জামাই বদল

Published By: Khabar India Online | Published On:

খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ

জামাই বদল

সুমনা বাগচী ✍  ( লেখিকা ) 

এক বছর হলো শিলাদিত‍্যবাবুর দুই মেয়ে দীপা আর রূপার বিয়ে হয়েছে।  দীপা আর রূপা শিলাদিত‍্য ব‍্যানার্জীর  দুই জমজ মেয়ে। বিয়েও হয়েছে রায়বাবুর দুই জমজ ছেলের সঙ্গে। এ বছর ওদের প্রথম জামাইষষ্ঠী। সকাল থেকেই রান্নাবান্না আর ঘরের কাজ নিয়ে ব‍্যস্ত শিলাদিত‍্যবাবুর স্ত্রী। মেয়েদের প্রথম জামাইষষ্ঠী বলে কথা। তাই সকাল সকাল মন্দিরে পুজো সেরে এসেছেন। দুই মেয়ে এসেছে দুই জমজ জামাই এর সঙ্গে। জমজ বোন নিয়ে যেমন শ্বশুর বাড়িতে বেশ অসুবিধায় পড়তে হয় রায়বাবু আর তার স্ত্রীকে। ঠিক তেমনই জমজ জামাই কে নিয়েও বেশ অসুবিধায় পড়তে হয় শিলাদিত‍্যবাবু ও তার স্ত্রীকে। এই যেমন জমজ দুই জামাই এর নাম হচ্ছে ভূবন আর স্বপন। যদি ভূবন কে ডাকেন ভূবন ই আসে কিন্তু বাড়ির সবাই মনে করে বুঝি স্বপন এলো।

শিলাদিত‍্যবাবুদের পাঁচ ভাই এর যৌথ পরিবার, সবাই একসাথে মিলেমিশে থাকেন। শিলাদিত‍্যবাবু পাঁচভাই এর মধ‍্যে সবচেয়ে ছোটো ভাই আর তাই তাদের মেয়েদের ও ভীষণ আদর, তার ওপর আজ আবার প্রথম জামাইষষ্টী। পাঁচ বৌ এ রন্নাঘরে সকাল থেকে ব‍্যস্ত। মাছের মাথা দিয়ে মুগের ডাল, ভাত, পোস্ত দিয়ে পাঁচতরকারি, এঁচোরের ডালনা, খাসির মাংস, ইলিশ মাছ ভাপা, আমের চাটনি, দই, মিষ্টি, পায়েস সহযোগে দুই জামাইকে খেতে দেবেন ব‍্যানার্জী পরিবারের গৃহিণীরা।  কিন্তু তার আগে করতে হবে জলখাবারের ব‍্যবস্থা। এখন সমস‍্যা হল বড়ো মেয়ে দীপার বর লুচির সঙ্গে মিষ্টান্ন পায়েস খায়না, তিনি লুচির সঙ্গে মুরগীর মাংস আলুর দম এসবই পছন্দ করেন। কিন্তু ছোটো মেয়ে রূপার বর স্বপন লুচির সঙ্গে রাবরি মিষ্টান্ন পায়েস এইসবই পছন্দ করেন, তার আবার মুরগী দেখলে মাথা গরম হয়ে যায়। যাইহোক, দুজনের জন‍্যেই ব‍্যানার্জী বাড়িতে আলাদা আলাদা  জলখাবারের ব‍্যবস্থা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন -  বনের পশুর সঙ্গে কিভাবে এক গ্রাম্য নারীর এত অসাধারণ মাতৃসমা সম্পর্ক

