খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ এই মন্দির পারস্পরিক ভালোবাসা ও সৌভ্রাতৃত্বের ভিত্তির ওপর গড়ে উঠবে : প্রধানমন্ত্রী
‘সবকা সাথ’ এবং ‘সবকা বিসওয়াস’ – এর মাধ্যমে আমাদের ‘সবকা বিসওয়াস’ অর্জন করা প্রয়োজন
রাম মন্দির আমাদের সংস্কৃতি, শ্বাশ্বত বিশ্বাস, জাতীয় চেতনা ও সমবেত ইচ্ছাশক্তির আধুনিক প্রতীক হয়ে উঠবে, যা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে : প্রধানমন্ত্রী
শ্রীরাম মন্দির নির্মাণ এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনবে : প্রধানমন্ত্রী
রাম মন্দির নির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যাঁরা নিরন্তর সংগ্রাম করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন
শ্রীরাম দেশে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের এক অভিন্ন যোগসূত্র : প্রধানমন্ত্রী
বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি মর্যাদার দাবি রাখে – দো গজ কি দূরী – মাস্ক হ্যায় জরুরি : প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ অযোধ্যায় শ্রীরাম জন্মভূমি মন্দিরে ভূমি পুজোয় অংশ নেন।
ভারতের কাছে এক গৌরবময় অধ্যায়
এই উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী পবিত্র এই মুহূর্তে দেশবাসী ও সারা বিশ্বের রামভক্তদের অভিনন্দন জানান। এই ঘটনাকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ভারতে আজ এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হচ্ছে। সারা দেশের মানুষ কয়েক শতাব্দী ধরে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, আজ তা পূরণ হওয়ার পথে। এদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন, যাঁদের আশ্চর্য লাগছে এই ভেবে যে, তাঁরা আজ জীবনের অন্যতম একটি স্মরণীয় মুহূর্তের সাক্ষী হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাম জন্মভূমি বারবার ভেঙে ফেলা ও গড়ে ওঠা থেকে আজ মুক্ত হ’ল। এবার এখানে ছাউনির পরিবর্তে রামালালার জন্য একটি চমৎকার মন্দির গড়ে তোলা হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সারা দেশের মানুষের কাছে ১৫ই অগাস্ট যেমন স্বাধীনতা সংগ্রামে বহু মানুষের আত্মবলিদানের প্রতীক, তেমনি আজকের দিনটিও রাম মন্দিরের জন্য কয়েক প্রজন্মের অদম্য নিষ্ঠা ও নিরন্তর সংগ্রামের উজ্জ্বল প্রতিফলন। রাম মন্দিরের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য যাঁরা সংগ্রাম করেছিলেন, তাঁদের প্রচেষ্টা আজ বাস্তবায়িত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী তাঁদের শ্রদ্ধা জানান।
শ্রীরাম – আমাদের সংস্কৃতির ভিত্তি
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রীরামের অস্তিত্ব মুছে ফেলার একাধিক প্রচেষ্টা হয়েছে। তথাপি, শ্রী রাম আমাদের সংস্কৃতির এক স্থায়ী ভিত্তি হয়ে রয়েছে। শ্রী মোদী বলেন, রাম মন্দির আমাদের সংস্কৃতি, শাশ্বত বিশ্বাস, জাতীয় চেতনা এবং সমবেত ইচ্ছাশক্তির একটি আধুনিক প্রতীক হয়ে উঠবে, যা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করবে। এই মন্দির নির্মাণের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে একাধিক সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি হবে, যা এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে পরিবর্তন নিয়ে আসবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের দিনটি কোটি কোটি ভক্তের কাছে আস্থা ও দৃঢ় বিশ্বাসের এক প্রামাণ্য সাক্ষ্য। গত বছর মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের রায় দানের পর সমগ্র দেশবাসী যেভাবে সংযম দেখিয়েছিলেন, তার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজও মানুষের মধ্যে আদালতের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন এবং সংযমের ছবি চোখে পড়ছে।
প্রধানমন্ত্রী দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া, দলিত, আদিবাসী সহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, শ্রীরামের চিরস্মরণীয় বিজয় কাহিনী, শ্রীকৃষ্ণের গোবর্ধন পাহাড়কে তুলে ধরা, ছত্রপতি শিবাজীর স্বরাজ প্রতিষ্ঠা, গান্ধীজীর নেতৃত্বে স্বাধীনতা আন্দোলন প্রভৃতি ঘটনাও সমান তাৎপর্যপূর্ণ। একইভাবে, রাম মন্দিরের নির্মাণ কাজও সাধারণ মানুষের সহায়তা ও অবদানের মাধ্যমে শুরু হয়েছে।
