খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী শ্রী মুক্তার আব্বাস নাকভি আজ জানিয়েছেন সরকার ‘রাজনীতির ক্ষমতায়ণ, শোষণের রাজনীতি নয়’ ౼এই নীতি রূপায়ণে বদ্ধপরিকর। এই সরকারের সৎ এবং কার্যকরী নানা উদ্যোগের প্রতিফলন বিভিন্ন দৃঢ় ও বৃহৎ সংস্কার বাস্তবায়িত করা।
কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী শ্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ, কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু বিকাশ মন্ত্রী শ্রীমতি স্মৃতি ইরানীর সঙ্গে শ্রী নাকভি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলমান মহিলাদের কাছে “মুসলিম মহিলা অধিকার দিবস” উপলক্ষ্যে ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখছিলেন। সংখ্যালঘু কমিশনের ভাইস চেয়ারপার্সন শ্রী মঞ্জিত সিং রাই এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শ্রী নাকভি জানিয়েছেন, মুসলমান মহিলারা তিন তালাকের সামাজিক কুপ্রথা থেকে পয়লা আগস্ট মুক্তি পেয়েছিলেন। পয়লা আগস্ট তাই “মুসলিম মহিলা অধিকার দিবস” হিসেবে দেশে বিবেচিত হচ্ছে। ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রে এটি একটি গৌরবজ্জ্বল অধ্যায়।
শ্রী নাকভি বলেছেন, তিন তালাককে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করার আইন প্রণয়নের ফলে এই সামাজিক ব্যাধি দূর হয়েছে। দেশের মুসলমান মহিলাদের আত্মনির্ভরতা, আত্মসম্মান ও আত্মপ্রত্যয় গড়ে উঠেছে। তিন তালাকের মতো নিষ্ঠুর সামাজিক প্রথার অবসানের জন্য সরকার যে আইন এনেছিল তার মধ্য দিয়ে মুসলমান মহিলাদের লিঙ্গ বৈষম্য দূর হয়েছে এবং তাঁদের সাংবিধানিক, মৌলিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকার শক্তিশালী হয়েছে।
শ্রী নাকভি বলেছেন, তিন তালাক বা তালাক-এ-বিদ্দৎ ইসলামি আইনের পরিপন্থী। অথচ ভোটের কারবারিরা তিন তালাকের সামাজিক প্রথাকে রাজনৈতিক মদত দিয়ে এসেছিলেন।
মন্ত্রী বলেছেন, ১৯৮৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট যখন ঐতিহাসিক শাহবানু মামলায় রায় দিয়েছিলেন তখনই এই সামাজিক প্রথার অবসানে আইন পাশ করা যেত। সেই সময় লোকসভায় ৫৪৫ জন সাংসদের মধ্যে কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন ৪০০ জন। রাজ্যসভায় ২৪৫ জন সাংসদের মধ্যে ১৫৯ জন কংগ্রেস সদস্য ছিলেন। অথচ তদানিন্তন রাজীব গান্ধীর সরকার তাদের শক্তি ব্যবহার না করে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে তাৎপর্যহীনে পরিণত করে, যার ফলে মুসলমান মহিলারা তাঁদের সাংবিধানিক এবং মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হন।
শ্রী নাকভি জানিয়েছেন, বিশ্বে বহু মুসলিম প্রধান রাষ্ট্র তিন তালাককে বহু আগেই বেআইনী ও অ-ইসলামিক বলে ঘোষণা করেছিল। বিশ্বে মিশর-ই প্রথম ইসলামিক রাষ্ট্র যেখানে এই সামাজিক কুপ্রথা ১৯২৯ সালে বিলোপ করা হয়। ঐ একই বছর সুদানে, সিরিয়ায় ১৯৫৩, পাকিস্তানে ১৯৫৬, ইরাকে ১৯৫৯, মালয়েশিয়ায় ১৯৬৯ এবং বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে এই আইন বাতিল করা হয়। সাইপ্রাস, জর্ডন, আলজেরিয়া, ইরান, ব্রুনেই, মরক্কো, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহী বহু বছর আগেই এই সামাজিক প্রথাকে বিলোপ করেছিল। কিন্তু ভারতে মুসলমান মহিলারা এই নিষ্ঠুর সামাজিক প্রথা থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘ দশক ধরে আন্দোলন চালিয়েছেন।
মন্ত্রী আরও বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের রায়কে কার্যকর করার জন্য সরকার তিন তালাকের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন করেছে। এক বছর হল এই আইনটি পাশ হয়েছে, ইতিমধ্যে দেশে ৮২ শতাংশ তিন তালাকের ঘটনা হ্রাস পেয়েছে। এরকম কোন ঘটনা ঘটলেই আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় আইন ও বিচারমন্ত্রী শ্রী রবি শঙ্কর প্রসাদ প্রশ্ন তোলেন ভারতে তিন তালাকের বিরুদ্ধে আইন তৈরি করতে ৭০ বছর লেগে গেল কেন। তিনি এই আইনকে মহিলাদের অধিকার ও আত্মসম্মানের আইন বলে উল্লেখ করেছেন। মুসলমান মহিলাদের ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় স্বাক্ষর করে তোলার জন্য তিনি বিভিন্ন পরামর্শ নিয়ে কাজ করছেন বলেও জানিয়েছেন।
শ্রীমতী স্মৃতি ইরানী তাঁর বক্তব্যে জানান, তিন তালাক বিল পাশ হওয়ায় লক্ষ লক্ষ মুসলমান মহিলা বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে ‘সরকারের সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’ নীতির প্রতিফলন ঘটেছে।
নতুনদিল্লির উত্তম নগর ও বাটলা হাউস, উত্তরপ্রদেশের গ্রেটার নয়ডা, লখনৌ,ও বারানসী, রাজস্থানের জয়পুর, মহারাষ্ট্রের মুম্বাই, মধ্যপ্রদেশের ভোপাল, তামিলনাডুর কৃষ্ণগিরি, তেলেঙ্গনার হায়দ্রাবাদ সহ দেশের নানা জায়গার প্রায় ৫০হাজার মুসলমান মহিলা ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সূত্র – পিআইবি।