জলখাবার বিতরণ করার সময় রূপা আর দীপা গিয়েছে ষষ্ঠীতলায়, কতোদিন পর সবার সঙ্গে দেখা হবে বলে কথা। এইখানেই হয়েছে চরম বিপত্তি। বাড়ির ছোট্ট গিন্নী দুই জামাই  এর জন‍্য আলাদা আলাদা জলখাবার আর ঘরের ব‍্যবস্থা করলেও ভূবনের ঘরে দিয়েছেন লুচি পায়েস রাবরির থালা আর স্বপনের ঘরে দিয়েছেন মুরগীর মাংসের থালা। ব‍্যানার্জী গিন্নীরা তো থালা নামিয়েই বলতে শুরু করে দেন, আমরা অনেক কষ্ট করে রান্না করেছি বাবা তোমাকে কিন্তু সব খেতে হবে বলে দিলুম। ওদিকে ভূবন আর স্বপন থালায় নিজেদের অপছন্দের খাবারগুলো দেখে রেগে আগুন, “ধূর ধূর, ভাবলাম শ্বশুর বাড়িতে কোথায় কবজি ডুবিয়ে খাবো তা নয়তো যতো অপছন্দের খাবারগুলো দিয়েছে মুখের সামনে নামিয়ে, ধূর ধূর”। তবুও নতুন জামাই কী আর বলবে তাই কোনোরকমে একটু খেয়ে উঠে পড়ে। গিন্নীরা বুঝে উঠতে পারেনা ব‍্যাপারটা হলো কী, পছন্দের খাবার জামাইদের দেওয়া সত্ত্বেও তারা খেলোনা কেনো? তারমানে কী রান্না ভালো লাগেনি তাদের। একটু দুঃখ হলো বাড়ির ছোটো গিন্নীর। এই ঝড় আবার না তাদের মেয়ের ওপর পড়ে। ওদিকে নিজেদের অপছন্দের খাবার খেয়ে পেট না ভরায় রাগে গজগজ করতে লাগলেন দুই ভাই। তারা ঠিক করলেন দুপুরের খাবার যদি ঠিকঠাক না হয় তাহলে তারা দুপরে একটুও খাবেনা।

ফেসবুকে বন্ধুদের থালা সাজানো জামাইষষ্ঠীর ছবি দেখে দুই ভাই মনে মনে ভাবতে লাগলেন, আহা তারা কতোইনা ভালো আছে। এদিকে দুই জামাই এর স্নানের সময় হলো আর এক বিপত্তি। বড়ো ছেলে ভূবন ঠাণ্ডা তোলা জলে স্নান করেন, কারন তার অ‍্যাসিডিটির ধাত, অন‍্যদিকে স্বপনের আবার ঠাণ্ডা লাগার ধাত তাই তিনি আবার গরম জল মিশিয়ে স্নান করেন। ব‍্যানার্জী বাড়ির গিন্নীরা দুই জামাই এর জ‍ন‍্য আলাদা আলাদা স্নানের জায়গার ব‍্যবস্থা করলেও, ঠাণ্ডা জল দিয়েছেন স্বপনকে আর গরম জল দিয়েছেন ভূবনকে। বেচারা স্বপন ঠাণ্ডা জলে স্নান করে হেঁচে কেশে সারা আর ওদিকে ভূবন গরম জল দেখেই আর স্নানই করেননি। আর এতো গরমে স্নান না করে আর ও তেলেবেগুনে জ্বলে গেছেন। দুই ভাই এ ঠিক করলেন আর বেশীক্ষণ এই বাড়িতে নয় এরা ইচ্ছা করে আমাদের ফাঁদে ফেলার জন‍্য এসব করছে, দুপুরের খাবার খেয়েই বাড়ি রওনা দেবো।
যাইহোক, পেটে তো সকাল থেকে কিছু পড়েনি চোঁচা ডন মারছে ছুঁচোয়। তাই দুই ভাই এ দুপুরের আহারে বসলেন। বেশ ভালো করে দুপুরের আহার সেরে একটু মুডটা ফ্রেশ হয়েছে। যাক, অনন্তত দুপুরের খাবারটা ঠিকঠাক হয়েছে। বাড়ির গিন্নীরাও নিশ্চিন্ত,যাক জামাইদের অবশেষে খুশি করতে পেরেছেন।
কিন্তু দুপুরে হলো আর এক বিপত্তি। ছোটো বোন রূপা ভেবে দীপাকে সোহাগ করে জাপটে ধরে বসলেন ছোটো ভাই স্বপন, দেওরের ধরাই দীপা চিৎকার করে গোটা বাড়ি মাথায় তুললেন, ভূবন ও এই ব‍্যাপারটায় বেশ অস্বস্তিতে পড়লেন। সবকিছু সবাইমিলে মিটিয়ে নিয়ে ব‍্যানার্জী গিন্নীরা বললেন, বাবা তোমাদের তো খাওয়া হয়ে গিয়েছে যাও বরং একটু রেস্ট নিয়ে নাও, এই বলে দুই ভাইকে দুই বোনের ঘর, বাড়ির কোথায় কোথায় আছে বলে দিয়ে গিন্নীরা রান্নাঘরে বাড়ির অন‍্য সদস‍্যদের খাবার পরিবেশন করতে চলে গেলেন। এদিকে ঘর খুঁজতে গিয়ে দুই জামাই পড়লো ভীষণ ফাঁপরে । অনেক চেষ্টায় দুই ভাই দুই বোনের ঘর খুঁজে পেয়ে খাটে নিজেদের শরীর এলিয়ে দিলেন। কিন্তু তারা জানতেও পারলেননা তারা আসলে ঘর বদল করে ফেলেছেন।

