খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ আমাদের এক নতুন মন্ত্র অনুসরণ করতে হবে – সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের ৭২ ঘন্টার মধ্যে খুঁজে বের করে নমুনা পরীক্ষা করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী
১০টি রাজ্য থেকে নিশ্চিতভাবে করোনায় আক্রান্তের হার ৮০ শতাংশ, ভাইরাসকে যদি আমরা এখানেই পরাজিত করতে পারি, তা হলে সমগ্র দেশ জয়ী হবে : প্রধানমন্ত্রী
মৃত্যু হার ১ শতাংশের নীচে নিয়ে আসার লক্ষ্য শীঘ্রই অর্জিত হবে : প্রধানমন্ত্রী
আলোচনায় এই প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয় যে, বিহার, গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও তেলেঙ্গানায় নমুনা পরীক্ষার হার আশু বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী
সংক্রমণ প্রতিরোধ, আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা অন্যান্য ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ এবং নজরদারিই হ’ল এই যুদ্ধে জয়লাভের সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার
দিল্লি ও পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে সাফল্যের সঙ্গে মহামারী মোকাবিলার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী
মুখ্যমন্ত্রীরা বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ও নমুনা পরীক্ষার হার বাড়ানোর কথা পুনরায় বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ কোভিড-১৯ সংক্রান্ত বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার জন্য ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১০টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই আলোচনায় অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাডু, পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, বিহার, গুজরাট, তেলেঙ্গানা ও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। অবশ্য, বৈঠকে কর্ণাটকের উপ-মুখ্যমন্ত্রী যোগ দেন।
টিম ইন্ডিয়ার মাধ্যমে টিমওয়ার্ক
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকে সহযোগিতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছেন এবং টিম ইন্ডিয়া একত্রে যে কাজ করেছে, তা প্রশংসনীয়। হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কর্মীরা যে সমস্ত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন, সে প্রসঙ্গও প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রায় ৮০ শতাংশ নিশ্চিতভাবে করোনায় আক্রান্ত রোগী আজকের বৈঠকে অংশ নেওয়া ১০টি রাজ্যের। তাই, এই ১০টি রাজ্যে যদি ভাইরাসকে পরাজিত করা যায়, তা হলে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমগ্র দেশ জয়ী হবে।
নমুনা পরীক্ষার হার বাড়িয়ে মৃত্যু হার কমিয়ে আনা
প্রধানমন্ত্রী দৈনিক প্রায় ৭ লক্ষ নমুনা পরীক্ষার কথা উল্লেখ করে বলেন, এই হার ক্রমশ বাড়ছে। এর ফলে, আক্রান্তদের চিহ্নিতকরণ ও সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। দেশে গড় মৃত্যু হার এখন অনেক কমে এসেছে এবং এই হার নিরন্তর কমছে। নিশ্চিতভাবে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি, সুস্থতার সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এই পদক্ষেপগুলি সাধারণ মানুষের বিশ্বাস বাড়িয়েছে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ম্রিত্যু হার ১ শতাংশের নীচে নিয়ে আসা শীঘ্রই অর্জন করা সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈঠক থেকে যে নির্যাস বেরিয়ে এসেছে, তা হল ঐ ১০টি রাজ্যে, বিশেষ করে বিহার, গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও তেলেঙ্গানাতে নমুনা পরীক্ষার হার দ্রুত বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। শ্রী মোদী বলেন, সংক্রমণ প্রতিরোধ, আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা অন্যান্যদের চিহ্নিতকরণ এবং নজরদারিই হ’ল এই যুদ্ধ জয়ের ক্ষেত্রে বড় হাতিয়ার। সাধারণ মানুষ এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন হয়েছেন এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ প্রয়াসগুলিতে যথাসম্ভব সাহায্য করছেন বলেও শ্রী মোদী অভিমত প্রকাশ করেন। এই প্রয়াসের ফলে আমরা হোম কোয়ারেন্টাইনের ব্যাপারে বিশেষ সাফল্য পেয়েছি। আরোগ্য সেতু অ্যাপের কার্যকরিতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী, প্রথম ৭২ ঘন্টার মধ্যেই আমরা যদি আক্রান্তদের চিহ্নিত করতে পারি, তা হলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ সম্ভব। এ ব্যাপারে তিনি আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের ৭২ ঘন্টার মধ্যেই খুঁজে বের করে তাঁদের নমুনা পরীক্ষার ওপর গুরুত্ব দেন। এই বিষয়টিকে একটি মন্ত্র হিসাবে অনুসরণ করতে হবে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একই সদিচ্ছা বজায় রেখে আমাদের সকলকে বারবার হাতধোওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, দু’গজ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
দিল্লি ও পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে রণকৌশল
দিল্লি ও পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে একত্রে মহামারী মোকাবিলায় ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সংক্রমণ প্রতিরোধ কৌশলের প্রধান স্তম্ভ ছিল সংক্রমিত এলাকাগুলি পৃথকীকরণ এবং এই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বিশেষ করে সেই সমস্ত ব্যক্তি, যাঁদের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বা ঝুঁকি বেশি রয়েছে। সংক্রমণ ঠেকানোর এই কৌশলের ফলে হাসপাতালগুলিতে রোগীদের ভিড় এড়িয়ে উপযুক্ত পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। একই সঙ্গে, আইসিইউ বেডের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীদের মতামত
আজকের বৈঠকে অংশ নেওয়া রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীরা নিজেদের রাজ্যে বর্তমান পরিস্থিতির কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানান। সফলভাবে মহামারী প্রতিরোধের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর দক্ষতার সঙ্গে নেতৃত্বদানের প্রশংসা করে মুখ্যমন্ত্রীরা তাঁর নিরন্তর আশ্বাস ও সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন। মুখ্যমন্ত্রীরা নমুনা পরীক্ষা চালু রাখা, পরীক্ষার হার বাড়াতে গৃহীত ব্যবস্থা, টেলিমেডিসিন পদ্ধতির প্রয়োগ এবং স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর মানোন্নয়নে গৃহীত প্রয়াসগুলির কথাও উল্লেখ করেন। রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে আরও দিশানির্দেশ দেওয়ার কথাও তাঁরা উল্লেখ করেন। মুখ্যমন্ত্রীরা দেশে একটি সুসংবদ্ধ চিকিৎসা পরিকাঠামো ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে প্রশংসা
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকার সর্বাত্মক প্রয়াস নিচ্ছে। সরকারের এই প্রয়াসের প্রশংসা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের সচিব দেশে কোভিড পরিস্থিতির সামগ্রিক বিবরণী পেশ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, কয়েকটি রাজ্যে আক্রান্তের হার জাতীয় গড়ের তুলনায় বেশি। এ ব্যাপারে তিনি নমুনা পরীক্ষা ব্যবস্থার সর্বাধিক সদ্ব্যবহারে রাজ্যগুলিকে আরও গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি আরও বলেন, মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা সরবরাহ করা, সেই সঙ্গে স্থানীয় মানুষের সহায়তায় সংক্রামিত এলাকাগুলিতে নজরদারি ব্যবস্থা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
এই বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী, স্বাস্থ্য মন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। সূত্র – পিআইবি।