কালীপূজা

Published By: Khabar India Online | Published On:

কালীপূজা হিন্দু বিশেষত শাক্ত সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। কালী হচ্ছেন দশমহাবিদ্যার প্রথম মহাবিদ্যা। তাঁর সম্বন্ধে নানা পুরাণ ও তন্ত্রে বহু তথ্য আছে। বঙ্গীয় তন্ত্রসার, শ্যামারহস্য প্রভৃতি তন্ত্রে কালীর বিভিন্ন রূপের কথা বলা হয়েছে, যথা: দক্ষিণ, সিদ্ধ, গুহ্য, ভদ্র, শ্মশান, রক্ষা ও মহাকালী। এঁদের মধ্যে দক্ষিণকালিকা সর্বাধিক জনপ্রিয় ও ব্যাপকভাবে পূজিত। তাঁর বর্ণনা মোটামুটি এরূপ: চতুর্ভুজা, করালবদনা, মেঘকৃষ্ণবর্ণা, মুন্ডমালিনী, মুন্ডসমূহ থেকে নিঃসৃত রক্তধারায় রঞ্জিতা, ত্রিনয়না, শিববক্ষোপরি দন্ডায়মানা এবং শিবাকুলবেষ্টিতা। তাঁর চতুর্ভুজের দক্ষিণ হস্তদ্বয়ে থাকে খট্বাঙ্গ ও চন্দ্রহাস এবং বাম হস্তদ্বয়ে থাকে বর্ম ও পাশ; আর পরিধানে থাকে ব্যাঘ্রচর্ম।

আরও পড়ুন -  নারী দিবসে নারীদের সম্মান প্রদান করলো 'আশ্রয়'

কালীর আবির্ভাব সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, দেবাসুরের যুদ্ধে পরাজিত দেবগণের স্ত্ততিতে আদ্যাশক্তি ভগবতীর দেহকোষ থেকে দেবী কৌষিকী আবির্ভূত হন। তখন ভগবতীদেবী কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করেন বলে তাঁর নাম হয় কালী বা কালিকা। তিনি শুম্ভ-নিশুম্ভ নামে দুই দানবকে বধ করেন। তাদেরই দুই চেলা চন্ড ও মুন্ডকে বধ করায় দেবীর এক নাম হয় চামুন্ডা।

শাক্তরা কালীকে আদ্যাশক্তিরূপে উপাসনা করেন। কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ (আনু. ১৫শ-১৬শ শতক) বঙ্গদেশে দক্ষিণকালিকার পূজা প্রবর্তন করেন বলে কথিত হয়। মতান্তরে ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে কাশীনাথ রচিত শ্যামাসপর্যাবিধি-তে এ পূজার সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে বঙ্গে কালীপূজার নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায় নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের (১৭১০-১৭৮৩) সময় থেকে। ব্রহ্মযামলতন্ত্রে বলা হয়েছে ‘কালিকা বঙ্গদেশে’ অর্থাৎ বঙ্গদেশে দেবী কালিকা বা কালীরূপে পূজিতা হন। কলকাতার কালীঘাটের কালী এবং দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী অতি প্রসিদ্ধ। গৃহে ও মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত কালীর পূজা হয় নিত্য; এ ছাড়া দীপান্বিতা (কার্তিকী অমাবস্যা), মাঘী কৃষ্ণা চতুর্দশী, জ্যৈষ্ঠের কৃষ্ণা চতুর্দশী প্রভৃতি তিথিতে বিশেষ পূজার বিধান আছে। মাঘে পূজিতা দেবীর নাম রটন্তী, জ্যৈষ্ঠে ফলহারিণী। বিশেষ কোনো কামনা পূরণের জন্যও কালীপূজা হয়ে থাকে। গ্রামাঞ্চলে গুরুতর ব্যাধি মহামারিরূপে দেখা দিলে অনেকে মিলিতভাবে রোগমুক্তি কামনায় কালীপূজা করেন।

আরও পড়ুন -  Ritavhari Chakraborty: দৃষ্টি কাড়লেন ঋতাভরী !

দীপান্বিতা কালীপূজা সাড়ম্বরে আলোকসজ্জাসহ ব্যাপকভাবে অনুষ্ঠিত হয়। কালীপূজায় সাধারণত পাঁঠা, ভেড়া কিংবা মহিষ বলি দেওয়া হয়।

কারও কারও মতে, কালী আদিতে ছিলেন অনার্যদেবী। তাদের যুক্তি হলো যে, কালীর রূপকল্পনা ও পরিবেশ অনার্যোচিত। তাছাড়া অধিকাংশ দেবদেবীর পূজা হয় দিনে, কিন্তু কালীর পূজা হয় রাতে। সম্ভবত লুণ্ঠন ও দস্যুতাপরায়ণ আদিম অধিবাসীরা রাত্রির অন্ধকারে লোকচক্ষুর অন্তরালে গুপ্ত বাসস্থানে এ পূজা করত। কালক্রমে কালী আর্যদেবীরূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সর্বত্রই কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে দীপান্বিতা কালীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতের দীপান্বিতা সবচেয়ে বিখ্যাত।  তথ্যঃ সংগৃহীত

আরও পড়ুন -  Dhanteras and Dwipabali: রাত পোয়ালেই ধনতেরাস ও দ্বীপাবলি