প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আত্মনির্ভর ভারত স্বয়মপূর্ণা গোয়া কর্মসূচির সুবিধাভোগী এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।
গোয়া সরকারের আন্ডার সেক্রেটারি শ্রীমতী ঈশা সাওয়ান্তের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রী স্বয়মপূর্ণা মিত্র হিসাবে কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা তাঁর কাছ থেকে জানতে চান। শ্রীমতী সাওয়ান্ত জানান যে, সুবিধাভোগীদের দোরগোড়ায় পরিষেবা এবং সমস্যা সমাধানের সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এক জানালা ব্যবস্থাপনার সুবিধা চালু হওয়ায় তাঁরা যথেষ্টই লাভবান হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান যে, যথাযথভাবে প্রযুক্তির সাহায্যে তথ্য সংগৃহীত হচ্ছে। মহিলাদের ক্ষমতায়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে যে,প্রশিক্ষণের সাহায্যে ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে নারীদের সামাজিক গণমাধ্যমে বিপণন ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডিং সহ নানা বিষয়ে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এমনকি, মহিলাদের ক্ষমতায়নে অটল ইনক্যুবিশন গোষ্ঠীরও সদ্ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ের কথা স্মরণ করেন এবং মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে খাবার তৈরি ও পরিবেশন সম্পর্কে প্রশিক্ষণের সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরেন। শ্রী মোদী পরামর্শ দেন যে, পণ্য উৎপাদন ক্ষেত্র ছাড়াও পরিষেবা ক্ষেত্রে মহিলাদের অন্তর্ভুক্তির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমলাতন্ত্রকে আরও বেশি সংবেদনশীল এবং উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা শুরু করার জন্য আহ্বান জানান। পাশাপাশি, এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদেরও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন তিনি।
প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক শ্রী কনস্টানসিও মিরান্ডা এবং একজন পঞ্চায়েত প্রধান আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন যে, স্বয়মপূর্ণা অভিযান বিভিন্ন ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার লক্ষ্য অর্জনে নতুন দিশা দেখিয়েছে। তাঁরা আরও জানিয়েছেন যে, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিকে চিহ্নিত করে এবং সমন্বিত পদ্ধতিতে কাজ চলছে। দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা কাজগুলি দ্রুতসম্পন্ন হওয়ার জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেূন। স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত জমে থাকা কাজগুলি দ্রুত শেষ করার জন্য সরকার নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন।
শ্রী কুন্দন ফালারির সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। শ্রী ফালারি জানান যে, তিনি এবং স্থানীয় প্রশাসন সমাজের শেষ প্রান্তে থাকা মানুষটির কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তাঁর এলাকায় ‘স্বনিধি প্রকল্প’কে জনপ্রিয় করে তোলার অভিজ্ঞতার কথাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভাগ করে নিন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তাঁর কাছ থেকে রাস্তার হকারদের ডিজিটাল লেনদেনের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চান। গোয়ার স্বাধীনতার ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে কেন্দ্রীয় সরকার গোয়ার প্রতিটি পঞ্চায়েতকে ৫০ লক্ষ এবং প্রতিটি পুরসভাকে ১ কোটি টাকার আর্থিক সাহায্য প্রদান করছে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।
মৎস্যচাষ ক্ষেত্রে যুক্ত একজন উদ্যোক্তা শ্রী ল্যুইস কার্ডোজো সরকারি প্রকল্প থেকে সুবিধা লাভ এবং পচন রোধকারী যানবাহন ব্যবহারের সুবিধার কথা বর্ণনা করেন। প্রধানমন্ত্রী কিষাণ ক্রেডিট কার্ড, এনএভিআইসি অ্যাপ, মাছ ধরার নৌকার জন্য আর্থিক সাহায্য, মৎস্যজীবীদের সাহায্যের জন্য একাধিক প্রকল্পের কথাও তুলে ধরেন। শ্রী মোদী মৎস্যজীবী ও কৃষকদের অধিক মুনাফার জন্য কাঁচা পণ্যের পরিবর্তে প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদন ও বিক্রির ক্ষেত্র সম্প্রসারণের ওপর জোর দেন।
