খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, ওয়েবডেস্কঃ বিভিন্ন ঋতুতে নানা রকম ফল পাওয়া যায়। আমরা এখানে কিছু ফলের কথা তুলে ধরলাম। বেল, এতে আছে প্রচুর শর্করা, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ লবণ। গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে বেলের শরবত নিমিষেই প্রাণ জুড়ায়। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যজনিত সমস্যা আছে তাদের জন্য বেলের শরবত খুবই উপকারী। আর আমাশয় সারাতেও বেল অনেক উপকারী। এই ফলের পাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে চোখের ছানি ও চোখ জ্বালা করা রোগের উপশম হয়। এতে থাকে প্রচুর শর্করা, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ লবণ।
আনারস, পাকা আনারস শক্তি বাড়ায়। কফ নিরাময়ে সহায়ক, পিত্তনাশক এবং হজম বৃদ্ধি করে। শাঁস ও পাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে কৃমি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আনারসে ক্যারোটিন, ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম আছে। পাকা ফল বল বৃদ্ধি করে। কাঁচা ফল গর্ভপাতকারী। পাকা ফলের রসে ব্রোমিলিন নামক এক জাতীয় জারক রস থাকে বলে এটি পরিপাক ক্রিয়ার সহায়ক হয় এবং এ রস জন্ডিস রোগে হিতকর। এক গবেষণায় দেখা গেছে আনারসের মধ্যে আছে এক ধরনের এ্যানজাইম, যা কাজ করে প্রদাহ নাশক হিসেবে। আছে প্রচুর ভিটামিন আর মিনারেল। সর্দি, কাশি ও গলাব্যথায় আনারস এক মোক্ষম অস্ত্র। জ্বরেরও খুব ভালো ওষুধ আনারস। আর আনারস হজমেও সাহায্য করে বৈকি। দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে আনারস। আনারস ক্ষুধাবর্ধক হিসেবে কাজ করে। তাই যে-কোনো অসুস্থতার পরে মুখে রুচির জন্য আনারস খেতে পারেন। ১০০ গ্রাম আনারসে পাওয়া যায় ৪৮ ক্যালরি। এতে কার্বোহাইড্রেট আছে ১২.৬৩ গ্রাম, ফ্যাট ০.১২ গ্রাম, প্রোটিন ০.৫৪ গ্রাম। আনারসে ভিটামিন-এর মধ্যে আছে বি, সি এবং মিনারেল-এর মধ্যে আছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও জিঙ্ক।
তরমুজ, গরমে ক্লান্তি দূর করতে এই ফলের তুলনা হয় না। ওই সময় তরমুজ তৃষ্ণা মেটায়। রক্তস্বল্পতা দূর করে। রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে লৌহ পদার্থ। ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং জিঙ্কের উৎকৃষ্ট উৎস। সকালে ব্রেকফাস্টের মেন্যুতে তরমুজ থাকলে তা স্নায়ু ও পেশির কাজে সাহায্য করার সঙ্গে সঙ্গে ওজন কমাতেও সাহায্য করে। এতে বাচ্চাদের চোখ এবং হাড় ভালো থাকে; বড়দের হার্টের সমস্যা দূর হয়। সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে বাঁচাতে তরমুজের জুড়ি নেই। তরমুজের বীজ খেলে অনিদ্রা দূর হয়, চুল ও ত্বক ভালো থাকে। ১০০ গ্রাম তরমুজ-এ পাওয়া যায় ৩০ ক্যালরি। এতে কার্বোহাইড্রেট আছে ৭.৫৫ গ্রাম, ফ্যাট ০.১৫ গ্রাম, প্রোটিন ০.৬১ গ্রাম। তরমুজে আছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও জিঙ্ক। উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম রক্তচাপ ও স্ট্রোক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে, কিডনিতে পাথর ও বার্ধক্যজনিত হাড় ক্ষয় রোধ করে। তরমুজের রস খেলে তাক্ষণিক ক্লান্তি দূর হয়। আমাদের দেশে দুই রঙের তরমুজ দেখা যায়। কালচে এবং সবুজ তরমুজ দেখা যায়। দুধরনের তরমুজেই পুষ্টিমান সমান। এর আয়রন ও ক্যারোটিন যথাক্রমে রক্তাস্বল্পতা ও রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। কোষ্ঠকাঠিন্য ভালোর জন্য তরমুজের রস উপকারী।
কলা, কলায় থাকে তিনটি প্রাকৃতিক চিনি—সুক্রোজ, ফ্রুক্টোজ এবং গ্লুকোজ। আরও থাকে প্রচুর ফাইবার যা শরীরকে যোগান দেয় তাৎক্ষণিক শক্তি। ৯০ মিনিটের কষ্টসাধ্য ব্যায়ামের জন্য শক্তি জোগাতে দুটো কলাই যথেষ্ট! এজন্যই পৃথিবীর বড় বড় এথলিটদের কাছে কলাই হলো এক নম্বর ফল। কলায় থাকে ট্রিপটোফ্যান নামক প্রোটিন, যা শরীরে গিয়ে সেরোটোনিনে রূপান্তরিত হয়। সেরোটোনিন আপনার মনকে রিলাক্স করে, আপনার মুড ভালো করে তোলে। কলায় থাকে প্রচুর আয়রন, যা রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে—যা এনিমিয়া রোগের জন্য অত্যন্ত সাহায্যকারী। কলায় প্রচুর পটাশিয়াম থাকে এবং এতে লবণ কম থাকে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি খুবই ভালো কম্বিনেশান। বলা হয়, স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্যেও কলা উপকারী। পটাশিয়ামের উপস্থিতি মস্তিষ্ককে দ্রুত শিখতে সাহায্য করে। স্মৃতিশক্তি ভালো করে তোলে। কলায় প্রচুর ফাইবার থাকে। পাকা কলা খেলে পায়খানা নরম হয়। আবার কাঁচাকলা খেলে ডায়রিয়ার সময় উপকার পাওয়া যায়। কলায় প্রাকৃতিক এন্টাসিড থাকে। বুক জ্বললে একটা কলা খান। সকাল ও দুপুরের মাঝে সকাল ১০টায় একটা কলা খেতে পারেন। আপনার রক্তে সুগার লেভেল ঠিক রাখবে এবং মাথা গোলানো থেমে যাবে। অনেকে মন খারাপ থাকলে/কাজের অতিরিক্ত চাপ থাকলে নিজের অজান্তেই জাংক ফুড খেতে থাকেন। এরকম চাপে থাকলে আমাদের ব্লাড সুগার লেভেল ঠিক রাখা প্রয়োজন, যা প্রতি দুই ঘণ্টায় একটি কলা খেলে ঠিক রাখা সম্ভব। কলা আলসারের জন্য উপকারী।
আপেল, দিনে একটি আপেল খেলে সুস্থ থাকা যায়। যারা অল্পে রেগে যায়, অনিদ্রায় ভোগে, তারা প্রতিদিন একটি লাল আপেল খোসাসহ খেলে সমস্যা চলে যাবে। শিশুর হজমশক্তি কমে গেলে লাল আপেল বেটে রস খাওয়ালে বদহজম ও হজমশক্তিহীনতা দূর হবে। আপেলে আছে শকর্রা, ভিটামিন, খনিজ লবণ, আঁশ, পেকটিন ও ম্যালিক এসিড। শর্করা প্রায় ৫০ শতাংশ। ভিটামিনের মধ্যে আছে ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-সি এবং এগুলোর উপস্থিতি আপেলের ছালে ও ছালের সঙ্গে লাগানো মাংসল অংশেই বেশি। আপেলের ছালে মাংসল অংশের চেয়ে প্রায় ৫ গুণ বেশি ভিটামিন-এ আছে। খনিজ লবণের মধ্যে আছে প্রচুর পটাশিয়াম, ফসফরাস ও লৌহ। সোডিয়ামের পরিমাণ খুবই সামান্য। আপেল ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে। আপেলের মধ্যে পেকটিন জাতীয় একটি উপাদান থাকে, যা শরীরকে কোলন ক্যানসার থেকে দূরে রাখে। ফুসফুসের ক্যানসার ও লিভার ক্যানসার প্রতিরোধেও আপেলের ভূমিকা আছে। আপেল কমায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও। আপেলের লৌহ রক্তশূন্যতায় উপকারী। আঁশ ক্ষতিকর কলেস্টেরল এলডিএল কমায়। হার্ট অ্যাটাক ও স্টোক প্রতিরোধ করে।