দাগ

Published By: Khabar India Online | Published On:

দাগ

অফিসে লাঞ্চ পিরিওডে সিনিয়ার সৌমেনদা রোজকার মধ্যমনি।অফিসে টেবিলের তলায় ভালোরকমই কালো টাকার লেনদেন চলে। মাংসের হাড় চিবতে চিবতে তাচ্ছিল্য সুরে সে প্রসঙ্গে সৌমেনদা বললেন, “ধুস পৃথিবীতে সৎ অসৎ বলে কিস্যু হয় না, সবই আপেক্ষিক”।

হ্যান্ডসাম ক্লিনসেভড রাজদীপের নিজের ব্রিলিয়ান্ট সিভির মত জীবনের সিভিও ঝকঝকে দাগহীন। তাই ও প্রতিবাদ করেছিল।করাটা জরুরী ছিল, নাহলে মুড়ি মিছরি সব একদর হয়ে যাবে।

অফিস ছুটির পর রাজদীপ সৌমেনদা দু’জনেই অন্যদিনের মত একসঙ্গে বাইরে বেরিয়ে এল। রাজদীপ যাবে সাউথ, সৌমেনদা নর্থ । সৌমেনদা নিজের মোবাইল থেকে একটা ক্যাব ডেকে দিয়ে বলল, “যা তোর ক্যাব এসে গেছে”।

আরও পড়ুন -  কালীঘাট স্পোর্টস জিতল

সামনে ড্রাইভারের পাশে জায়গা না পেয়ে রাজদীপ পিছনের সিটে একজনের পাশে বসল। আধঘন্টা পর বেহালা ব্লাইন্ডস্কুল আসতেই পাশের লোকটা তাড়াহুড়ো করে নেমে গেল।পরেরটাই বেহালা চৌরাস্তা, রাজদীপের স্টপেজ।

ক্যাবের ভাড়া মিটিয়ে নামতে যেতেই রাজদীপ দেখল সিটের ওপর একটা কালো মোটা ওয়ালেট। বুঝল আগের লোকটির। সকলের চোখ এড়িয়ে টুক করে পকেটে তুলে নিল। প্রচন্ড ভয় করছে।এমন কাজ আগে কখনো করেনি। দরদর করে ঘামতে ঘামতে তাড়াতাড়ি মেইন রোড ছেড়ে গলির ভেতর ঢুকল।

আরও পড়ুন -  Sudipa Chatterjee: সুদীপার মা, হৃদরোগে আক্রান্ত!

বৃদ্ধ সুশীল কাকা ভাঙাচোরা লাল বারান্দায় রোজকার মতো বসেছিল, কাকার কেউ নেই। ঠিকঠাক খাওয়াও জোটে না রোজ। ছোটবেলায় কাকার ন্যাওটা ছিল খুব। এখন এড়িয়ে চলে। কুড়িয়ে পাওয়া ওয়ালেট’টা হাতে নিল। বেশ মোটা। অনেকগুলো দু’হাজার টাকার নোটের ভেতর থেকে একটা কড়কড়ে নোট তুলে কাকার হাতে গুঁজে দিল। কাকা অবাক। ধাতস্ত হয়ে বলল “বেঁচে থাক বাবা, মঙ্গল হোক!” রাজদীপের মনটা ভালো হয়ে গেল।

বাড়ি ঢুকে ফ্রেস হতেই সৌমেনদার ফোন। রিসিভ করতেই শুনল,“কি রে যা বলেছিলাম মিলল তো?”

আরও পড়ুন -  এই প্রথম ভারতীয় রেলের বিশেষ পণ্যবাহী ট্রেন বাংলাদেশে

“মানে?”

“ওই বুড়োটাকে কাল একটা রিয়েল দু’হাজার দিস। আর যেটা দিয়েছিলিস ছিঁড়ে ফেলিস”।

বুকটা ধরাস করে উঠল রাজদীপের। কাঁপা গলায় বলল,“কী সব বলছো …….?”

সৌমেনদা হো হো করে হেসে উঠল, “পৃথিবীতে সৎ অসৎ বলে কিস্সু হয় না রে বোকা। হয় কমবেশি ভালো বা মন্দ। ক্যাবে তোর পাশে আমার লোক ছিল, টাকাগুলো নকল। নে এবার ফোন রাখ। গুডনাইট।

সামনের আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের চোখে চোখ পড়তেই রাজদীপ চমকে উঠল। দাগ পড়ে গেছে জীবনের সিভিতে।

কৃষ্ণা দাস। লেখিকা।