হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি মন্দিরে পর্যন্ত হামলা চালানো হচ্ছে। সর্বশেষ রবিবার (১৭ অক্টোবর) রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দুদের অন্তত ২০টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের আওয়াজ উঠেছে। বিশেষ করে দেশের শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষেরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
বরেণ্য অভিনেত্রী ও সংসদ সদস্য সুবর্ণা মুস্তাফা তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে এক বিশ্রী অনুভূতির মধ্যে বসবাস করছি। গ্লানি, দুঃখ, ক্ষোভ সবকিছু মিলেমিশে একাকার। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে যেন কালো একটা পর্দা পড়ে গেল। ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর তিন লক্ষ নারীর সর্বোচ্চ ত্যাগকে অসম্মানিত হতে দেখলাম। বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষ সোনার বাংলাকে ধর্মের ধুয়াধারীরা কলুসিত করতে উদগ্রীব। কিন্তু আর না! নতুন করে যুদ্ধ শুরু করতে হবে। দেশকে এই কুচক্রীদের হাত থেকে মুক্ত করতে হবে। যারা ষড়যন্ত্র করে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাইছে, দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে, তাদেরকে বলছি- ‘বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এবার ঘুঘু তোমার বধিব পরাণ’। বাংলাদেশ এখন পুরোটাই ডিজিটাল। তোমরা সবাই চিহ্নিত, তোমাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে, আইনের শাসন দিয়েই তোমরা শাস্তি পাবে। সহনশীল হবার দিন শেষ।
নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর সৈনিক উল্লেখ করে স্ট্যাটাসের শেষ অংশে তিনি লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা আপনার সৈনিক, আপনি আদেশ করেন; ৭১-এ পারিনি, ২০২১-এ দেশের জন্য প্রাণ দিতেও প্রস্তুত।’
খ্যাতিমান নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এখন আমরা কী করতে পারি? ঘটনা যা যা ঘটেছে সেটা ঠিকঠাক তদন্ত করে সবার সামনে তুলে ধরা। দ্রুততার সাথে এই হামলার ঘটনাগুলার সাথে যারা যারা জড়িত তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা। আগামীতে যেনো এইরকম কিছু না ঘটে তার জন্য যা যা ব্যবস্থা নেয়ার সেটা নেয়া। আলেম সম্প্রদায়ের উচিৎ এই ঘটনার নিন্দা করে বয়ান দেয়া। তবে সবচেয়ে বেশি দরকার যেটা, সেটা হচ্ছে, প্রত্যেকেই যার যার জায়গা থেকে এই ঘটনার নিন্দা করা। হিন্দু বন্ধু এবং প্রতিবেশীকে জানানো, তুমি একা নও! এখন তাকে একা বোধ না করতে দেয়াই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কাজ! এই সময় এক জগতবিধ্বংসী ক্ষোভ-অভিমান চেপে বসে। তার হাতটা চেপে ধরে বলি চলেন, ইউ আর নট অ্যালোন।’
দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান তার ফেসবুকের প্রোফাইল ছবি বদলে সম্পূর্ণ কালো করে দিয়েছেন। এছাড়া রংপুরের সেই অগ্নিসংযোগের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না। এই জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ আমার দেশ না। এই বিস্তীর্ণ শ্মসান আমার দেশ না। এই রক্তস্নাত কসাইখানা আমার দেশ না।’
হালের জনপ্রিয় নায়ক সিয়াম আহমেদ লিখেছেন, ‘আমাদের বন্ধুরা ঈদের দিন বাসায় আসে। আমাদের সাথেই আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়। বিপদে পড়লে সবার সাথে তারাও ছুটে আসে। একবারের জন্য মনে হয় নাই ওরা হিন্দু না মুসলমান। ২০২১ সালে এসে আমরা কী প্রমাণ করতে চাইছি? আমরা তো এমন দেখিনি! আমাদের সাম্প্রদায়িকতা তো এমন না! আমার দেশ জ্বলছে, আমাদের দেশ জ্বলছে।’
গুণী অভিনেত্রী দীপা খন্দকার অগ্নিকাণ্ডের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘এই দেশে জন্মগ্রহণকারী প্রতিটি নাগরিকের এই দেশে বসবাস করার অধিকার আছে। সে অধিকার কোনো অমানুষ কেড়ে নিতে পারে না। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। ধিক্কার জানাই অমানুষদের।’