খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ দৈনিক ৫ লক্ষের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহগুলিতে এই পরিমাণ বাড়িয়ে ১০ লক্ষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উন্নতমানের কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষার তিনটি ব্যবস্থাপনার সূচনা করেছেন। ভারতীয় চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের কলকাতা, মুম্বাই এবং নয়ডায় এই ব্যবস্থাপনাগুলি চালু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, উন্নতমানের এই ব্যবস্থাপনার ফলে এই তিন শহরের প্রত্যেকটিতে, দৈনিক প্রায় ১০ লক্ষ নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। যত বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হবে, তত বেশি সংক্রমিতদের শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব। এর ফলে এই ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হবে। শ্রী মোদী জানিয়েছেন, এই পরীক্ষাগারগুলির সাহায্যে শুধুমাত্র কোভিডের নমুনার পরীক্ষা করার পাশাপাশি, ভবিষ্যতে হেপাটাটিস ‘বি’ ও ‘সি’, এইচআইভি, ডেঙ্গু সহ বেশ কিছু অসুখের নমুনা পরীক্ষা করা যাবে।
সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকার সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নেওয়ায় কোভিড সংক্রমণের ফলে মৃত্যুর হারের নিরিখে দেশ যথেষ্ট ভালো জায়গায় রয়েছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় এ দেশে সংক্রমিতদের আরোগ্য লাভের হার বেশি। প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়েছেন।
করোনার জন্য নির্ধারিত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, করোনার জন্য নির্ধারিত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো দ্রুত হারে গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্র এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শুরুতে ১৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল। দেশে বর্তমানে ১১ হাজারেরও বেশি জায়গায় কোভিড সংক্রমিতদের চিকিৎসা সম্ভব এবং ১১ লক্ষের ওপর আইসোলেশন বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জানুয়ারি মাসে সারা দেশে যেখানে মাত্র একটি কোভিড নমুনা কেন্দ্র ছিল, বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ১,৩০০ পরীক্ষাগারে পৌঁছেছে। তিনি জানিয়েছেন, বর্তমানে দৈনিক ৫ লক্ষ নমুনার পরীক্ষা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহগুলিতে এই পরিমাণ বাড়িয়ে ১০ লক্ষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
শ্রী মোদী জানিয়েছেন, ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের কিট উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে। ছ’মাস আগে দেশে একটিও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের কিট তৈরি হত না। আজ সেখানে ১,২০০-রও বেশি সংস্থা দৈনিক ৫ লক্ষের বেশি কিট তৈরি করছে। তিনি বলেন, এক সময়ে দেশ আমদানির ওপর নির্ভর করত। আজ দৈনিক ৩ লক্ষের বেশি এন-৯৫ মাস্ক তৈরি করা হচ্ছে। দেশে ৩ লক্ষ ভেন্টিলেটর বছরে উৎপাদন করার ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। এমনকি, চিকিৎসার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার তৈরির পরিমাণও তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেড়েছে। এর ফলে, শুধু বহু মানুষের প্রাণই বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না, ভারত আমদানিকারী দেশের বদলে রপ্তানিকারী দেশ হয়ে উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রী গ্রামাঞ্চলে এই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে বলেছেন। তিনি বর্তমান স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন ঘটিয়ে গ্রামাঞ্চলে আরও ভালো স্বাস্থ্য পরিষেবা তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন।
মানবসম্পদ বৃদ্ধি
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর বিভিন্ন বিষয়ে উন্নতির পাশাপাশি দেশ প্যারা-মেডিকেল কর্মী, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানবসম্পদ দ্রুত বৃদ্ধি করতে পেরেছে। এইসব কর্মীরা এই মহামারী নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। তিনি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আমাদের করোনা যোদ্ধাদের ক্লান্তি দূর করার জন্য নতুন স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি, অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীদেরও কাজে লাগানোর কথা উল্লেখ করেছেন।
উৎসবের মরশুমে সুরক্ষিত থাকার ওপর গুরুত্ব
প্রধানমন্ত্রী আসন্ন উৎসবের দিনগুলিতে মহামারীর সংক্রমণ থেকে জনসাধারণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘পিএম গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনা’র সুবিধা যাতে দরিদ্র মানুষদের কাছে সময়মতো পৌঁছতে পারে সে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। শ্রী মোদী জানিয়েছেন, যতদিন না টিকা উদ্ভাবন হচ্ছে, ততদিন দু’গজ দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা এবং নিয়মিত হাত ধোয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এগুলির মাধ্যমেই আমরা সুরক্ষিত থাকব।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডঃ হর্ষ বর্ধন জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশের সর্বত্র কোভিডের নমুনা পরীক্ষার পরীক্ষাগার গড়ে উঠেছে। এই প্রসঙ্গে তিনি জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর মন্ত্রকের একযোগে কাজ করার বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রীদের বক্তব্য
এই নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থাপনার সূচনার জন্য মুখ্যমন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বর্তমান এই কঠিন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী উদ্ধব ঠাকরে প্রশংসা করেছেন। তিনি মুম্বাইয়ে ‘ভাইরাসকে তাড়া করা’ উদ্যোগ এবং সংক্রমিত ব্যাধির জন্য স্থায়ী হাসপাতাল তৈরির বিষয়ে জানিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা ব্যানার্জী রাজ্যগুলির প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতামূলক মনোভাবের প্রশংসা করেছেন। তিনি তাঁর রাজ্যে সংক্রমণ শনাক্ত করার উদ্যোগ, টেলি-মেডিসিনের ব্যবহার এবং কয়েকটি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষার ক্ষমতা বৃদ্ধির গুরুত্বের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁর অক্লান্ত প্রয়াসের জন্য উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আজ যে পরীক্ষাগারগুলি চালু হয়েছে, সেগুলি নমুনা পরীক্ষার সময় বেশ কমিয়ে দেবে। এই প্রসঙ্গে তিনি তাঁর রাজ্যে নমুনা পরীক্ষা ও দৈনিক অ্যান্টিজেন টেস্টের ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন।
প্রেক্ষাপটঃ-
নয়ডার আইসিএমআর –ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ক্যান্সার প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ , মুম্বাই-এর আইসিএমআর –ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর রিসার্চ ইন রিপ্রোডাকটিভ হেলথ, এবং কলকাতার আইসিএম আর –ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ কলেরা এন্ড এন্টারিক ডিজিজে উন্নতমানের কোভিড-১৯-এর নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থাপনাগুলি গড়ে তোলা হয়েছে। । কৌশলগত দিক থেকে এই প্রতিষ্ঠানগুলি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে দৈনিক ১০হাজার নমুনার পরীক্ষা করা যাবে। এই ব্যবস্থার ফলে , সংক্রমিত নমুনাগুলি যারা পরীক্ষা করে দেখবেন, তাঁদের স্পর্শ করতে হবে না। পরীক্ষার ফলও দ্রুত জানা যাবে। এই পরীক্ষাগারগুলি থেকে কোভিড ছাড়া অন্য অসুখের নমুনাও পরীক্ষা করা যাবে। ফলে মহামারীর পরবর্তী সময়ে এই পরীক্ষাগারগুলি থেকে হেপাটাইটিস বি ও সি, এইচআইভি, মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলিসিস, সাইটোমেগালোভাইরাস, ক্ল্যামাইডিয়া, নাইসেরিয়া, ডেঙ্গুর মত অসুখের পরীক্ষাও এখানে করা যাবে। সূত্র – পিআইবি / ছবি – ফাইল।