খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ কোভিড-১৯ মহামারী দৈনন্দিন জীবনে ফেস মাস্ককে অপরিহার্য করে তুলেছে। যদিও জনসাধারণ এই অপরিহার্য জিনিসটিকে ব্যবহারে ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন, কিন্তু ভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে এই মাস্ক অস্বস্তির কারণও হয়ে উঠছে। যেমন মাস্ক পরা থাকলে শরীর থেকে বের হওয়া কার্বন ডাই অক্সাইড প্রশ্বাসের সঙ্গে আবারও শরীরে ঢুকে যায়। এরফলে শরীরে নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। অনেকক্ষণ মাস্ক ব্যবহার করলে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা যায়। নিঃশ্বাসের সঙ্গে যে জলীয় বাস্প বের হয় সেগুলি যাঁরা চশমা ব্যবহার করেন তাঁদের চশমার কাঁচকে ঝাপসা করে দেয়, ঘাম হয় এবং গরম আবহাওয়ায় মাস্ক পরা থাকলে অন্য অনেক রকমের অস্বস্তি দেখা দেয়। এছাড়াও মাস্ক পরা অবস্থায় কথা বললে অনেক সময় বুঝতেও অসুবিধা হয়।
শ্বাসবায়ু শোধক মাস্কের সঙ্গে একটি বাষ্প নির্গমন ও শ্বাস ত্যাগের ভাল্ভ লাগানো থাকে। বাতাসে ভাসমান বিভিন্ন পদার্থ এই ভালভের সাহায্যে পরিশ্রুত হওয়ায় প্রশ্বাসে সুবিধা হয়। এরফলে শ্বাস নেওয়ার সময় বিশুদ্ধ বাতাস নেওয়া সম্ভব হয়। শ্বাসবায়ু শোধক মাস্ক౼যেটি বোস শিল্ড নামে পরিচিত, এটি উদ্ভাবন করেছেন অধ্যাপক সমীর কুমার পাল এবং তাঁর সহযোগীরা। কেন্দ্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরের অধীনস্থ স্বায়ত্ত্ব শাসিত গবেষণা সংস্থা এস এন বোস ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সেস (এসএনবিএনসিবিএস)এর নির্দেশক অধ্যাপক শমিত কুমার রায়ের নেতৃত্বে অধ্যাপক পালের গবেষক দল এই গবেষণার কাজটি করেছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরের একটি প্রযুক্তি গবেষণা কেন্দ্রও এই প্রতিষ্ঠানে রয়েছে। কার্বন ডাই অক্সাইড, নিঃশ্বাসের সঙ্গে বেরনো জলীয় বাষ্প এবং ঘাম যাতে প্রশ্বাসের সঙ্গে আবার শরীরে না ঢোকে সেই লক্ষ্যে এই শ্বাসবায়ু শোধক মাস্ক একটি অভূতপূর্ব উদ্ভাবন। এই মাস্ক ব্যবহার করলে কারুর কথা বুঝতেও অসুবিধা হবেনা এবং বায়ু-বাহিত বিভিন্ন দূষিত পদার্থ-ও শরীরে প্রবেশ করবে না।
এছাড়াও এই প্রতিষ্ঠানটি একটি ন্যানো স্যানিটাইজার উদ্ভাবন করেছে, যার নাম বোস্টাইজার। এই ন্যানো স্যানিটাইজার ত্বকের ওপর জীবানুরোধী আস্তরণ গড়ে তোলে। এটি দীর্ঘক্ষণ সক্রিয় থাকে। সাধারণত যেসব স্যানিটাইজার আমরা ব্যবহার করি সেগুলি ঘন ঘন ব্যবহার করলে ত্বকে শুষ্কতা দেখা যায় এবং তাক্ষণিকভাবে জীবানু ধ্বংস করলেও জীবানুরোধী কোন ব্যবস্থা এই স্যানিটাইজারগুলি গড়ে তুলতে পারে না।
এই দুটি উদ্ভাবন-ই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের ন্যাশনাল রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনকে (এনআরডিসি) হস্তান্তরিত করা হয়েছে। এই সংস্থাটি কলকাতা ভিত্তিক মেসার্স পালমেক ইনফ্রাসট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেডকে উদ্ভাবন সংক্রান্ত তথ্য হস্তান্তর করেছে। পালমেকের নির্দেশক শ্রী শান্তি রঞ্জন পাল কোভিড-১৯ মহামারীর মোকাবিলায় দেশীয় প্রযুক্তিতে উদ্ভাবিত একটি উদ্যোগে সামিল হতে পেরে সন্তোষ ব্যক্ত করেছেন। দুটি জিনিসই স্বাধীনতা দিবসে বাজার আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এনআরডিসি-র মহা নির্দেশক ডঃ এইচ পুরুষোত্তম এবং মেসার্স পালমেক ইনফ্রাসট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেডের পক্ষে শ্রী শান্তি রঞ্জন পাল উদ্ভাবন হস্তান্তরের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরের সচিব অধ্যাপক আশুতোষ শর্মা, এসএনবিএনসিবিএস-এর নির্দেশক অধ্যাপক শমিত কুমার রায়, অধ্যাপক সমীর কুমার পাল, রেজিস্ট্রার শ্রীমতি সোহিনী মজুমদার, প্রযুক্তি গবেষণা কেন্দ্রের নোডাল আধিকারিক ডঃ সৌমেন মন্ডল, পালমেকের পক্ষে প্রিয়ঙ্কন এস শর্মা, সোমাভ গুপ্ত সহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত দপ্তরের পদস্থ আধিকারিকরা অনলাইনের মাধ্যমে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এই মাস্ক এবং স্যানিটাইজার বাজারে আসলে পর ব্যবহারকারীরা বর্তমান সমস্যাগুলি থেকে রেহাই পাবেন। অধ্যাপক শমিত কুমার রায় এই প্রকল্পের অর্থ সাহায্যের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সূত্র – পিআইবি।