পরিবেশ দূষণের বিষয়টি মাথায় রেখে ‘ফেয়ারফোন’ নামে বিশেষ এক মোবাইল ফোন তৈরি করেছে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামের একটি কোম্পানি। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, প্রয়োজন হলে এর ব্যবহারকারী ডিভাইসটির প্রতিটি অংশ খুলে নিজেই মেরামত করে নিতে পারবেন।পরিবেশ প্রেমীদের কাছে এই ফেয়ারফোন ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অনেকেই নিজে এই ফোন ব্যবহার করছেন এবং অন্যকে ব্যবহারে উৎসাহী করছেন। যেমন জার্মানির উরস লিসি তার নিজ শহরে প্রতি চার সপ্তাহে নিজে নিজেই ফোন কিভাবে ঠিক করা যায় সে সম্পর্কে অন্যকে প্রশিক্ষণ দেন। তবে অন্যকোন ফোন নয়, শুধুমাত্র ফেয়ারফোন।
গত আট বছর ধরে লিসি ফেয়ারফোন ব্যবহারকারীদের জন্য স্কিল-শেয়ারিং নেটওয়ার্কের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করছেন।এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার প্রয়োজন না হলে আমি ফোন মেরামত করি না। তবে আমি সবসময়ই নিজের ফেয়ারফোন নিজেই মেরামত করতে অনুপ্রানিত করি।
একটি মডুলার নকশার সঙ্গে ফেয়ারফোন ডিভাইসগুলোর ডিসপ্লে স্ক্রিন, ব্যাটারি, ইউএসবি পোর্ট এবং ক্যামেরার মতো উপাদানগুলো এর ব্যবহারকারীরা সহজে পরিবর্তন, মেরামত এবং কাস্টমাইজ করে নিতে পারে। জার্মানির লিসি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ফেয়ারফোন ২ মাত্র দুই মিনিটের মধ্যেই পুরোপুরি খোলে ফেলা যায়। ফেয়ারফোনের এমন কিছু মডেল ছিলো যেগুলোর ডিসপ্লে পরিবর্তনের জন্য তা খোলে ফেলতে কোন ধরনের যন্ত্রেরও প্রয়োজন হতো না।
২০১৩ সালে ফেয়ারফোন কোম্পানির যাত্রা শুরু। মোট তিনটি নীতিমালার ওপর নির্ভর করে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
বিরোধপূর্ণ নয় এমন খনিজ ক্ষেত্র থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করা, রিসাইকেল করা যায় এমন পণ্য তৈরি, দীর্ঘসময় টেকসই এবং মেরামতযোগ্য।জাতিসংঘের দেয়া তথ্যানুযায়ি, ২০১৯ সালে বিশ্বে মোট ৫৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন টন ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য উৎপাদিত হয়েছে; যা পাঁচ বছর আগের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। এই বর্জ্যরে একটি বড় অংশ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হয়। ইলেক্ট্রনিক বর্জ্যরে মাত্র ১৭ শতাংশ রিসাইকেল করা যায়।ফেয়ারফোন দাবি করছে , ফোনগুলো সহজে মেরামত উপযোগী করে তৈরি করলে তা দীর্ঘসময় টিকে, কম বর্জ্য উৎপাদন করে এবং এটি পরিবেশের ওপর ভালো প্রভাব ফেলে।
ফেয়ারফোনের সহযোগী প্রতিষ্ঠাতা মিকুয়েল বাল্লাসটার বলেন, আমরা জানি যে কোন একটি ফোনের আয়ু কমপক্ষে দুই বছর বৃদ্ধি মানে কার্বন নিঃসরন ৩০ শতাংশ কমবে।এখন পর্যন্ত নেদারল্যান্ডসের কোম্পানিটি চার লাখ ডিভাইস বিক্রি করেছে। এদিকে থেকে বলা যায় স্মার্টফোনের বিশাল বাজারে এটি খুবই ছোট খেলয়াার।লিসি বলেন, ফেয়ারফোন এখনো তেমন একটা পরিচিত হয়ে উঠে নি। এমনকি অনেক দোকানে তা পাওয়াও যায় না। তবে এটি সংশ্লিষ্ট শিল্পে ঝড় তুলেছে। বিশেষ করে জার্মানিতে।
জার্মানিতে কোম্পানিটি অনেকগুলো পুরস্কার পেয়েছে। এরমধ্যে ২০১৬ সালে ইউরোপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পরিবেশগত পুরস্কার জার্মান এনভায়রনমেন্টার অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছে ক্ম্পোানিটি।ফেয়ারফোনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা শুধুমাত্র প্রবৃদ্ধির ওপর জোর দিচ্ছে না, মূলত এই শিল্পের গতানুগতিক ধারা পরিবর্তন করতে চাইছে। আমরা এক্ষেত্রে পদপ্রদর্শক হয়ে থাকতে চাই।মোবাইল শিল্পের বড় কোম্পানিগুলোও এখন এ পথে হাটতে চাইছে। গত বছর অ্যাপল ‘সেলফ রিপেয়ার সার্ভিস’ চালু করে।
সূত্রঃ বিবিসি