আরও পড়ুন -  পার্থ ঘনিষ্ঠ একাধিক জেলার নেতারা, ইডির জালে ধরা পড়তে পারেন, লিস্ট তৈরি হচ্ছে

দুপুরে মেয়েমহলের খাওয়াদাওয়া গল্পগুজব শেষ হওয়ার পর রূপা নিজের ঘরে আসে, আর ভাসুর ভূবনকে নিজের বর স্বপন মনে করে, ওগো শুনছো বলে জাপটে ধরে। ঘুমের ঘরে শ্বশুর বাড়িতে পরস্ত্রীর জাপটানিতে ভূবন বাবাগো মাগো করে ওঠে, ওমনি চিৎকার চেঁচামেচিতে ব‍্যানার্জী পরিবার হুড়মুরিয়ে ঘরে ঢুকে দেখে ছোটো বোন রূপা ভাসুর ভূবনকে জাপটে ধরে আছে। নিজের বরকে বোনের সাথে এমন অবস্থায় দেখে দীপা তো হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে লাগে, আর রূপার বর স্বপন রূপাকে রাগে গজগজ করতে লাগে। রূপা সবটাই ভুলবশত হয়েছে বলায় অবশেষে সবাই বিশ্বাস করে।

আরও পড়ুন -  France: দ্বিতীয় দফা ভোট কাল, ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

সকাল থেকে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা শিলাদিত‍্যবাবু শোনার পর তিনি ঠিক করেন এর একটা বিহীত করতেই হবে নয়তো জমজ জামাই এর চক্করে পরে বারবার ই জামাই বদল হতেই থাকবে।
সন্ধ‍্যাবেলায় শিলাদিত‍্যবাবু বাড়ির সকল সদস‍্যকে নিয়ে চায়ের আড্ডায় মিটং বসান। সেই মিটিং এ ঘোষণা করেন বড় বোন দীপার গলায় তার বর ভুবনের ছবি দেওয়া একটা লকেট চেন রাখবেন আর ছোটো বোন রূপার গলায় স্বপনের ছবি দেওয়া একটি লকেট চেন রাখবেন এবং জমাইদের গলাতেও তাদের বৌদের ছবি দেওয়া চেন রাখতে হবে তিনি এটাও জানান।
শিলাদিত‍্যবাবুর কথা অনুযায়ী কাজ হয়। অবশেষে জামাই বদলের ঝামেলাও মিটে যায় ।