খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক শ্রীনগরে এক মেগা পর্যটন প্রসার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এই অনুষ্ঠানের মূল বিষয় ‘কাশ্মীরের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো : ভূস্বর্গে আরও একটি দিন’ এই পর্যটন কর্মসূচি শ্রীনগরে ১১-১৩ এপ্রিল পর্যন্ত আয়োজন করা হয়েছে। কেন্দ্রশাসিত জম্মু ও কাশ্মীরের উপ-রাজ্যপাল শ্রী মনোজ সিনহা ও কেন্দ্রীয় পর্যটন প্রতিমন্ত্রী শ্রী প্রহ্লাদ সিং প্যাটেল এর উদ্বোধন করে অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের উদ্দেশে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে ভাষণ দেন। শ্রীনগরে এই মেগা পর্যটন প্রসার কর্মসূচি যৌথভাবে আয়োজন করেছে জম্মু ও কাশ্মীরের পর্যটন দপ্তর, বণিকসভা ফিকি এবং ইন্ডিয়ান গলফ্ ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশন। কেন্দ্রশাসিত জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন পর্যটন পরিষেবাকে জনসমক্ষে তুলে ধরতে তথা এই অঞ্চলে পর্যটন প্রসার ঘটানোই এই কর্মসূচি আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য। অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় পর্যটন সচিব শ্রী অরবিন্দ সিং, জম্মু ও কাশ্মীরের পর্যটন সচিব মিঃ সারমদ হাফিজ, পর্যটন মন্ত্রকের অতিরিক্ত মহানির্দেশক শ্রীমতী রূপিন্দর ব্রার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এই উপলক্ষে শ্রী প্যাটেল বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরে পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে পর্যটন মন্ত্রক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। তিনি আরও বলেন, ২০২০-র জানুয়ারির তুলনায় ২০২১ সালের আলোচ্য মাসে জম্মু ও কাশ্মীরে পর্যটকের সংখ্যা ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই উদ্যোগ কেন্দ্রশাসিত জম্মু ও কাশ্মীরে পর্যটনের পুনরুজ্জীবনে সহায়ক হবে। সংবিধানের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর যাবতীয় প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে জম্মু ও কাশ্মীর পুনরায় পর্যটকদের আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, জম্মু ও কাশ্মীর পুরাতাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে সমৃদ্ধ।
উপ-রাজ্যপাল শ্রী মনোজ সিনহা বলেন, এ বছরের বাজেটে জম্মু ও কাশ্মীরে পর্যটন প্রসারে ৭৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ দেন। তিনি বলেন, এবারের বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ গতবারের তুলনায় ৫০৯ কোটি টাকা বেশি। জম্মু ও কাশ্মীরে পর্যটন শিল্পের পুনরুজ্জীবনে যাবতীয় প্রয়াস গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রী শ্রী প্যাটেলের প্রতিও শ্রী সিনহা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। জম্মু ও কাশ্মীরে পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে উল্লেখ করে শ্রী সিনহা বলেন, চলচ্চিত্র দৃশ্যায়নের জন্য অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে খুব শীঘ্রই একটি নীতি প্রণয়ন করা হবে। এর ফলে, চলচ্চিত্র দৃশ্যায়নের ক্ষেত্রে জম্মু ও কাশ্মীরের স্বর্ণযুগ ফিরে আসবে। আগত পর্যটকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পর্যটন প্রসারে এই মেগা কর্মসূচি সুদূরপ্রসারী ভূমিকা নেবে বলেও শ্রী সিনহা আশা প্রকাশ করেন।
শ্রী সিনহা আরও বলেন, পর্যটন ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটাতে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে – পর্যটন শিল্পের সুস্থায়ী উন্নয়ন, আতিথেয়তা ক্ষেত্রকে আরও শক্তিশালী করা, মানবসম্পদের যোগান, গলফ্-এর মানোন্নয়ন এবং স্থানীয় খাবার পর্যটকদের কাছে আরও জনপ্রিয় করে তোলা। কোভিড-১৯ মহামারীর কথা উল্লেখ করে পর্যটন সচিব শ্রী অরবিন্দ সিং বলেন, ‘গ্রহের ভূস্বর্গ’ হিসাবে পরিচিত কাশ্মীরে পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই, এই সম্ভাবনাকে পূর্ণসদ্ব্যবহার করতে হবে। সারা বিশ্বে বর্তমান মহামারী পরিস্থিতি প্রতিকূল প্রভাব ফেলেছে। এর প্রভাব পড়েছে মানুষের যাতায়াত ও পর্যটন ক্ষেত্রের ওপর। একইসঙ্গে, আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা, বিমানবন্দর এবং সীমান্ত এলাকা বন্ধ হয়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই পরিস্থিতি চলার দরুণ অর্থনীতি সর্বোপরি কাশ্মীরের পর্যটন শিল্প ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। তবে, সম্প্রতি পরিস্থিতিতে অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে। শ্রীনগরে এবার গত ডিসেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত রেকর্ড সংখ্যায় পর্যটক এসেছেন। এমনকি, বহু হোটেল আগামী জুন মাস পর্যন্ত বুক হয়ে রয়েছে। নিঃসন্দেহে এটা অত্যন্ত উৎসাহজনক। শ্রী সিং আরও জানান, পর্যটন মন্ত্রক স্বদেশ দর্শন ও প্রসাদ কর্মসূচির আওতায় জম্মু ও কাশ্মীরে পর্যটন পরিকাঠামোর মানোন্নয়নে একাধিক প্রকল্প খাতে ৫৬২ কোটি টাকারও বেশি মঞ্জুর করেছে। অধিকাংশ প্রকল্পই শেষ হওয়ার পথে। প্রকল্পগুলি পুরোদমে চালু হলে পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে পর্যটকরা নতুন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হবেন। বিশ্ব বিখ্যাত ডাল হ্রদে মন্ত্রক লেজার শো বা বর্ণালী আলোকছটা প্রদর্শের উদ্যোগ নিয়ে বলেও পর্যটন সচিব জানান।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনা, টেকনিক্যাল শো প্রদর্শনী প্রভৃতি আয়োজন করা হয়। সূত্র – পিআইবি।