খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ ভারতীয় সেনাবাহিনীর শীর্ষ স্থানীয় সেনা আধিকারিকদের নিয়ে দ্বিবার্ষিক আর্মি কমান্ডার সম্মেলন শুরু হয়েছে। ২৬শে অক্টোবর থেকে এই সম্মেলন শুরু হয়েছে, চলবে ২৯শে অক্টোবর পর্যন্ত। এই সম্মেলনে ভারতীয় সেনাবাহিনীর শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিরা বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি, সীমান্তপারের পরিস্থিতি এবং সাম্প্রতিক সময়ে নানা দিক নিয়ে আলোচনা করছেন। এর পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা এবং প্রতিবন্ধকতার বিষয় নিয়েও আলোচনা চলছে। সাংগঠনিক পুনর্গঠন, সেনাবাহিনীর রসদ সরবরাহ, প্রশাসনিক ও মানব সম্পদ পরিচালন সম্পর্কিত বিষয়গুলির ওপরও আলোকপাত করা হচ্ছে। এই সম্মেলনের তৃতীয় দিনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিং ভারতীয় সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বদানকারী আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী দেশের অন্যতম সাহসী, বিশ্বস্ত অনুপ্রেরণাকারী সংস্থা হিসেবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভূমিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশের সীমান্তরক্ষা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী এক দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা পালন করে চলেছে। সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদেরকে যথাযথ সহায়তা প্রদান করারও আহ্বান জানান তিনি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা প্রশংসনীয়। তিনি জানান, ভারতীয় সেনাবাহিনীর মূল লক্ষ্যই হলো দেশের অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করা।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, দেশের মাতৃভূমি রক্ষায় কাশ্মীর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গালওয়ানে ভারতীয় সেনাবাহিনী যে বীর পরাক্রমের সঙ্গে আত্মোৎসর্গ করেছেন, তাঁর জন্য ওই সাহসী যোদ্ধাদের শ্রদ্ধাও জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, বিদেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সুস্থায়ী সহযোগিতামূলক সম্পর্ক তৈরি করে দেশের জাতীয় সুরক্ষার সার্থকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রতিরক্ষা কূটনীতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
তিনি দেশের উত্তর সীমান্তে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে জানান, যে সেনাবাহিনী দৃঢ়তার সঙ্গে উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি সঙ্কটের সমাধানে শান্তিপূর্ণ আলোচনা চালানোর জন্য তৈরি রয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়া ও পরিস্থিতির মধ্যেও দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় ভারতীয় সেনাবাহিনী সাহসীকতার পরিচয় দিয়েছে। এর জন্য এই বীর সেনানীদের সর্বোত্তম অস্ত্র, সরঞ্জাম ও পোশাক প্রদান করা হয়েছে। দুর্গম অঞ্চলগুলিতে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন (বিআরও) উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে।
দেশের সীমান্তে সন্ত্রাস মোকাবিলায় এবং যুদ্ধ বিরতি লঙ্ঘনের বিষয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী যথাযথ প্রত্যুত্তর দিয়েছে বলেও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জানিয়েছেন। শ্রী সিং বলেন, জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের মতো সমস্যা মোকাবিলায় সিএপিএফ এবং পুলিশবাহিনী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সমন্বয়সাধন করে কাজ চালানো হচ্ছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। উপত্যকায় এই সমন্বিত অভিযানের ফলে একদিকে যেমন সন্ত্রাসদমন সম্ভব হয়েছে, অন্যদিকে জম্মু-কাশ্মীরের সার্বিক বিকাশ ও উন্নয়ন হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) এবং ডিপার্টমেন্ট অফ্ মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স (ডিএমএ) গঠন ভারতের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। ইন্ট্রিগ্রেটেড ব্যাটল গ্রুপ, ইন্ট্রিগ্রেটেড থিয়েট্রি কমান্ডস্ এবং ইন্ট্রিগ্রেটেড এয়ার ডিফেন্স কমান্ডস্ গঠনের ধারণা ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর কাছে আগামী দিনের যে কোনো লড়াইয়ে গেম চেঞ্জার হয়ে উঠবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার সৈনিকদের কল্যাণে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা পূরণে বাজেটে কোনো খামতি রাখা হয়নি। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীতে মহিলাদের স্থায়ী কমিশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।
শ্রী রাজনাথ সিং জানান, দেশের অর্ডিনেন্স ফ্যাক্টরিগুলির দক্ষতা ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকার সংস্কার ও দক্ষতা বিকাশের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে আরও আধুনিক এবং সময়োপযোগী করে তুলতে বদ্ধ পরিকর বলেও তিনি জানিয়েছেন। সূত্র – পিআইবি।