খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, ওয়েবডেস্কঃ কিছু বছর আগে থেকেই বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন দিলীপ ঘোষ। দীলিপবাবু যবে থেকে রাজ্য সভাপতি হয়েছেন তবে থেকেই ধীরে ধীরে উত্থান হতে শুরু করেছে রাজ্য বিজেপির। এতদিন পর্যন্ত যেখানে মাত্র তিনটি আসন নিয়ে শান্ত থাকতে হয়েছিল বিজেপিকে, সেখানে বিজেপি আজকে প্রধান এবং একমাত্র বিরোধীদল। এছাড়াও, বিজেপির ঝুলিতে বর্তমানে ১৮ জন সাংসদ রয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীও বটে। এই পরিস্থিতিতে দিলীপ ঘোষের রাজ্য সভাপতি হিসেবে মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী নভেম্বর মাসে।
নরেন্দ্র মোদী নিজেও বাংলায় ভোট প্রচারে এসে দিলীপ ঘোষের বেশি প্রশংসা করেছিলেন। কিন্তু বিজেপি রীতি অনুযায়ী, রাজ্য সভাপতি পদে ১০ বছরের বেশি থাকা যায়না আর, ইতিমধ্যে দু’বার রাজ্য সভাপতি হয়ে গিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। কিন্তু, দিলীপ ঘোষ সরে গেলে তার জায়গায় কে বসবেন? কে আবার সামনে থেকে দিলীপ ঘোষের মতো নেতৃত্ব দিতে পারবেন বঙ্গ বিজেপিকে? এই চিন্তায় বর্তমানে রয়েছে দিল্লি নেতারা। তাই আপাতত ঠিক করা হয়েছে দিলীপ ঘোষ কে সামনে রেখে সাংগঠনিক রদবদল করতে চলেছে রাজ্য বিজেপি।
কিছুদিন আগে যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের মন্ত্রিসভা রদবদল করছিলেন সেই সময় উঠে আসে দিলীপ ঘোষের প্রসঙ্গ। অনেকেই মনে করেন দিলীপ ঘোষকে কোন একটি মন্ত্রিত্ব পদ দেওয়া উচিত, কারণ তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী নভেম্বরে। তবে সেই জল্পনায় সম্পূর্ণরূপে জল ঢেলে দিয়ে বিজেপি কর্তৃপক্ষ দিলীপ ঘোষকে কোন মন্ত্রিত্ব দেয়নি। আর এই পরিস্থিতিতে যদি দিলীপ ঘোষের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায় তাহলে কি তিনি শুধুমাত্র একজন বিজেপি নেতা এবং সাংসদ হিসেবে থেকে যাবেন? প্রশ্ন উঠছে অনেকের মধ্যেই।
কিন্তু বিজেপি সূত্রে খবর আপাতত দিলীপ ঘোষকে সরানোর কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি ভারতীয় জনতা পার্টি। বঙ্গ বিজেপির মধ্যে রদবদল করা হবে, কিন্তু খবর অনুযায়ী, সেই রাত থাকবে সম্পূর্ণরূপে দিলীপ ঘোষের হাতেই। সোমবার কলকাতায় বৈঠকে বসছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। আর এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কিভাবে আগামী দিনে দল পরিচালিত হতে চলেছে। এই প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ নিজেও বলেছেন,’ আমাদের দলে অনেক নতুন লোক এসেছেন। আমরা বিরোধী দল হতে পেরেছি। এবারে আমাদের রদবদল করতে হতে পারে। পরিবর্তন সময় এর নিয়ম।’
যদিও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার সঙ্গে দিলীপ ঘোষের বৈঠকের সময় যখন এই সভাপতির বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছিল, তখন দিলীপ ঘোষ নিজেও একজনের নাম প্রস্তাব করেছেন তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে। সেই ব্যক্তিটি হলেন বালুরঘাটের সংসদ সুকান্ত মজুমদার। এমনিতে খুব একটা জনপ্রিয় না হলেও বিজেপির অন্দরমহলে দিলীপ ঘনিষ্ঠ হিসেবে তিনি পরিচিত। পাশাপাশি নিজের এলাকায় সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার। এহেন পরিস্থিতিতে দিলীপ ঘোষ এর বিকল্প কি তিনি হয়ে উঠতে পারবেন? কিংবা বঙ্গ বিজেপি-র অন্য কোনো নেতা কি দিলীপ ঘোষের জায়গা দখল করতে পারবেন? এ বছর নভেম্বর মাসে রাজ্য সভাপতির মেয়াদ শেষ হচ্ছে তার। দলের কার্যনীতি হিসেবে আর তিনি সভাপতি পদে থাকতে পারবেন না।
নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয় মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের সময় দিলীপ ঘোষ কোন মন্ত্রিত্ব পাননি। অনেকেই মনে করেছিলেন অন্তত দিলীপ ঘোষকে পুরস্কৃত করা উচিত ছিল প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির, কারণ বাংলায় বঙ্গ বিজেপির এই উন্নতির কিছুটা অংশীদার দিলীপ ঘোষ নিজেও। এরকম অবস্থায় যদি দিলীপ ঘোষকে নিয়ে কোনো বড় সিদ্ধান্ত না গ্রহণ করা হয় তাহলে দিলীপপন্থী এবং আরএসএস সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হতে পারেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। এই কারণেই রাজনৈতিক মহলের মতামত, শুধুমাত্র যে নেতৃত্তের মুখ হিসেবে সেটা কিন্তু নয়, বরং বিজেপির দিলীপ পন্থী এবং আরএসএস সমর্থকদের খুশি করার জন্যও আরো কিছুদিন দিলীপ কে সংগঠনের মুখ রেখে দিতে চাইছে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব।