জন্মদিন, মাস্টারদা সূর্য সেনের

Published By: Khabar India Online | Published On:

সূর্য সেন যিনি মাস্টারদা নামে সমধিক পরিচিত, তার ডাকনাম ছিল কালু, ভারতবর্ষের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিত্ব। তিনি চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় অস্বচ্ছল একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এই বাঙালি বিপ্লবী তৎকালীন ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং নিজ জীবন ত্যাগ করেন। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি মারা যান তিনি।

সূর্য সেনের বাহিনী কয়েকদিনের জন্যে ব্রিটিশ শাসনকে চট্টগ্রাম এলাকা থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। তার সম্মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি করে আবাসিক হলের নামকরণ করা হয়। এছাড়া তার স্মরণে কলকাতার বাঁশদ্রোণী মেট্রো স্টেশনটির নামকরণ করা হয়েছে ‘মাস্টারদা সূর্য সেন মেট্রো স্টেশন’।

সূর্য সেনের প্রথম স্কুল ছিল দয়াময়ী উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরে তিনি নোয়াপাড়া উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি ন্যাশনাল হাই স্কুলে ভর্তি হন। সূর্য সেন ১৯১২ সালে চট্টগ্রামের নন্দনকাননে অবস্থিত হরিশদত্তের ন্যাশনাল স্কুল থেকে প্রবেশিকা (এন্ট্রান্স) পাশ করে চট্টগ্রাম কলেজে এফ. এ.-তে ভর্তি হন। সে সময় আই.এ বা বর্তমানের উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার পরিবর্তে ফার্স্ট আর্টস বা এফ. এ. পরীক্ষার নিয়ম ছিল। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এফ. এ. পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে পাশ করে তিনি একই কলেজে বি.এ-তে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু তৃতীয় বর্ষের কোনো এক সাময়িক পরীক্ষায় ভুলক্রমে টেবিলে পাঠ্যবই রাখার কারণে তিনি চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বিতাড়িত হন। ফলে, তাকে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে বি.এ পড়তে যেতে হয়।

আরও পড়ুন -  Birthday: জন্মদিন আজ, টাইগার কাপ্তান মাশরাফি বিন মুর্তজা

১৯১৮ সালে তিনি মুর্শিদাবাদের বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন এবং চট্টগ্রামে ফিরে এসে ব্রাহ্ম সমাজের প্রধান আচার্য্য হরিশ দত্তের জাতীয় স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। স্বামী বিবেকানন্দ তাকে বিদগ্ধ মন্ত্রে উদ্দীপ্ত করেন। অসহযোগ আন্দোলনের সময় বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে গেলে তিনি দেওয়ানবাজারে বিশিষ্ট উকিল অন্নদা চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত অধুনালুপ্ত ‘উমাতারা উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে’ অঙ্কের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এসময় বিপ্লবী দলের সাথে তার সম্পর্ক গভীরতর হয়ে ওঠে এবং শিক্ষকতা করার কারণে তিনি ‘মাস্টারদা’ হিসেবে পরিচিত হন।

আরও পড়ুন -  জাহ্নবী কাপুর এই ড্রেস পরে রয়েছেন, দেখে শান্ত রাখতে পারবেন না – JAHANVI KAPOOR

১৯১৬ সালে মুর্শিদাবাদের বহররমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে সূর্য সেন সরাসরি রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত হন। বিপ্লবীদের গোপন ঘাঁটি এই কলেজ়ে তিনি অধ্যাপক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তীর সান্নিধ্যে আসেন। তিনি যুগান্তর দলের সাথে যুক্ত ছিলেন। সূর্য সেনকে তিনি বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষা দেন। সূর্য সেন ১৯১৮ সালে শিক্ষাজীবন শেষ করে চট্টগ্রামে এসে গোপনে বিপ্লবী দলে যোগ দেন। ৪৯ নং বেঙ্গল রেজিমেন্টের নগেন্দ্রনাথ সেন ১৯১৮ সালে চট্টগ্রামে এসে সূর্য সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী ও চারুবিকাশ দত্তের সাথে দেখা করেন। সূর্য সেন এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী অম্বিকা চক্রবর্তী একই থানার পাশাপাশি গ্রামের ছাত্র হিসেবে ছোটবেলা থেকেই পরস্পরের কাছে পরিচিত ছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) শেষের দিকে অনুরূপ সেন, চারুবিকাশ দত্ত, অম্বিকা চক্রবর্তী, নগেন্দ্রনাথ সেন প্রমুখদের সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রামে গোপন বিপ্লবী দল গঠন করা হয়।

আরও পড়ুন -  Shakib Al Hasan: আইপিএল থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত, বিপিএলকে কার্যত বেকার ঘোষণা করলেন সাকিব আল হাসান

কনডেম্‌ড সেলে সূর্য সেনকে কড়া পাহারায় নির্জন কুঠুরীতে রাখা হত। একজন কয়েদি মেথর সূর্য সেনের লেখা চিঠি ময়লার টুকরিতে নিয়ে জেলের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বন্দি বিপ্লবীদের দিয়ে আসতো। মৃত্যুর আগে জেলে আটক বিপ্লবী কালীকিঙ্কর দে’র কাছে সূর্য সেন পেন্সিলে লেখা একটি বার্তা পাঠান। সে বার্তায় তিনি লেখেন ‘আমার শেষ বাণী-আদর্শ ও একতা’।

১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি মধ্যরাতে সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসি কার্যকর হবার কথা উল্লেখ করা হয়। সূর্য সেন এবং তারকেশ্বর দস্তিদারকে ব্রিটিশ সেনারা নির্মমভাবে অত্যাচার করে। ব্রিটিশরা হাতুড়ি দিয়ে তার দাঁত ভেঙে দেয়। এরপর তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। এরপর অর্ধমৃতদেহ দুটি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। সূত্রঃ সংগৃহীত।