Kalikaprasad Bhattacharya: স্ত্রী ঋতচেতা, মেয়ের মধ্যেই কালিকাপ্রসাদকে খুঁজে পায় !

Published By: Khabar India Online | Published On:

খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, ওয়েবডেস্কঃ    সংবাদমাধ্যমের আলো থেকে নিজেকে দূরে রেখেছিলেন। যাওয়ার কথা ছিল না, কিন্তু তবু সময় ছিনিয়ে নিয়েছিল লোকসঙ্গীত নিয়ে নিরন্তর গবেষণা করা সঙ্গীতজগতের অঘোষিত সম্রাট কালিকাপ্রসাদ (Kalikaprasad Bhattacharya) কে। 11 ই সেপ্টেম্বর তাঁর একান্ন তম জন্মদিনে অবশেষে নিস্তব্ধতা ভাঙলেন তাঁর স্ত্রী ঋতচেতা গোস্বামী। তিনি জানালেন, কালিকাপ্রসাদের জীবনের সবচেয়ে প্রিয় উপহার ছিল তাঁর কন্যা আশাবরী (Ashabari) র হাতে তৈরি কার্ড অথবা ছবি। আশাবরীর আঁকার শখ দেখে কালিকাপ্রসাদ ঠিক করেছিলেন, যদি তাঁর কন্যা বড় হয়ে ড্রইং নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়, তাহলে তিনি বাধা দেবেন না। কালিকাপ্রসাদ ভালোবাসতেন আনন্দ করতে। তাঁর জন্মদিনে মায়ের হাতে তৈরি ক্ষীর ও পায়েস ছিল বাঁধা। পরবর্তীকালে তাঁর স্বাস্থ্যের কথা ভেবে সুগার ফ্রি পায়েস বানানো হত। কালিকাপ্রসাদ বলতেন, ওই বাটি ভর্তি পায়েস শুধু তাঁর। মজা করে ঋতচেতা বলতেন, সুগার ফ্রী পায়েস খাওয়ার ইচ্ছা কারও নেই। জন্মদিনে কোনো নতুন জামা উপহার পেলে তা সেদিনই পরে নিতেন কালিকাপ্রসাদ।

আরও পড়ুন -  শ্রী গড়করি মণিপুরে ১৩টি মহাসড়ক প্রকল্পের শিলান্যাস ও ১টি সুরক্ষা কর্মসূচির সূচনা করেছেন
সেলিব্রিটি হয়েও গুরুজনদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ছিল অটুট। প্রত্যেক জন্মদিনে প্রণাম করতেন ঋতচেতার মা-বাবাকে। ‘কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি?’ কবিগুরুর এই কথা আজ তার বাবার জন্মদিনে সার্থক করে তুলেছে আশাবরী। এই বছরেও সে বাবার জন্য ছবি এঁকেছে। 11 ই সেপ্টেম্বর ভার্চুয়াল মাধ্যমে কালিকাপ্রসাদের নিজের হাতে গড়ে তোলা ‘দোহার’-এর অনুষ্ঠান হবে। 2017 সাল থেকে ‘জন্মদিনে কালিকাপ্রসাদ’ নামক এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয় ‘দোহার’-এর পক্ষ থেকে। নিজেকে সঙ্গীতের প্রতি উৎসর্গ করেছিলেন কালিকাপ্রসাদ। প্রাচীন সঙ্গীত পদ্ধতিকে সমসাময়িক রূপদান, নতুন গান তৈরি করা, পুরানো গান খোঁজা, লোকসঙ্গীতকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করছিলেন কালিকাপ্রসাদ। ঋতচেতাকে বলতেন স্কুলের চাকরি ছেড়ে গানের প্রতি একাগ্র হতে। ঋতচেতা গিয়েছিলেন স্কুলের চাকরি ছাড়তে, কিন্তু ছাড়া হয়নি। সেই স্কুলের চাকরি আজ বাঁচিয়ে রেখেছে পরিবারকে।

আরও পড়ুন -  নির্বাচনী প্রচারে এসে শাসক দলকে আক্রমণ করলেন, সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী

শান্তিনিকেতনে একটি জমি কিনেছিলেন কালিকাপ্রসাদ। নিজে হাতে এঁকেছিলেন তাঁর স্বপ্নের বাড়ির নকশা। সেই নকশায় ছিল বাড়ির নীচের তলার বিরাট হলঘর। ঋতচেতা বিশ্বাস করতে পারেননি, এটি গানবাজনার, সঙ্গীত সাধনার ঘর হবে। তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, শোওয়ার ঘর বা রান্নাঘর হবে না! কিন্তু কালিকাপ্রসাদ জানিয়ে দিয়েছিলেন সঙ্গীতের জন্য খোলামেলা পরিবেশ প্রয়োজন। ঋতচেতা জানালেন, সাংগঠনিক ক্ষমতায় দক্ষ, কাজপাগল মানুষটি সংসারের মারপ‍্যাঁচ অত বুঝতেন না।

শান্তিনিকেতনের স্বপ্নের সেই বাড়ি তৈরি হয়ে গিয়েছে। কালিকাপ্রসাদের ইচ্ছা অনুযায়ী নাম রাখা হয়েছে ‘কোমল ঋষভ’। পরবর্তীকালে যে আর্কিটেক্ট বাড়ির নকশা করেছিলেন, তিনি বাড়ির একতলায় সঙ্গীত সাধনার জন্য শুধুমাত্র একটি বড় ঘর রেখেছেন। কলকাতার বাড়ির নিচের তলায় স্টুডিও হয়েছে। সেখানে ‘দোহার’ এর রেকর্ডিং-এর পাশাপাশি অন্য শিল্পীরাও গান গাইতে আসেন। স্টুডিওর নাম রাখা হয়েছে ‘প্রসাদ কহে’। কালিকাপ্রসাদের যোগ্য উত্তরসূরী হয়ে উঠছে তাঁর কন্যা আশাবরী। ঋতচেতাই মেয়েকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম দেন। আশাবরীর কিন্তু নিজের পছন্দ রয়েছে। ইতিমধ্যেই সেই শিখে নিয়েছে কঠিন রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘প্রচন্ড গর্জনে’। ঋতচেতা, আশাবরীর মধ্যেই দেখতে পান কালিকাপ্রসাদকে।

আরও পড়ুন -  সেনা প্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে যুদ্ধ জাহাজ কাভারাত্তিকে নৌ-বাহিনীতে সামিল করলেন

কালিকাপ্রসাদের লেখা গান ‘যা খুশি তাই করো ইচ্ছে’ র রেকর্ডিং করেছে আশাবরী। ইউটিউবে গানটি দেখে নেটিজেনদের ভালো লেগেছে। ঋতচেতা আজও ভাবতে পারেন না, কালিকাপ্রসাদ নেই। তাঁর মনে হয়, গানের জন্য বাইরে গেছেন, এখুনি হয়ত চলে আসবেন। সত্যিই আছেন কালিকাপ্রসাদ। শিল্পীর মৃত্যু হয় না। কালিকাপ্রসাদ বেঁচে আছেন তাঁর সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে। আশাবরীর জন্য রেখে গিয়েছেন তাঁর অসমাপ্ত কাজ।