শ্বাস নিতে হঠাৎ কষ্ট, বুকে চাপ—এসব কি শুধুই ফুসফুসের সমস্যা? সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, এর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে মনের গভীর অস্থিরতা। চিকিৎসাবিজ্ঞান এখন স্পষ্টভাবেই বুঝতে শুরু করেছে, মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে হাঁপানির সম্পর্ক আগের ধারণার চেয়েও অনেক বেশি গভীর।
ইউরোপীয় মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে যারা উদ্বেগ বা হতাশায় ভুগছেন, তাদের হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ শরীরের স্বাভাবিক স্ট্রেস-রেসপন্স ব্যবস্থাকে ব্যাহত করে।
উদ্বেগ বা বিষণ্ণতার সময় শরীরে কর্টিসলসহ বিভিন্ন স্ট্রেস হরমোন দীর্ঘদিন বেশি মাত্রায় থাকে। এর ফলে শ্বাসনালিগুলো অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে এবং সামান্য কারণেই সঙ্কুচিত হতে পারে। এখান থেকেই শুরু হয় হাঁপানির উপসর্গ।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র হলো প্রদাহ। গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক সমস্যার কারণে শরীরে সিস্টেমিক ইনফ্ল্যামেশন বাড়ে। এতে সাইটোকাইনের মাত্রা বেড়ে ফুসফুসের শ্বাসনালিতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, যা শ্বাস নিতে কষ্ট ও হাঁপানির তীব্রতা বাড়ায়।
মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব শুধু রোগ হওয়ার ঝুঁকিতেই সীমাবদ্ধ নয়। যারা হতাশা বা উদ্বেগে ভোগেন, তারা অনেক সময় নিয়মিত ওষুধ গ্রহণে অবহেলা করেন। ফলে হাঁপানির অ্যাটাক ঘন ঘন হতে পারে।
এ ছাড়া কম ঘুম, ধূমপান, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা বা অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস—এসব মানসিক চাপজনিত অভ্যাস হাঁপানির ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে।
গবেষণার আশাব্যঞ্জক দিক হলো, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হলে হাঁপানির উপসর্গও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। থেরাপি, মেডিটেশন, মাইন্ডফুলনেস ও নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এতে সহায়ক হতে পারে।
চিকিৎসকেরা তাই হাঁপানি চিকিৎসায় এখন শুধু ইনহেলার নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও সমান গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে বলা যায়, হাঁপানি অনেক সময় মনের সমস্যারই প্রতিফলন—এ কথা আর অস্বীকার করার উপায় নেই।
প্রশ্ন ও উত্তর
১. মানসিক চাপ কীভাবে হাঁপানি বাড়ায়?
দীর্ঘদিনের স্ট্রেস শ্বাসনালিকে সংবেদনশীল করে তোলে ও প্রদাহ বাড়ায়।
২. উদ্বেগ থাকলে হাঁপানির অ্যাটাক বেশি হয় কেন?
উদ্বেগে স্ট্রেস হরমোন বেড়ে শ্বাসনালি সঙ্কুচিত হয়।
৩. মানসিক চিকিৎসা নিলে হাঁপানি কমে?
অনেক ক্ষেত্রেই উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।
৪. মেডিটেশন কি সত্যিই উপকারি?
হ্যাঁ, এটি স্ট্রেস কমিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে।
৫. হাঁপানি রোগীদের কি মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি?
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত মূল্যায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

