” স্বপ্নপূরণ “
কলমেঃ সোহিনী ঘোষ।
স্বপ্নের মানুষটি যখন কাছে এসে ধরা দেয় খুব অবাক লাগে নিজেকে। বোঝাতেও সময় লাগে। সত্যিই কী? সত্যিই কি আমার মন এতদিন ধরে যাকে স্বপ্নের পুরুষ ভেবেছে সেও একিই ভাবে আমাকে তার মনের মধ্যে যত্নে আগলে রেখেছিল?
বার বার দূর থেকে দেখেছি সাহস হয়নি কাছে যাবার, কথা বলার পরিচয় করার। বার বার মুগ্ধ হয়েছি সবটাই দূর থেকে।
আমিও যে পেছনের সারিতে থেকে তার চোখে পড়ব এটা কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবিনি।
হঠাৎ একদিন সুযোগ হল। একদম পাশের সিটে। ভগবান আমি কি স্বপ্ন দেখছি? নিজের গায়ে স্পর্শ করছি বার বার। আমার পাশের সিটের মানুষটি আমার মনের মানুষ। উথাল পাথাল চলছে। সারা শরীরে কম্পন অনুভূত হচ্ছে। চুপচাপ বসে আছে সীমন্তিনী। আজ তার performance. তার পা চলছে না। অবশ হয়ে আসছে সারা শরীর। কি করে সে যাবে স্টেজে। আর কি করেই বা perform করবে? হে ভগবান আজ তুমি কি পরীক্ষায় এনে ফেললে?
অবশেষে ডাক পড়ল সীমন্তিনী সাহা। পাশের ভদ্রলোকটি বললেন যান আপনাকে ডাকছে, শুনে আরো শিহরিত। উনি আমার নামটাও জানেন। সামান্য হাসি দিয়ে বলল হ্যাঁ যাচ্ছি। ভয় নেই খুব ভালো হবে আপনার performance.
শরীর ও মনে শিহরণ। সারা শরীর কাঁপছে। ঠোঁট কাঁপছে। অবশেষে স্টেজে উঠেছে সীমন্তিনী।
আমি সীমন্তিনী…. বলা শুরু।
শরীরে মনে জড়তা কাটিয়ে সামনের মানুষটির স্নেহসুলভ ভালোবাসা সীমন্তিনীকে যেন অন্য জগতে নিয়ে গেল। খানিকক্ষণ আবেশ বিভোর হয়ে তার কবিতা বলে গেল। বলা শেষ হলে একরাশ করতালিতে ফেটে পড়ল সারা হল। আলো আঁধারে হাততালি সীমন্তিনীকে আলাদা জগতে পৌঁছে দিচ্ছে। সামলে নিয়ে নিজের সিটে এসে বসল। পাশের লোকটি জানালো অভিনন্দন সীমন্তিনী। অসাধারণ তোমার কণ্ঠ। প্রিয় মানুষটির কাছে নিজের প্রশংসা যেন স্বর্গ সুখের সামিল লাগছিল সীমন্তিনীর।
অনুষ্ঠান শেষের পথে ভদ্রলোক বললেন সীমন্তিনী একটু সময় হবে? একসাথে একটু কোথাও বসে চা খাবার? কিছু বলার আছে তোমায়।
কি বলতে চান উনি, সীমন্তিনী কিছু না ভেবে রাজি হয়ে গেল। সামনেই কফিশপে দু-জনে বসল। হালকা আলো আর মৃদু বাঁশির সুর বাঁজছিল স্পীকারে। মনোরম পরিবেশ সাথে স্বপ্নের মনের মানুষটি।
আমি নীলাঞ্জন, সবাই আমায় নীল বলে জানে। আমি কিন্তু তোমায় সায়ানি বলব। কী পছন্দ তো?
সীমন্তিনী যত দেখছে অবাক হচ্ছে। নিচু গলায় বলল হ্যাঁ রাজি।
বলো কি খাবে?
সীমন্তিনী বলল যা হয় সামান্য কিছু।
নীল বলল আচ্ছা- কফি বলি?
সীমন্তিনী বলল আচ্ছা।
কফি চুমুক দিয়ে নীল বলল আমায় চেনো?
সীমন্তিনী বলল হ্যাঁ অনেকদিন থেকেই কিন্তু সাহস হয়নি সামনাসামনি আসার। অতি সাধারণ মানুষ আমি। আপনি অনেক বড় মানুষ।
নীল হেসে বলল সেকি? আমিও তোমায় লক্ষ্য করেছি অনেক ভিড়ে তুমি তুমি যেন একটু আলাদা কিছু। তোমার চোখ কথা বলে। তোমার ঠোঁটের কোনের আলতো হাসি বলতে চায় অনেক কিছু। ভিড়ের মধ্যে থেকে বার বার নজরে পড়েছ তুমি। অতি বড় কিছু মানুষের ভিড়ে আমি তোমায় দেখেছি, উজ্জ্বলতা আমায় বার বার টেনেছে।
আজ এত কাছে তোমায় দেখব ভাবিনি। যাক সায়নী কিন্তু তোমার নাম –যে যাই বলে বলুক।
ধীরে ধীরে পরিচিতি বাড়তে থাকলো। স্বপ্ন যেন বাস্তবের মাটি স্পর্শ করেছে। প্রতিদিন নতুন নতুন ভালোলাগা। স্বপ্ন আর বাস্তব মিলেমিশে একাকার।
বাস্তবতার নিরিখে স্বপ্ন আজ অক্ষত।