খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ আত্মনির্ভর ভারত অভিযানে ইন্ডিয়া টয় ফেয়ার ২০২১ একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ : প্রধানমন্ত্রী
বাস্তুতন্ত্র এবং মনস্তত্বের জন্য খেলনা তৈরি করা ভালো : প্রধানমন্ত্রী
ভালো খেলনা তৈরি করার ঐতিহ্য, প্রযুক্তি, ধারণা ও দক্ষতা ভারতের রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইন্ডিয়া টয় ফেয়ার ২০২১এর উদ্বোধন করেছেন। সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক এবং অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ মন্ত্রী শ্রী নীতীন গড়করি এবং বস্ত্র মন্ত্রী শ্রীমতি স্মৃতি ইরানী এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। খেলনা মেলা ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দোসরা মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। ১ হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারী এই মেলায় যোগ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী কর্ণাটকের চান্নাপাটনা, উত্তরপ্রদেশের বারাণসী ও রাজস্থানের জয়পুরের খেলনা প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এই খেলনা মেলার মাধ্যমে সরকার ও এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এক জায়গায় সমবেত হয়েছেন। কিভাবে ভারতকে খেলনা প্রস্তুতকারক দেশ হিসেবে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক কেন্দ্রে পরিণত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা ছাড়াও খেলনা শিল্পে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং রপ্তানীতে উৎসাহ দেওয়ার জন্য কি কি করা যায় তা নিয়েও মতবিনিময় হবে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেছেন, ভারতের খেলনা শিল্পে সুপ্ত প্রতিভাকে বের করে আনতে হবে। আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল বিভিন্ন শিল্পের পরিচিতি তৈরি করা। তিনি বলেছেন, প্রথম খেলনা মেলা শুধুমাত্র একটি বাণিজ্যিক বা অর্থনৈতিক আয়োজনই নয় এর মাধ্যমে দেশে শতাব্দী প্রাচীন খেলাধূলা এবং বিনোদনের সংস্কৃতিকে দৃঢ় করে। এই খেলনা মেলা এমন একটি মঞ্চ যেখানে খেলনার নকশা, উদ্ভাবন, প্রযুক্তি, বাজারজাতকরণ এবং খেলনাকে প্যাকেজিং করা নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়াও অংশগ্রহণকারীরা এ সংক্রান্ত ক্ষেত্রে তাঁদের অভিজ্ঞতা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবেন। সিন্ধু সভ্যতা, মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পার সময় থেকে খেলনার বিষয়ে গবেষণা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী এই প্রসঙ্গে বলেছেন, প্রাচীন যুগে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা যখন ভারতে আসতেন তখন তারা ভারতের খেলাধূলা সম্বন্ধে জানতেন এবং তাদের দেশে মানুষকে তা জানাতেন। আজ দাবা বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত জনপ্রিয়। প্রাচীনকালে এই দাবা ‘চতুরঙ্গ অথবা চড়ুরঙ্গ’ হিসেবে পরিচিত ছিল। আজ যে লুডো আমার খেলি তা পাচিসি হিসেবে ভারতে খেলা হত। শৈশবে রামের অনেক খেলনা ছিল সেটি আমাদের পবিত্র গ্রন্থে উল্লেখ করা আছে । গোকুলে গোপাল কৃষ্ণ তার বাড়ির বাইরে বেলুনে চেপে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতেন। আমাদের প্রাচীন মন্দিরগুলির গায়ে খেলাধূলা, খেলনা এবং হস্তশিল্প খোদিত আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শিশুদের সার্বিক বিকাশে খেলনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতীয় জীবনযাত্রার অঙ্গ হল বিভিন্ন জিনিসের পুনর্ব্যবহার। আমাদের খেলনার মধ্যেও যার প্রতিফলন দেখা যায়। ভারতীয় খেলনা প্রাকৃতিক ও পরিবেশ বান্ধব উপকরণ থেকে তৈরি। যে রঙগুলি এই খেলনায় ব্যবহার করা হয় সেগুলি প্রাকৃতিক ও নিরাপদ। এই খেলনাগুলি আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে মানসিক যোগসূত্র তৈরি করে। ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গীর ওপর ভিত্তি করে সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ ঘটাতে খেলনা সাহায্য করে। দেশের খেলনা প্রস্তুতকারকদের কাছে তিনি আবেদন জানিয়ে বলেন, বাস্তুতন্ত্র ও মনস্তত্ত্ব উভয় ক্ষেত্রেরই সুবিধা হয় এমন ধরণের খেলনা তৈরি করতে। খেলনা বানানোর সময় প্লাস্টিক কম ব্যবহার করা এবং এমন কিছু উপাদান দিয়ে খেলনা তৈরি করার তিনি পরামর্শ দিয়েছেন যেগুলিকে আবারও ব্যবহার করা যাবে।
