দুই দিনের জন্য সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছে রাজধানী দিল্লিতে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায়। এ মৌসুমে প্রথমবারের মতো বায়ুদূষণের মাত্রা নামে বৃহস্পতিবার।
গতকাল শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ঘোষণা দেন। কেজরিওয়াল বলেছেন, ‘বায়ুদূষণ বাড়তে থাকায় দিল্লির সব সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আগামী দু’দিন বন্ধ থাকবে।’
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) চলতি মৌসুম প্রথমবারের মতো বায়ুর মান সবচেয়ে খারাপ ছিল। আগামী দুই সপ্তাহে এ পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী।
শীতকালে রাজধানী দিল্লির বায়ু অন্য সময়ের তুলনায় বেশি দূষিত থাকে। এ সময় শস্য তোলার পর মাঠে খড় জ্বালিয়ে দেন কৃষকরা। বায়ুর নিম্ন গতি এবং নানা উৎসব-পার্বণে আতশবাজি ফোটানোর কারণে দূষণের মাত্রা অন্য সময়ের চেয়ে বহুগুণ বাড়ে।
প্রতিবছর ১ থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত দিল্লির বায়ুদূষণের মাত্রা সর্বোচ্চ থাকে। এসময় দিল্লির পার্শ্ববর্তী রাজ্য পাঞ্জাব এবং হরিয়ানায় খড় পোড়ানোর ঘটনা বেড়ে যায় বলে জানিয়েছে দিল্লি দূষণ নিয়ন্ত্রণ কমিটি।
খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লির বাতাসে ধূলিকণার ঘনত্ব ছিল ২ দশমিক ৫ পিএম বা পার্টিকুলেট ম্যাটার। এ আকারের ধূলিকণা ফুসফুসে বাসা বাঁধে। এই ধূলিকণার কারণে নানারকম রোগ দেখা যায়।
সরকারি তথ্য অনুসারে, দিল্লি এবং শহরতলির বেশ কয়েকটি অংশে এ পরিমাণের দূষণ বাতাসের প্রতি ঘনমিটারে ৬০ মাইক্রোগ্রামের নিরাপদ সীমা সাত থেকে আট গুণ বেশি।
পরিস্থিতির অবনতি দেখে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লির সকল সরকারি এবং বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো শুক্রবার ও শনিবার ((৩ ও ৪ নভেম্বর) বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন।
ক্রমবর্ধমান দূষণের প্রভাব মোকাবিলায় গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যানের তৃতীয় পর্যায়ের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্যানেল শহরে অপ্রয়োজনীয় নির্মাণকাজ অবিলম্বে নিষিদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
আগে গত সপ্তাহে দ্বিতীয় পর্যায়ের অংশ হিসেবে দিল্লি মেট্রো এবং বৈদ্যুতিক বাসসহ সকল গণপরিবহনকে দূষণ কমানোর নির্দেশ দেয়া হয়। গত মাসেই দিল্লি সরকার আতশবাজি উৎপাদন, বিক্রয় এবং ব্যবহারের ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিবছরই দূষিত বায়ুর কারণে দিল্লিতে গুরুতর স্বাস্থ্যগত জটিলতা দেখা যায়।
চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরাও বায়ুর গুণগত মানের বিপর্যয়ের কারণে শিশু এবং বয়স্কদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসের রোগ বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
বার্তা সংস্থা পিটিআই বলছে, দিল্লির সফদারজং হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান যুগল কিশোর বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, ইরিটেটিভ ব্রঙ্কাইটিস সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।’ শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের অত্যাবশ্যক প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
ছবিঃ সংগৃহীত।