শ্রী রামের চারিত্রিক গুণবলীর কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রীরাম সর্বদাই সত্যের প্রতি অবিচল ছিলেন এবং তাঁর সাম্রাজ্যের অন্যতম ভিত্তি হিসাবে সামাজিক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন রেখেছিলেন। শ্রীরাম তাঁর প্রজাদের সমান ভালোবাসতেন। তথাপি, দরিদ্র ও দুস্থ মানুষের প্রতি ছিল তাঁর বিশেষ করুণা। জীবনের এমন কোনও দিক নেই, যেখানে শ্রীরাম অনুপ্রেরণার অনুঘটক হিসাবে সক্রিয় ভূমিকা নেননি। তাঁর চারিত্রিক গুণাবলীর প্রভাব দেশের সংস্কৃতি, দর্শন, আস্থা ও ঐতিহ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়।
শ্রীরাম – বৈচিত্র্যের মধ্যে একতার সংযোগসূত্র
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাল্মীকী রামায়ণ, তুলসীদাস, কবীর ও গুরুনানকের আদর্শ ও বাণীর মধ্য দিয়ে সুপ্রাচীন কাল থেকে মধ্যযুগীয় সময় পর্যন্ত মানুষের আলোর দিশারী হিসাবে আমাদের সমৃদ্ধ করেছেন। শ্রীরাম মহাত্মা গান্ধীর ভজনেও সমান প্রাসঙ্গিক, অহিংসা ও সত্যাগ্রহের উৎস হিসাবে সমান উল্লেখিত হয়েছেন। ভগবান বুদ্ধ শ্রীরামের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অযোধ্যা শহর কয়েক শতাব্দী ধরে জৈনদের কাছে আস্থার কেন্দ্র হয়ে রয়েছে। বিভিন্ন ভাষায় রচিত রামায়ণের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রীরাম দেশে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের এক অভিন্ন যোগসূত্র।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দশকের পর দশক ধরে শ্রীরাম পূজিত হয়ে আসছেন। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে রামায়ণের জনপ্রিয়তার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইরান ও চীনেও শ্রীরামের উল্লেখ পাওয়া যায়। এমনকি, বিশ্বের অন্য বহু দেশেও রামকথা অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই সমস্ত দেশের মানুষ আজ রাম মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ায় নিঃসন্দেহে খুশি হবেন।
সমগ্র মানবজাতির কাছে প্রেরণা
আগামী প্রজন্মের কাছেও এই মন্দির অনুপ্রেরণার উৎস হিসাবে কাজ করবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন । শ্রীরাম, রাম মন্দির এবং আমাদের শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যগুলির বার্তা সমগ্র বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেওয়া জরুরি। এই বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখেই, দেশে রাম সার্কিট গড়ে তোলা হচ্ছে।
রাম রাজ্য
মহাত্মা গান্ধী যে রাম রাজ্যের কল্পনা করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী আজ সেকথা স্মরণ করেন। এ প্রসঙ্গে শ্রী মোদী বলেন, শ্রীরামের শিক্ষা দেশকে পথ দেখাবে। শ্রীরামের শিক্ষাই ছিল, কোনও ব্যক্তি দরিদ্র ও অখুশি থাকবেন না; পুরুষ ও মহিলা উভয়েই সমান খুশি হবেন; কৃষক ও গবাদি পশুপালকরাও সর্বদাই খুশিতে থাকবেন; বয়স্ক, শিশু ও চিকিৎসকদের সর্বদাই মর্যাদা ও সুরক্ষা দিতে হবে; আশ্রয় প্রার্থীদের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের কর্তব্য; স্বভূমি স্বর্গের তুলনায় অনেক বড় এবং একটি দেশের ক্ষমতা যত বেশি থাকবে, সেই দেশে শান্তি বজায় রাখার ক্ষমতাও তত বেশি থাকবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শ্রীরাম আধুনিকতার পাশাপাশি, পরিবর্তনের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। শ্রীরামের আদর্শগুলি অনুসরণ করে আমাদের দেশ এগিয়ে চলেছে।
পারস্পরিক ভালোবাসা ও সৌভ্রাতৃত্বের ভিত্তি
প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, রাম মন্দির পারস্পরিক ভালোবাসা ও সৌভ্রাতৃত্বের ভিত্তির ওপর গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরও বলেন, সবকা সাথ সবকা বিকাশ – এর মাধ্যমে আমাদের সকলের বিশ্বাস অর্জন করতে হবে এবং এক আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তুলতে হবে। শ্রীরামের বাণীর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনও বিলম্ব ছাড়াই যাতে আমরা এগিয়ে যেতে পারি, তা আমাদেরকেই সুনিশ্চিত করতে হবে এবং এই বার্তা সমগ্র দেশকেও অনুসরণ করতে হবে।
কোভিড – এর সময় ‘মর্যাদা’
কোভিড পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে শ্রীরামের ‘মর্যাদা’র মন্ত্রের গুরুত্বের তাৎপর্য স্মরণ করে তাঁর ভাষণ শেষ করেন। শ্রী মোদী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি ‘দো গজ কি দূরী’ – ‘মাস্ক হ্যায় জরুরী’ – এই অভ্যাস বজায় রাখার কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী দু’গজ দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক ব্যবহার করার নীতি অনুসরণ করার জন্য সকলের প্রশংসা করেন। সূত্র – পিআইবি।