৯২ বছর বয়সে মৃত্যু হল বলিউডের মহাতারকা কিংবদন্তিতুল্য কণ্ঠশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের। হাসপাতালে প্রায় একমাস দীর্ঘ লড়াইয়ের পর মৃত্যু হল এই সঙ্গীতের মহাতারকার। রবিবার সকালে মধ্য মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন লতা মঙ্গেশকর। ইতিমধ্যেই বহু সংবাদমাধ্যমে এই খবরটি নিশ্চিত করা হয়েছে। জানুয়ারি মাস থেকেই তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তখন থেকেই মুম্বাইয়ের এই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। মাঝে একবার তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছিল, তবে তাকে আইসিইউর বাইরে নিয়ে আসেননি চিকিৎসকরা।
১১ জানুয়ারি থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
করোনাভাইরাস থেকে পরবর্তীকালে নিউমোনিয়া ধরা পড়ে তার। চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিলেন কিন্তু, হঠাৎ করেই আবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। শনিবার সরস্বতী পুজোর দিন লতা মঙ্গেশকরের শারীরিক অবস্থার পুনরায় অবনতি হয়। দুপুরে চিকিৎসকরা জানান, গায়িকার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক। তারপর থেকেই অনুরাগীরা তার আরোগ্য কামনায় রত। শনিবার সন্ধেবেলা দিদি লতাকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে আসেন আশা ভোঁসলে। তখন থেকেই উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছিল। চিকিৎসকরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু চিকিৎসকদের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে, রবিবার সকালে প্রয়াত হলেন সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর।
লতার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া ভারতে। বিনোদন জগত তো বটেই, রাজনীতিবিদ খেলোয়াড় থেকে শুরু করে সকলেই নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। সাত দশক ধরে দর্শক এবং সমালোচকদের হৃদয় তৃপ্ত করে চলা ভারতীয় সংগীতের জীবন্ত কিংবদন্তী শিল্পীর মৃত্যুতে শোকাহত সকলেই। জন্ম হয়েছিল ১৯৯২ সালে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে। কিন্তু তার সংগীত শুধুমাত্র ভারত নয় তাকে সারা বিশ্বে জনপ্রিয় করে দিয়েছে।
১৯৪২ সালে মারাঠি ছবির একটি গান থেকে শুরু করেছিলেন ক্যারিয়ার।
১৯৪৬ সালে প্রথম বলিউড গান, বসন্ত জোগলেকরের ‘আপ কি সেবা মে’ ছবির গান থেকে শুরু করেছিলেন বলিউড ক্যারিয়ার। তা ঠিক দুই বছর পর সুরকার গোলাম হায়দার তাকে প্রথম বড় সুযোগ দিলেন। মজবুর ছবিতে ‘দিল মেরা তোড়া’ গানটি ছিল তার জীবনের সবথেকে বড় ব্রেক। তারপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সংগীতের ইতিহাসে এখনো পর্যন্ত সবথেকে বেশি গানের রেকর্ড রয়েছে আশা ভোঁসলের ঝুলিতে। প্রায় ১০,০০০ গান গেয়েছেন তিনি। তবে বোন আশার আগে এই রেকর্ড ছিল লতা মঙ্গেশকরের ঝুলিতে। তবে শুধুমাত্র হিন্দি গান নয়, একাধিক বাংলা গানও তিনি গেয়েছেন অসাধারণ দক্ষতায়। ও মোর ময়না গো, ও পলাশ ও শিমুল, আকাশপ্রদীপ জ্বেলে, আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন, প্রেম একবার এসেছিল নিরবে সহ একাধিক গান গেয়েছেন তিনি। ২০০১ সালে ভারত সরকার তাকে ভারতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ভারতরত্নে ভূষিত করে। ১৯৮৯ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন। না ফেরার দেশে চলে গেলেন কিন্নর কণ্ঠী লতা মঙ্গেশকর। রেখে গেলেন কণ্ঠের জাদুর ছোঁয়ায় গাওয়া অসংখ্য গান। এ শোক সারা পৃথিবীর!!
শেষ প্রণাম সুর সম্রাজ্ঞী