শ্রী মোদী বলেছেন, আজ বিশ্বজুড়ে সব ক্ষেত্রেই ভারতীয় ভাবনা ও ধারণা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ভারতীয় খেলাধূলা ও খেলনার বিশেষত্ত্ব হল এগুলির সঙ্গে জ্ঞান, বিজ্ঞান, বিনোদন ও মনস্তত্ত্ব জড়িত রয়েছে। ছোটরা যখন লাট্টু খেলে সেইসময় তারা মাধ্যাকর্ষণ এবং ভারসাম্য সম্পর্কে ধারণা পায়। আবার যখন গুলতি ছোঁড়ে তখন গতিশক্তির সক্ষমতা সম্পর্কে তাদের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়। কৌশলগত ভাবনাচিন্তা ও বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য পাজল টয় সাহায্য করে। একইভাবে নবজাতক যখন তার হাত ঘোরায় তার থেকে বৃত্তিয় চলনের ধারণা তৈরি হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শিশুদের মধ্যে সৃজনশীল খেলনা নতুন ভাবনা তৈরিতে সাহায্য করে, আর তার সাহায্যেই শিশুদের কল্পনার বিকাশ ঘটে। তাদের ভাবনার কোনও সীমাবদ্ধতা নেই। তারা একটি ছোট্ট খেলনার মাধ্যমেই নিজেদের কৌতূহল মেটাতে পারে এবং এর সাহায্যে সৃজনশীলতা গড়ে উঠে। প্রধানমন্ত্রী বাবা-মায়েদের শিশুদের সঙ্গে খেলার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ খেলনা নিয়ে খেললে শিশুদের বিভিন্ন বিষয় শেখার প্রক্রিয়াও শুরু হয়।বাবা-মা’দের খেলনার বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা জন্মাতে হবে কারণ শিশুদের বিকাশে খেলনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্কুলে খেলনার সাহায্যে শিশুদের শেখানো উচিত। এই কারণে সরকার নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতির মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং এই নীতিতে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।
নতুন শিক্ষানীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেছেন, এই নীতিতে খেলাধূলার মাধ্যমে এবং বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের সাহায্য পাঠদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এই শিক্ষা ব্যবস্থায় শিশুদের মধ্যে সৃজনশীলতা ও যুক্তিসঙ্গত উপায়ে ভাবনাচিন্তা করার ক্ষমতা যাতে তৈরি হয় সে বিষয়ে নজর রাখা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ভারতের ঐতিহ্য ও প্রযুক্তি আছে, যার সাহায্যে খেলনা তৈরি করা যায়। আমরা বিশ্বকে পরিবেশ বান্ধব খেলনা দিতে পারি। আমাদের সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা এমন কিছু গেম তৈরি করতে পারেন যা সারা বিশ্বের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। কিন্তু এতো কিছু সত্ত্বেও আজ আন্তর্জাতিক খেলনা বাজারে ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের কেনাবেচার মধ্যে ভারতের অংশ অত্যন্ত কম। এদেশে বিদেশ থেকে খেলনা আমদানি করা হয়। এই অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন।
শ্রী মোদী বলেছেন, দেশের ২৪টি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের মধ্যে খেলনা শিল্পকে যুক্ত করা হয়েছে। ন্যাশনাল টয় অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি হয়েছে যেখানে ১৫টি মন্ত্রক ও দপ্তরকে যুক্ত করা হয়েছে যাতে এই শিল্পগুলিকে প্রতিযোগিতামূলক করা যায় এবং দেশ খেলনা তৈরিতে আত্মনির্ভর হয়ে ওঠে, ভারতের খেলনা বিদেশে রপ্তানী হয়। এই অভিযানে রাজ্য সরকারগুলিকে টয় ক্লাস্টার তৈরির জন্য সমান অংশীদার হতে হবে। এই উদ্যোগের সাহায্যে খেলনা পর্যটনের সম্ভাবনাও শক্তিশালী হয়। খেলনা ভিত্তিক ভারতীয় খেলাধূলাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য টয়াথন ২০২১এর আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে ৭ হাজারের বেশি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যদি আজ মেক ইন ইন্ডিয়ার চাহিদা তৈরি হয় তাহলে হাতে তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীরও ভারতে যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। আজ মানুষ শুধুমাত্র পণ্য হিসেবে খেলনাকেই কেনে না, কি করে খেলনা তৈরি হয় সে বিষয়েও জানতে চায়। আর তাই আমরা হাতে তৈরি খেলনার বিষয়ে উৎসাহ দিচ্ছি। সূত্র – পিআইবি।