স্বয়মপূর্ণার আওতাধীন দিব্যাঙ্গ জনদের জন্য গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন শ্রী রুকি আহমেদ রাজসাব। প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকার দিব্যাঙ্গ জনদের মর্যাদা ও সম্মানের জন্য কাজ করে চলেছে। সম্প্রতি প্যারা-অলিম্পিকে সুযোগ-সুবিধা এবং সাফল্যের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রধান শ্রীমতী নিশিতা নামদেব গাওয়াসের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রী এই গোষ্ঠীর পণ্য এবং তাঁদের পণ্যের বাজারজাতকরণের উপায় সম্পর্কে জানতে চান। প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, মহিলাদের মর্যাদা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্য সরকার উজ্জ্বলা, স্বচ্ছ ভারত, পিএম-আবাস ও জন ধনের মতো প্রকল্প গ্রহণ করেছে। শ্রী মোদী বলেন, সশস্ত্র বাহিনী হোক বা ক্রীড়া ক্ষেত্র সর্বত্রই নারীরা সম্মান লাভ করেছেন।
শ্রী দুর্গেশ এম শিরোদকরের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রী ডেয়ারী গোষ্ঠীর কাজকর্ম সম্পর্কে জানতে চান। শ্রী শিরোদকর জানান যে, তাঁদের এই গোষ্ঠী কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা লাভে করেছে। এমনকি, অন্যান্য কৃষক ও ডেয়ারি ক্ষেত্রে যুক্ত উদ্যোক্তাদেরও এই সুবিধা সম্পর্কে সচেতন করেছে তাঁরা। প্রধানমন্ত্রী কিষাণ ক্রেডিট কার্ড প্রকল্পকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য শ্রী শিরোদকরের অনন্য প্রয়াসের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। শ্রী মোদী বলেন, সরকার ডেয়ারি ক্ষেত্রে যুক্ত ব্যক্তিদের আয় বৃদ্ধিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি কিষাণ ক্রেডিট কার্ড, সয়েল হেলথ্ কার্ড, নতুন কৃষি আইন ইত্যাদি সম্পর্কে নানা তথ্য তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী জানান যে, গোয়া হ’ল এক আনন্দদায়ক জায়গা। গোয়ার বৈশিষ্ট্যই হ’ল প্রকৃতি। এর উল্লেখযোগ্য দিক হ’ল পর্যটন। তিনি আরও বলেন, আজ গোয়া উন্নয়নের এক নতুন মডেল। এখানে পঞ্চায়েত থেকে প্রশাসন পর্যন্ত উন্নয়নের জন্য সম্মিলিত প্রয়াসের প্রতিফলন দেখা যায়। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গোয়ার অসাধারণ কর্মকান্ড সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, ভারতে উন্মুক্ত স্থানে শৌচকর্ম বন্ধ করার যে লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে, গোয়া ১০০ শতাংশ এই লক্ষ্য পূরণ করেছে। প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ করেছে গোয়া। প্রতিটি গৃহস্থে নল বাহিত পানীয় জল সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রেও ১০০ শতাংশ লক্ষ্য অর্জন করেছে গোয়া। এমনকি, দরিদ্রদের বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার ক্ষেত্রেও গোয়া ১০০ শতাংশ লক্ষ্য পূরণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, মহিলাদের সুবিধা ও মর্যাদা দানের জন্য গোয়া সফলভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পগুলিকে বাস্তবায়িত করেছে। মহিলাদের জন্য শৌচালয় নির্মাণ, উজ্জ্বলা গ্যাস সংযোগ, জন ধন অ্যাকাউন্টের মতো সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে গোয়া সরকারের কাজের ভুয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত মনোহর পাররিক্করের অবদানের কথা স্মরণ করে জানান, গোয়াকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পাররিক্কর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। গোয়ার সমৃদ্ধি এবং বর্তমান চালু প্রকল্পগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ও গোয়াকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী-মন্ত্রিসভার সদস্যদের ভুয়সী প্রশংসা করেন তিনি। শ্রী মোদী বলেন, আজ গোয়া নতুন করে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। ডবল ইঞ্জিন সরকার রাজ্যের উন্নতির জন্য পূর্ণ শক্তি ও দৃঢ় সংকল্প নিয়ে কাজ করে চলেছে। দলগতভাবে গোয়ার এই নতুন সাফল্যের সুফলই হ’ল স্বয়মপূর্ণা।
শ্রী মোদী বলেন, গোয়ায় যে পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে, তা কৃষক, পশুপালক ও মৎস্যজীবীদের আয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। গ্রামীণ পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণের জন্য বিগত বছরের তুলনায় চলতি বছরে গোয়ার জন্য আর্থিক সাহায্যের পরিমাণ ৫ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী জানান, মৎস্যজীবীদের মাছ ধরার নৌকার আধুনিকীকরণের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রক থেকে সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গোয়ার মৎস্যজীবীরা প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনার আওতায় প্রভূত সহায়তা পেয়েছেন।
টিকা অভিযান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোয়া সহ দেশের পর্যটন-ভিত্তিক রাজ্যগুলিতে বিশেষ সাহায্য দেওয়া হয়েছে। এতে গোয়াও অনেক উপকৃত হয়েছে। সমস্ত যোগ্য ব্যক্তিদের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার জন্য গোয়া সরকার যে দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছে – প্রধানমন্ত্রী তারও প্রশংসা করেছেন। সূত্রঃ পিআইবি