী’র শিশুতোষ সংস্করণ ‘আম আঁটির ভেঁপু’ও এই প্রকাশনী থেকে বের হয়েছিল। বইটির প্রচ্ছদ আঁকার দায়িত্ব পড়ে সত্যজিতের উপর। প্রচ্ছদ আঁকার আগে উপন্যাসটি পড়েন তিনি। উপন্যাসটি সত্যজিৎকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। প্রচ্ছদ আঁকা ছাড়াও তিনি বইটির ভেতরের বিভিন্ন ছবিও এঁকে দেন। পরবর্তীতে সত্যজিত রায় প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় ‘পথের পাঁচালী’কে বেছে নেন।
১৯৫২ সালের শেষ দিকে সত্যজিৎ তার নিজের জমানো টাকায় ‘পথের পাঁচালী’ ছবির দৃশ্যগ্রহণ শুরু করেন। ভেবেছিলেন প্রাথমিক দৃশ্যগুলো দেখার পর হয়তো কেউ ছবিটিতে অর্থলগ্নি করতে এগিয়ে আসবেন। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। তবে তিনি থেমে যাননি। ধীর গতিতে কাজ চালিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকার থেকে ঋণ নিয়ে ১৯৫৫ সালে ছবিটির নির্মাণ শেষ করেন।
মুক্তির পর পরই ছবিটি দর্শক-সমালোচকদের ব্যাপক প্রশংসা পান। কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্টারি’ক্যাটাগরিতে ছবিটি পুরস্কৃত হয়। এ ছাড়াও ১১টি আর্ন্তজাতিক পুরস্কার পায় সিনেমাটি। এই ছবির মাধ্যমেই চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের দীর্ঘ পথচলার শুরু হয়। আর পরবর্তী ছবি ‘অপরাজিত’ তাকে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। ছবিটি ইতালির ভেনিসের বিখ্যাত গোল্ডেন লায়ন পুরস্কার জিতে।
একে একে নির্মাণ করেন ‘অপুর সংসার’, ‘পরশপাথর’, ‘জলসাঘর’, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’, ‘চারুলতা’, ‘দেবী’, ‘মহানগর’, ‘অভিযান’, ‘কাপুরুষ’, ‘মহাপুরুষ’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’, ‘সীমাবদ্ধ’, ‘জনারণ্য’, ‘হীরক রাজার দেশ’, ‘গণশত্রু’, ‘আগন্তুক’, ‘শাখা প্রশাখা’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’ও ‘আগুন্তক’।
পথের পাঁচালি থেকে আগন্তুক, দীর্ঘ এক চলচ্চিত্রকারের জীবন তার। সেলুলয়েডে আলোছায়ার ব্যঞ্জনায় উপন্যাসের কাহিনী ও পরিবেশ বর্ণনা, দ্বন্দ্ব, সুরের ছন্দকে খুব সাবলীলভাবে সাজাতেন তিনি। ফ্রেমের সুনিপণ ও নান্দনিক গাথুনির ঢংয়ে গেঁথেছেন অমর সব মালা। ফ্রেমে বেঁধেছেন মানুষের জীবন।