খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ অর্থমন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারমন অর্থ ও কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের সঙ্গে যুক্ত আত্মনির্ভর ভারত প্যাকেজের রূপায়ণের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছেন
ভারতে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী গত ১২ই মে ২০ লক্ষ কোটি টাকার এক বিশেষ আর্থিক ও সুসংবদ্ধ প্যাকেজের কথা ঘোষণা করেন। প্যাকেজের এই পরিমাণ ভারতের জিডিপি-র প্রায় ১০ শতাংশ। শ্রী মোদী এই প্যাকেজ ঘোষণা করে আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার জন্য আন্তরিক আহ্বান জানিয়েছিলেন। আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার জন্য তিনি পাঁচটি স্তম্ভের কথা উল্লেখ করেন। এগুলি হল – অর্থনীতি, পরিকাঠামো, সার্বিক ব্যবস্থা, প্রাণবন্ত জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য এবং চাহিদা।
প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় অর্থ ও কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারমন গত ১৩-১৭ই মে একগুচ্ছ সাংবাদিক সম্মেলনে আত্মনির্ভর প্যাকেজের বিস্তারিত খতিয়ান প্রকাশ করেন।
কেন্দ্রীয় অর্থ ও কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক অবিলম্বে আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের আওতায় ঘোষিত আর্থিক প্যাকেজ রূপায়ণের কাজ শুরু করে। অর্থমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে নিয়মিত এই প্যাকেজের রূপায়ণের ওপর পর্যালোচনা ও নজরদারি করেছেন। শ্রীমতী সীতারমনের সর্বশেষ পর্যালোচনা বৈঠকে এখনও পর্যন্ত নিম্নলিখিত অগ্রগতি হয়েছে :
১) ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত সরকারি সংগ্রহের বরাতের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানে অনুমতি দেওয়া হয়নি
স্থানীয় অতিক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলিকে বিশেষ আর্থিক সুবিধা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যয়বরাদ্দ সংক্রান্ত দপ্তর ২০১৭-এর জেনারেল ফিনানশিয়াল আইনের 161 (iv) ধারায় সংশোধন করেছে এবং আন্তর্জাতিক বরাত সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট আইনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনেছে। এখন থেকে ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোন আন্তর্জাতিক বরাত আহ্বান করা হবে না। তবে, ক্যাবিনেট সচিবালয়ের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই যে সমস্ত ক্ষেত্রে বরাতের আগাম অনুমতি দেওয়া হয়েছে তা অপরিবর্তিত থাকছে।
২) ঠিকাদারদের সুবিধাদান
অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, সমস্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রক ও সংস্থা যেমন রেল, সড়ক পরিবহণ ও জাতীয় মহাসড়ক এবং সিপিডব্লিউডির নির্মীয়মান প্রকল্প বা কর্মসূচিগুলির কাজ শেষ করতে ছয় মাস পর্যন্ত মেয়াদ বাড়াবে। এই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যয়বরাদ্দ মন্ত্রক কোভিড-১৯ মহামারীর বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মেয়াদের সময়সীমা তিন মাসের কম নয় এবং ছয় মাসের বেশি নয় বলে জানিয়েছে। অবশ্য, সময়সীমায় এই বৃদ্ধির ফলে ঠিকাদারদের অতিরিক্ত কোন খরচ বা জরিমানা আরোপ করা হবে না।
৩) রাজ্য সরকারগুলিকে সহায়তাদান
অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন কেন্দ্রীয় সরকার ২০২০-২১ সালে রাজ্যগুলির ঋণ গ্রহণ ক্ষমতা বর্তমান ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশের বিষয়টি মেনে নিয়েছে। তবে, বর্তমান অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতেই কেন্দ্রীয় সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঋণ গ্রহণ ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে রাজ্যগুলির অতিরিক্ত ৪ লক্ষ ২৮ হাজার কোটি টাকার সংস্থান হবে। লকডাউনের দরুণ রাজস্ব ক্ষতির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারগুলির বর্তমান দুরাবস্থা দূর করতে অর্থ সহায়তার অঙ্গ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যয়বরাদ্দ দপ্তরের পক্ষ থেকে সমস্ত রাজ্য সরকারকে এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে সমস্ত রাজ্য সরকার অতিরিক্ত ২ শতাংশ ঋণ গ্রহণ করতে পারবে।
৪) ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংস্থা সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য জামানতমুক্ত ৩ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা
ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা দিতে গত ২৯শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া ঋণের ওপর অতিরিক্ত কার্যকরী মূলধনের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ অর্থ সহায়তা মেয়াদি ঋণ হিসেবে সুবিধাজনক শর্তে দেওয়া হবে। যে সমস্ত ক্ষেত্রে ২৫ কোটি টাকা পর্যন্ত বকেয়া ঋণ রয়েছে এবং যে অ্যাকাউন্টগুলিতে লেনদেনের পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত, কেবল সে সমস্ত ক্ষেত্রেই সুদের ওপর এই আর্থিক ছাড় মিলবে। অবশ্য এই ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংস্থা সহ ব্যবসায়িক ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলিকে কোনরকম গ্যারান্টি বা জামানত রাখতে হবে না।
৫) ব্যাঙ্ক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ের আংশিক ঋণ নিশ্চয়তা কর্মসূচিতে ৪৫ হাজার কোটি টাকা
ব্যাঙ্ক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, হাউজিং ফিনান্স কর্পোরেশন এবং অন্যান্য অতিক্ষুদ্র অর্থ সহায়তা প্রতিষ্ঠানগুলিকে আংশিক ঋণ সহায়তা নিশ্চয়তা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং এই কর্মসূচিটিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে প্রথমবার সার্বভৌম গ্যারান্টি সংক্রান্ত আর্থিক ক্ষতির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ যোগাবে।
৬) নাবার্ডের মাধ্যমে কৃষকদের জন্য অতিরিক্ত ৩০ হাজার কোটি টাকার আপৎকালীন কার্যকরী মূলধন তহবিল
কোভিড-১৯-এর সময় গ্রামীণ আঞ্চলিক ব্যাঙ্ক এবং সমবায় ব্যাঙ্কগুলির জন্য নাবার্ডের মাধ্যমে ৩০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ পুনঃঅর্থ যোগান দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে, ৩ কোটি কৃষক, যাঁদের অধিকাংশই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি, তাঁরা কৃষিকাজের ক্ষেত্রে ঋণ চাহিদা মেটাতে পারবেন। ইতিমধ্যেই খরিফ শস্য বপনের সময় ৩০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ২৪,৮৭৬ কোটি টাকার বেশি অর্থ ঋণ হিসেবে প্রদান করা হয়েছে।
৭) টিডিএস / টিসিএস হার হ্রাসের মাধ্যমে ৫০ হাজার কোটি টাকার লিক্যুইডিটি
কেন্দ্রীয় রাজস্ব দপ্তর ২০২০-র ১৪ই মে থেকে ২০২১-এর ৩১শে মার্চ পর্যন্ত টিডিএস / টিসিএস হার কমানোর ব্যাপারে গত ১৩ই মে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে।
৮) অন্যান্য প্রত্যক্ষ কর সংক্রান্ত ব্যবস্থা
কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর পর্ষদ (সিবিডিটি) গত ৮ই এপ্রিল থেকে ৩০শে জুন পর্যন্ত ২০ লক্ষ ৪৪ হাজারেরও বেশি ক্ষেত্রে ৬২,৩৬১ কোটি টাকার বেশি রিফান্ড প্রদান করেছে। বাকি রিফান্ডের প্রক্রিয়া এখনও চলছে। এদিকে দপ্তরের পক্ষ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের আয়কর দাখিলের তারিখ বাড়িয়ে ৩১শে জুলাই থেকে ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত করেছে। পরবর্তীকালে এই সময়সীমা আরও বাড়িয়ে ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।
মন্ত্রকের পক্ষ থেকে ‘বিবাদ সে বিশ্বাস’ কর্মসূচির সময়সীমা বাড়িয়ে ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। এর ফলে, কোনরকম অতিরিক্ত মূল্য ছাড়াই বকেয়া কর মেটানো যাবে।
৯) ঋণ পরিশোধে অক্ষমতা ও দেউলিয়া বিধির বিভিন্ন সংস্থানের মাধ্যমে সহজে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা
কেন্দ্রীয় কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক ২০১৬-র ঋণ পরিশোধে অক্ষমতা ও দেউলিয়া বিধির ৪ নং ধারার আওতায় প্রদেয় ক্ষমতাবলে ডিফল্ট বা ঋণ পরিশোধে অক্ষমতার সর্বোচ্চ সীমা বাড়িয়ে ১ কোটি টাকা করেছে। এদিকে মন্ত্রকের পক্ষ থেকে দেউলিয়া ঋণ পরিশোধে অক্ষমতা বিধির ২৪০এ ধারার আওতায় একটি বিশেষ ঋণ পরিশোধে অক্ষমতা প্রস্তাব চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে কাজ করছে।
১০) ব্যাঙ্ক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান / হাউজিং ফিনান্স কর্পোরেশন / মাইক্রো ফিনান্স প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ লিক্যুইডিটি কর্মসূচি
মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ব্যাঙ্ক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান / হাউজিং ফিনান্স কর্পোরেশনের জন্য বিশেষ লিক্যুইডিটি স্কিম চালু করা হয়েছে। এদিকে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে গত ১ জুলাই ব্যাঙ্ক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং হাউজিং ফিনান্স কর্পোরেশনগুলির জন্য এক সার্কুলার জারি করা হয়েছে। এসবিআইসিএপি গত ৭ই জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৯,৮৭৫ কোটি টাকার ২৪টি আবেদনপত্র পেয়েছে। প্রাপ্ত আবেদনগুলির প্রথমটি ইতিমধ্যেই অনুমোদিত হয়েছে এবং বাকিগুলির অনুমতিদানের প্রক্রিয়া চলছে। সূত্র – পিআইবি।