খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ সমাজের সর্বস্তরের বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দকে নমস্কার! ভারতের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা। এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ইন্ডিয়া ইঙ্ক গ্রুপ-এর প্রশংসা করি। আজকের এই অনুষ্ঠান বিগত কয়েক বছর ধরে ইন্ডিয়া ইঙ্ক গ্রুপ যে অসাধারণ কাজ করেছে তার উজ্জ্বল প্রতিফলন। আপনাদের বিভিন্ন কর্মকান্ড ভারতে সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি করেছে, যা সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আপনারা ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে যোগসূত্রকে আরও নিবিড় করতে সাহায্য করেছেন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, এ বছরের অনুষ্ঠানটি অন্যান্য অংশীদারদের কাছেও সামিল হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। আশা করি, আগামী বছর আপনারা সেন্টার কোর্ট থেকেই এই অনুষ্ঠান আয়োজনের সুযোগ পাবেন এবং উইমবল্ডন উপভোগ করার সুযোগ পাবেন।
বন্ধুগণ,
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে পুনরুজ্জীবনের বিষয় নিয়ে কথা বলা অত্যন্ত স্বাভাবিক। বিশ্ব পুনরুজ্জীবন ও ভারতের মধ্যে যোগসূত্র নিয়ে আলোচনা করাও সমান প্রাসঙ্গিক। এরকম একটা বিশ্বাস রয়েছে যে, বিশ্ব পুনরুজ্জীবনের অগ্রগতিতে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমি এই বিষয়টির মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র সহ দুটি বিষয় দেখতে পাচ্ছি। প্রথমটি হ’ল – ভারতীয় মেধা। সারা বিশ্ব জুড়ে আপনারা ভারতীয় মেধাশক্তির অবদান লক্ষ্য করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন – ভারতীয় পেশাদার, চিকিৎসক, নার্স, ব্যাঙ্কার, আইনজীবী, বিজ্ঞানী, অধ্যাপক এবং আমাদের কঠোর পরিশ্রমী শ্রমজীবী মানুষেরা। ভারতীয় প্রযুক্তি শিল্প ও প্রযুক্তিবিদদের কথা কে ভুলতে পারেন? এরা দশকের পর দশক ধরে এগিয়ে চলার দিশা দেখিয়েছেন। ভারত মেধাশক্তির উৎস-স্থল। ভারত সর্বদাই অবদান রাখতে আগ্রহী, সর্বদাই অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী। তাই, এখানে সাযুজ্য ও সামঞ্জস্য রয়েছে, যা সকলের কাছেই অত্যন্ত লাভজনক।
বন্ধুগণ,
দ্বিতীয় বিষয়টি হ’ল, সংস্কার ও পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে ভারতের সক্ষমতা। ভারতীয়রা আক্ষরিক অর্থেই সংস্কারক! ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে, ভারত প্রতিটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে, তা সে সামাজিক বা অর্থনৈতিক যাই হোক না কেন। ভারত এই কাজ করেছে প্রাণশক্তি নিয়ে। এমনকি, সংস্কার ও পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে এই প্রাণশক্তির প্রবাহ আজও অব্যাহত রয়েছে।
বন্ধুগণ,
ভারত বিশ্ব মহামারীর বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই চালাছে। এই লড়াইয়ে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর যেমন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তেমনই আমরা আর্থিক স্বাস্থ্যের ওপর সমান অগ্রাধিকার দিচ্ছি। ভারত যখন পুনরুজ্জীবনের কথা বলে, তখন পুনরুজ্জীবনের সঙ্গে অনুভূতি ও আবেগ, করুণার মতো বিষয়গুলি যুক্ত থাকে। ভারত এমন পুনরুজ্জীবনের পক্ষে সওয়াল করে, যা হবে সুস্থায়ী – পরিবেশগত ও আর্থিক উভয় দিক থেকেই। ভারতে আমরা সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। এখানে মাতৃস্বরূপা প্রকৃতি প্রত্যেকের কাছেই পূজিত হন। ভারতে একথা বিশ্বাস করা হয় যে, এই গ্রহ আমাদের মায়ের মতো এবং আমরা তার সন্তানসন্ততি।
