খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডঃ হর্ষ বর্ধন আজ জাতীয় অঙ্গদান দিবস উপলক্ষে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানের পৌরোহিত্য করেছেন।
সিআরপিএফ জওয়ানদের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ডঃ বর্ধন ১৪ই আগস্ট থেকে এই আধা-সামরিক বাহিনীর একটি কর্মসূচির সমাপ্তি অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন। ১৪ই আগস্ট থেকে সিআরপিএফ অঙ্গদানের বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। বাহিনীর ৩ লক্ষ ৫০ হাজার জওয়ানের কাছে নতুন দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস এবং অর্গ্যান রিট্রিভাল ব্যাঙ্কিং অর্গানাইজেশনের সহযোগিতায় এই কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
মন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে সিআরপিএফ জওয়ানদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ৭৯,৫৭২ জন জওয়ান অঙ্গদান যোদ্ধা হিসেবে তাঁদের চোখ, ত্বক, ফুসফুস, হৃদপিণ্ড, যকৃৎ, প্যানক্রিয়াস, বৃক্ক বা কিডনি, হৃদপিণ্ডের ভালভ এবং অন্ত্র মৃত্যুর পর দান করার শপথ নিয়েছেন। মন্ত্রী এই বিষয়টি উল্লেখ করে বলেছেন, এইসব জওয়ানরা মৃত্যুর পরেও দেশের জন্য কাজ করে যাওয়ার এক অনন্য নজির তৈরি করেছেন।
ডঃ বর্ধন এ প্রসঙ্গে আরও বলেছেন, আমাদের দেশে বহু মানুষ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কাজ না করায় মারা যান। জাতীয় স্বাস্থ্য পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ৫ লক্ষ মানুষ অঙ্গ না পাওয়ায় মারা যান। তিনি আরো বলেছেন, বয়স, জাতি, ধর্ম, সম্প্রদায় কখনই অঙ্গদানের ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে না কারণ, এটি একটি পবিত্র কর্তব্য। যদি কারোর বয়স ১৮-র কম হয় এবং সে অঙ্গদানে উৎসাহী থাকে, তাহলে সে তার বাবা-মা অথবা অভিভাবকের অনুমতি সাপেক্ষে অঙ্গদান প্রক্রিয়ায় সামিল হতে পারে। অঙ্গদানের বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে আজ ওয়েবিনার, সম্মেলন, কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছিল।
ডঃ হর্ষ বর্ধন জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মোকাবিলায়, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে এবং মধ্য ভারতে উগ্র বামপন্থা মোকাবিলা এবং লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন যথাযথভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সিআরপিএফ-এর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন এবং বাহিনীর সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
ন্যাশনাল অর্গ্যান অ্যান্ড টিস্যু ট্রান্সপ্ল্যান্ট অর্গানাইজেশন (নোট্টো) ২০১১ সালের মানব অঙ্গ প্রতিস্থাপন সংশোধনী আইনে মৃত মানুষের অঙ্গদানের বিষয়ে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। একাদশ জাতীয় অঙ্গদান দিবসে এই উপলক্ষে অঙ্গ প্রতিস্থাপন এবং এ বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় স্তরে নোট্টো, আঞ্চলিক স্তরে রোট্টো এবং রাজ্যস্তরে সোট্টো-র মারফৎ বিভিন্ন হাসপাতাল ও টিস্যু ব্যাঙ্কে মৃত ব্যক্তির অঙ্গ সংগ্রহ করা হয় এবং সেগুলি যাঁদের প্রয়োজন তাঁদের কাছে পাঠানো হয়। ডঃ বর্ধন জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রক চণ্ডীগড়, কলকাতা, মুম্বাই, চেন্নাই ও গুয়াহাটিতে পাঁচটি রোট্টো গড়ে তুলেছে। এর মাধ্যমে উত্তর, পূর্ব, পশ্চিম, দক্ষিণ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে কাজ করা যাবে। এছাড়াও, কেরল, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, গোয়া, জম্মু-কাশ্মীর, হরিয়ানা, ওড়িশা, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পাঞ্জাব এবং ঝাড়খণ্ডে ১২টি সোট্টো গড়ে তোলা হয়েছে।
মন্ত্রী সম্ভাব্য দাতাদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, তাঁরা যেন তাঁদের পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবদের কাছে এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানান যাতে করে পুরো প্রক্রিয়াটি সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়। মন্ত্রী এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ২০১৯ সালে ১২,৬৬৬টি অঙ্গ প্রতিস্থাপন ভারতবর্ষে হয়েছে যা সারা বিশ্বের নিরিখে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল অবজারভেটরি অন ডোনেশন অ্যান্ড ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের ওয়েবসাইট থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। মন্ত্রী বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ভারতে মৃত ব্যক্তিদের থেকে অঙ্গ সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব দেখা গিয়েছে। তবে, এর মধ্যেও তামিলনাড়ুতে ৭৬টি ফুসফুস প্রতিস্থাপনের ঘটনা ঘটেছে। এক্ষেত্রে গ্রহীতারা বেশিরভাগই কোভিডের সমস্যায় ভুগছিলেন। সূত্র – পিআইবি।