ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা এবং বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে ভারত সরকার বিদ্যুৎ সংরক্ষণ আইন ২০০১-এ নির্দিষ্ট কিছু সংশোধনের প্রস্তাব করে পরিবেশ বান্ধব শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে একাধিক নতুন নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে। এই আইনে সংশোধনের উদ্দেশ্য হল, শিল্প সংস্থা, ভবন, পরিবহণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে যেখানে শক্তির চাহিদা বেশি, সেখানে পুনর্নবিকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানো।
কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সংশোধনের খসড়া প্রস্তুত করেছে। প্রস্তাবিত খসড়ায় শিল্প সংস্থা বা যে কোন প্রতিষ্ঠানে মোট শক্তি ব্যবহারের মধ্যে পুনর্নবিকরণযোগ্য শক্তির অংশ স্থির করার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। কার্বন নির্গমন হ্রাস করার মাধ্যমে দূষণ মুক্ত শক্তির ব্যবহার বাড়াতে উৎসাহ দেওয়ার কথাও প্রস্তাবে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রী শ্রী আর কে সিং সম্প্রতি আইনে প্রস্তাবিত সংশোধনগুলি পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক / দপ্তর তথা রাজ্য সরকারগুলির কাছ থেকে মতামত ও পরামর্শ চাওয়ার নির্দেশ দেন। সেই অনুসারে মন্ত্রকের সচিব শ্রী অলোক কুমার গত ২৮ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রক, দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। শক্তি সংরক্ষণ আইনে প্রস্তাবিত সংশোধনগুলি চূড়ান্ত করতে এই বৈঠক আয়োজন করা হয়।
শক্তি সংরক্ষণ আইন বিশদে পর্যালোচনা করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে চারটি (জাতীয় স্তরে একটি ও আঞ্চলিক পর্যায়ে ৩টি) বৈঠক আয়োজন করা হয়। এই বৈঠকগুলিতে প্রস্তাবিত সংশোধন সম্পর্কে আলোচনা ও বিভিন্ন পক্ষের মতামত চাওয়া হয়। আইনে প্রস্তাবিত সংশোধন কার্যকর হলে ভারতে কার্বন-বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলা সহজ হবে, সেই সঙ্গে গ্রিড ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে পুনর্নবিকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। পক্ষান্তরে জীবাশ্ম জ্বালানী ভিত্তিক শক্তির চাহিদা ও ব্যবহার কমবে। অন্যদিকে, বায়ুমন্ডলে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ হ্রাস পাবে।
জয়বায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলায় ভারত অগ্রভাবে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। জাতীয় স্তরে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ নির্ধারিত লক্ষ্যে নামিয়ে আনতে সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমনের পরিমাণ ৩৩-৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর পরিকল্পনা করেছে। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক ২০৩০ সালের মধ্যে জীবাশ্ম বহির্ভূত শক্তি উৎসের মাধ্যমে মোট বিদ্যুৎ খরচের ৪০ শতাংশ পুনর্নবিকরণযোগ্য শক্তির মাধ্যমে যোগান দেওয়ার উচ্চাকাঙ্খী লক্ষ্য স্থির করেছে। এছাড়াও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যার ফলে, ২০৩০ নাগাদ প্রায় ৫৫০ মেট্রিকটন কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ হ্রাস পাবে। শক্তি সংরক্ষণ আইনে প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলি অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তির প্রয়োগ বাড়াতে উৎসাহিত করবে। এমনকি, শিল্প সংস্থাগুলিকেও বর্তমান জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহারের বিকল্প হিসেবে গ্রীণ হাইড্রোজেন কাজে লাগাতে উৎসাহিত করবে।
পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে বেসরকারি ক্ষেত্রের অংশগ্রহণে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এর ফলে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যাগুলি মোকাবিলা করা সহজ হবে।
কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শক্তির চাহিদা অপরিহার্য এবং পরিবর্তনশীল ব্যবসায়িক প্রেক্ষাপটে দেশকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিরিখে আত্মনির্ভর করে তোলা অনেক বেশি জরুরী হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে পরিবেশের বিষয়টিও ক্রমাগত চাপ বাড়াচ্ছে। তাই, এই বিষয়গুলিকে বিবেচনায় রেখে ২০০১-এর শক্তি সংরক্ষণ আইনে সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সূত্রঃ পিআইবি