বন্ধুগণ,
ভারত গত ৬ বছরে সার্বিক আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ, আবাসন ও পরিকাঠামো নির্মাণ, সহজে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ, জিএসটি সহ কর ক্ষেত্রে সাহসী সংস্কার এবং বিশ্বের স্বাস্থ্য বিমা উদ্যোগ আয়ুষ্মান ভারত কর্মসূচি চালু করার ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি করেছে। এই সাফল্যগুলি ভবিষ্যৎ উন্নয়নমূলক উদ্যোগগুলির ভিত্তি সুনিশ্চিত করেছে।
বন্ধুগণ,
ভারতীয়দের মনে সাফল্য অর্জনের সেই প্রাণশক্তি রয়েছে, যা সচরাচর অসম্ভব বলে বিশ্বাস করা হয়। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই যে, ভারতে আমরা আর্থিক পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে আমরা ইতিমধ্যে গ্রিন-শুটস বা সহজে এগিয়ে চলার মসৃন পথ দেখতে পাচ্ছি। মহামারীর এই সময়ে আমরা নাগরিকদের ত্রাণ সাহায্য দিয়েছি। একই সঙ্গে, সুদূরপ্রসারী প্রভাবদায়ী কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা অর্থনীতিতে আরও বেশি উৎপাদনশীল বিনিয়োগ-বান্ধব ও প্রতিযোগিতাসম্পন্ন করে তুলেছি।
আমাদের ত্রাণ প্যাকেজগুলির মধ্যে বিচক্ষণতার পরিচয় রয়েছে এবং সবচেয়ে দরিদ্রদের সহায়তার জন্যই ত্রাণ প্যাকেজগুলিকে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। প্রযুক্তির আশীর্বাদে প্রতিটি টাকা সুফলভোগীদের কাছে সরাসরি পৌঁছে গেছে। এই ত্রাণ সহায়তার মধ্যে রয়েছে, বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস সরবরাহ, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা দেওয়া, লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য নিখরচায় খাদ্য সংস্থান প্রভৃতি। যখন আমরা লকডাউন থেকে আনলক পর্যায়ে প্রবেশ করেছি, তখন আমরা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সরকার-জনগণ অংশীদারিত্ব কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। উদ্দেশ্য লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষকে কর্মসংস্থানের সুবিধা দেওয়া। এই উদ্যোগ না কেবল গ্রামীণ অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনে সহায়ক হবে, সেই সঙ্গে গ্রামাঞ্চলে স্থায়ী পরিকাঠামো গড়ে তুলতেও বড় ভূমিকা নেবে।
বন্ধুগণ,
ভারত বিশ্বের অন্যতম উদার অর্থনীতির একটি। আমরা ভারতে বিশ্বের অগ্রণী সংস্থাগুলির জন্য লাল কার্পেট পেতে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় রয়েছি। খুব কম দেশই এ ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকে, যাদের মধ্যে ভারত একটি। ভারতে বিভিন্ন উদীয়মান ক্ষেত্রে অগণিত সুযোগ-সুবিধা ও বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে আমাদের সংস্কারমূলক উদ্যোগগুলি হিমঘর ও কৃষিজ পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে। আমরা লগ্নিকারীদের জন্য সরাসরি বিনিয়োগের দরজা খুলে দিয়েছি, যাতে আমাদের কৃষকদের কঠোর পরিশ্রম বিফলে না যায়।
বন্ধুগণ,
আমরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রেও একাধিক সংস্কার করেছি। বিকাশশীল ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্ষেত্র বৃহৎ শিল্প সংস্থাগুলির পরিপূরক। ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ নীতিতে উদারীকরণের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের অন্যতম সৈন্য বাহিনী এখানে এসে বিনিয়োগ এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনের জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। মহাকাশ ক্ষেত্রেও এখন বেসরকারি বিনিয়োগের অনেক সুযোগ-সুবিধা তৈরি হয়েছে। এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের উদ্দেশ্যই হ’ল মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে মহাকাশ প্রযুক্তির বাণিজ্যিক ব্যবহারে সুযোগ করে দেওয়া। ভারতের প্রযুক্তি ও স্টার্ট আপ ক্ষেত্র অত্যন্ত উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময়। ভারতে ডিজিটাল বিষয়ে অভিজ্ঞ লক্ষ লক্ষ মানুষের বাজার রয়েছে। এখানে উচ্চাকাঙ্খী মানুষ রয়েছেন। তাই, আপনারা কল্পনা করুন, এই শ্রেণীর মানুষের জন্য আপনারা কি ধরনের পণ্য উৎপাদন করতে পারেন।
বন্ধুগণ,
এই মহামারী আরও একবার দেখিয়ে দিয়েছে, ভারতের ওষুধ নির্মাণ শিল্প না কেবল ভারতের জন্য বরং সমগ্র বিশ্বের কাছেই বড় সম্পদ। ভারতের ওষুধ শিল্প উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ওষুধপত্রের দাম কম রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সারা বিশ্বে শিশুদের জন্য যে পরিমাণ টিকার প্রয়োজন হয়, তার দুই-তৃতীয়াংশই ভারত যোগান দিয়ে থাকে। আজও আমাদের সংস্থাগুলি কোভিড-১৯ টিকা উদ্ভাবন ও তার উৎপাদনের জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাগুলিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছে। আমি নিশ্চিত যে, কোভিড-১৯ টিকা উদ্ভাবনের পর তার উৎপাদনের ক্ষেত্রেও ভারত অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
বন্ধুগণ,
১৩০ কোটি ভারতীয় আত্মনির্ভর ভারত গঠনের আন্তরিক আহ্বান জানিয়েছেন। এই ভারত এক আত্মনির্ভর ভারত। আত্মনির্ভর ভারতে বিশ্ব সরবরাহ-শৃঙ্খলের সঙ্গে দেশীয় উৎপাদন ও ব্যবহারের বিষয়টিকেও সামিল করা হয়েছে। তাই, আত্মনির্ভর ভারত কোনোভাবেই আত্ম-কেন্দ্রিক বা নিজের গন্ডীতে সীমাবদ্ধ নয়। প্রকৃতপক্ষে আত্মনির্ভর ভারত হ’ল স্বনির্ভর হয়ে ওঠা ও নিজের চাহিদা নিজেদের দিক থেকেই মেটানোর এক পরিকল্পনা। অবশ্য, আমরা কর্মদক্ষতা, সমতা ও নমনীয়তার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতি গ্রহণের বিষয়গুলি জারি রাখবো।
বন্ধুগণ,
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আজকের এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গেই পন্ডিত রবিশঙ্করের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করা হচ্ছে। পন্ডিত রবিশঙ্কর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুরধ্বনিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছেন। আপনারা অবশ্যই লক্ষ্য করেছেন ‘নমস্কার’ কিভাবে শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসাবে সমগ্র বিশ্ব সাদরে গ্রহণ করেছে। মহামারীর সময়ে সারা বিশ্বে যোগচর্চা, আয়ুর্বেদ ও চিরাচরিত চিকিৎসা-পদ্ধতির ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে। ভারতের প্রাচীন সংস্কৃতি, ভারতের সর্বজনীনতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের আদর্শগুলিই আমাদের মূল শক্তি।
বন্ধুগণ,
বিশ্বের কল্যাণ ও সমৃদ্ধিতে তার কর্তব্যের প্রতি সবসময়ে প্রস্তুত রয়েছে। এই ভারত সংস্কারের ভারত, কার্যসম্পাদনের ভারত, রূপান্তরে আগ্রহী ভারত। এই ভারত এমন এক ভারত, যা আর্থিক ক্ষেত্রে নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধাকে সকলের নাগালে এনে দেয়। এই ভারত এমন এক ভারত, যা মানব-কেন্দ্রিক এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে সার্বিক পদক্ষেপগুলিকে সাদরে গ্রহণ করে।
ভারত আপনাদের সকলের অপেক্ষায় রয়েছে
নমস্কার,
আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। সূত্র – পিআইবি। ছবি – ফাইল।