খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ করোনার টিকা একবার হাতে এলে প্রত্যেকেই এই টিকা পাবেন। কোনও ব্যক্তি-ই বাদ যাবেন না। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন দিল্লিতে এক সাক্ষাৎকারে এই আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন,
সকলেই একমত হবেন যে, করোনা ভাইরাস আমাদের কাছে অনেকাংশেই অজানা। অতীতে এরকম কখনও হয়নি। তাই, নতুন এই অজানা শত্রুর মোকাবিলায় আমাদেরকেও অভিনব পন্থা খুঁজে বের করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনা মোকাবিলায় তাঁর সরকার সঠিক সময়ে লকডাউন ও আনলকের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। মহামারীজনিত প্রভাব আগে থেকে অনুমান করে সরকার তৎপরতার সঙ্গে ধাপে ধাপে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তে রাজ্য সরকারগুলিকেও সামিল করা হয়েছে। তাদের মতামতকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এমনকি, আনলক পর্যায় শুরু করার সময়ও রাজ্যগুলির সঙ্গে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, একাধিক সমীক্ষা ও গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা মোকাবিলায় যে সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তার সাহায্যে ভাইরাস সংক্রমণ দ্রুত প্রতিহত করা গেছে। পক্ষান্তরে, বহু মানুষের প্রাণ রক্ষা সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাইরাসের প্রভাব এখনও দেশে রয়েছে। তাই, উদাসীনতা দেখানো কখনই সমীচীন নয়। তাঁর বিশ্বাস, ভাইরাস সংক্রমণের গতিতে যে মন্থরতা এসেছে, তাকে উদাসীনতা না দেখিয়ে বরং আমাদের প্রত্যয়, আমাদের আচরণ ও আমাদের ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করে তোলা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে তাঁর সরকারের মনোভাব স্পষ্ট করে শ্রী মোদী বলেন, সুদিনের প্রত্যাশা করা যেতেই পারে, কিন্তু সবসময়ে আমাদের দূরবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তাই, করোনাকে হাল্কাভাবে নেওয়ার কোনও কারণ নেই।
প্রধানমন্ত্রী
করোনা পরিস্থিতি ছাড়াও, অর্থনীতি, কৃষি, শ্রম ক্ষেত্র, সামাজিক সুরক্ষা, শিল্প, বিদেশি বিনিয়োগ, এমনকি বিরোধিদের সমালোচনার বিষয়েও তাঁর মতামত প্রকাশ করেছেন।
আত্মনির্ভর ভারত প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা ভবিষ্যতমুখী সভ্যতার অঙ্গ এবং একটি প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের প্রতীক। তাই, আত্মনির্ভর ভারত কেবল পারস্পরিক প্রতিযোগিতা নয়, বরং একে-অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠা। এটা কেবল কর্তৃত্ব নয়, বরং নির্ভরশীলতা। আত্মনির্ভর ভারত বিশ্বের কাছে এক বিশ্বস্ত বন্ধুও বটে।
তাই, আমরা যখন আত্মনির্ভর ভারতের কথা বলি, তখন আমরা এমন এক ভারতের প্রত্যাশা করি, যা সবদিক থেকে আত্মনির্ভর হয়ে উঠবে এবং সমগ্র বিশ্বের কাছে প্রকৃত বন্ধু হিসাবে আত্মবিশ্বাস যোগাবে।
দেশের অর্থনীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থ ব্যবস্থা প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুতগতিতে ছন্দে ফিরছে। তাঁর সরকার সম্প্রতি যে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, তা বিশ্বের কাছে ভারতকে নতুন বাজার হিসাবে তুলে ধরবে। তিনি মনে করেন বিনিয়োগ ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে জোর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি কারণ তা অগ্রগতির পক্ষে বড় সহায়ক হবে। নতুন ভারত যাতে লগ্নির গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য হয়ে ওঠে, সেজন্য সরকারের সংস্কার কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান ।
শ্রম ক্ষেত্রে সংস্কার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানান, আগের শ্রম আইনগুলিতে শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তার কোনও সংস্থান ছিল না। এমনকি, কোম্পানিগুলিও শ্রম আইনের বিভিন্ন জটিলতার দরুণ শ্রমিক নিয়োগ করতে সমস্যায় পড়তো। এর ফলে, কর্মসংস্থান ও উৎপাদন উভয় ক্ষেত্রই প্রভাবিত হ’ত। তাই, তাঁর সরকার এই বিষয়গুলিকে বিবেচনায় রেখে শ্রমিক শ্রেণীর কল্যাণে এবং শিল্প সংস্থার সহজে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে শ্রম আইনগুলিকে একত্রিত করে নতুন চারটি বিধি কার্যকর করেছে।
কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানান, গত ৬ বছরে সরকার ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধি সহ একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। কৃষি সেচ ব্যবস্থার উন্নতি সহ ফসল বিমা ব্যবস্থাকে আরও সুবিন্যস্ত করা হয়েছে। এমনকি, চাষীর আয় দ্বিগুণ বাড়াতে উপার্জনের ক্ষেত্রে সরাসরি সহযোগিতা করা হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, এই উদ্যোগগুলির ফলে কৃষি ক্ষেত্রের পাশাপাশি, গ্রামীণ অর্থ ব্যবস্থাতেও ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধীদের সমালোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের প্রাপ্য কৃতিত্বকে খাটো করে দেখার অপচেষ্টা চালাতে ভিত্তিহীন অভিযোগ নিয়ে আসছেন। সরকার যেভাবে করোনা সঙ্কটের মোকাবিলা করেছে, নিন্দুকেরা তা খাটো করতে গিয়ে আসলে সাধারণ মানুষের অদম্য লড়াইকে অবজ্ঞা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কোভিড সঙ্কটের সময় জনকল্যাণে তাঁর সরকার যে সমস্ত পদক্ষেপ নিয়েছে, তা খুব অল্প সময়েই সঙ্কটগ্রস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। তিনি বলেন, আগে ছোটখাটো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছতো না। দুর্নীতিও ছিল ভয়াবহ। কিন্তু, এ সত্ত্বেও সরকার খুব অল্প সময়ে বহু মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে পেরেছে। এমনকি, কোথাও কোনও অভিযোগ পর্যন্ত ওঠেনি।
সম্প্রতি সংসদে পাশ হওয়া কৃষি বিল নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কারের পক্ষে সওয়াল করে আসছিলেন। এখন বিরোধীরা সরকারের কৃতিত্বকে, সংকীর্ণ স্বার্থে স্বীকৃতি দিতে চাইছেন না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই বিল কৃষকদের কল্যাণে অত্যন্ত সহায়ক হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সূত্র – পিআইবি।