কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় প্রস্তুতি ও গৃহীত ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী

Published By: Khabar India Online | Published On:

খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ কোভিড-১৯ টিকা সরবরাহ, বন্টন ও সুস্থ পরিচালনার বিভিন্ন পন্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে

কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রত্যেকের জীবন বাঁচানোর ওপর যেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তেমনই টিকা সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া সুনিশ্চিত করতে অগ্রাধিকার দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

মুখ্যমন্ত্রীরা নিজ নিজ রাজ্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের, বিশেষ করে ৮টি রাজ্যে কোভিড-১৯ মোকাবিলা ও প্রতিরোধে প্রস্তুতি ও গৃহীত ব্যবস্থা মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে খতিয়ে দেখেছেন। অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এই ৮টি রাজ্য হ’ল – হরিয়ানা, দিল্লি, ছত্তিশগড়, কেরল, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, গুজরাট ও পশ্চিমবঙ্গ। বৈঠকে কোভিড-১৯ টিকা সরবরাহ, বন্টন ও সুষ্ঠু পরিচালনার পন্থা-পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা হয়।

স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ক্ষেত্রের সম্প্রসারণ :

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমগ্র দেশ সমবেত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মহামারীর মোকাবিলা করেছে। ভারত সুস্থতা ও মৃত্যু হারের দিকে থেকে অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো জায়গায় রয়েছে। শ্রী মোদী নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা পরিষেবা ব্যবস্থার সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে জোর দিয়ে বলেন, অক্সিজেনের যোগান সুনিশ্চিত করতে পিএম কেয়ার্স তহবিলে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অক্সিজেন উৎপাদনের দিক থেকে মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপাতালগুলিকে আত্মনির্ভর করে তুলতে সবরকম প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই দেশে ১৬০টিরও বেশি অক্সিজেন উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন প্রক্রিয়া চলছে বলেও তিনি জানান।

সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়ার ৪টি পর্যায় :

মহামারীর ব্যাপারে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল, তা উপলব্ধি করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রতিক্রিয়াকে ৪টি স্তরে বিভক্ত করা যেতে পারে। প্রথমত : সাধারণ মানুষ যখন মহামারী পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়েছিলেন, তখন তাঁদের মানসিক অবস্থা কেমন ছিল। দ্বিতীয়ত : ভাইরাস সম্পর্কে সন্দেহগুলি কিভাবে মোকাবিলা করেছিলেন, যখন অধিকাংশ মানুষই লুকানোর চেষ্টা করেছিলেন যে, যদি তাঁরা এই ভাইরাসে সংক্রমিত হন। তৃতীয়ত : সাধারণ মানুষ যখন ভাইরাসের ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ হয়েছিলেন এবং এ ব্যাপারে নিজেদের সতর্কতা দেখিয়েছিলেন, তখন তাঁদের এই ভাইরাস সম্পর্কে গ্রহণযোগ্যতা কেমন ছিল। চতুর্থত : সুস্থতার হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের মনে ভাইরাসের কবল থেকে সুরক্ষার একটি ভুল ধারণা গড়ে উঠেছে, যা অবজ্ঞা ও উপেক্ষার ঘটনাগুলিকে আরও বাড়াতে পারে। প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, চতুর্থ পর্যায়ে ভাইরাসের কুপ্রভাব সম্পর্কে মানুষকে আরও বেশি সচেতন করে তোলা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, এক সময় যে দেশগুলিতে মহামারী সংক্রমণের ঘটনা হ্রাস পাচ্ছিল, এখন সেখানে সংক্রমণ পুনরায় ছড়িয়ে পড়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যগুলিকে আরও বেশি সতর্ক ও সজাগ থাকা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন -  শরবত বাদাম দিয়ে

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হোম আইসোলেশনে যাঁরা রয়েছেন, সেই সমস্ত রোগীদের স্বাস্থ্যের ওপর আরও বেশি নজর রাখার জন্য আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে, গ্রাম ও কম্যুনিটি স্তরে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিকেও কার্যপরিচালনার ক্ষেত্রে আরও বেশি দক্ষ করে তোলা প্রয়োজন। ভাইরাসের প্রভাব থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সচেতনতা অভিযানও চালিয়ে যেতে হবে বলে প্রধানমন্ত্রী অভিমত প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য হবে করোনাজনিত কারণে মৃত্যু হার ১ শতাংশের নীচে নিয়ে আসা।

আরও পড়ুন -  Aparajita Adhya: অপরাজিতা, সিরিয়াল শেষ হতেই গর্জে উঠলেন

সুষ্ঠু, সুপরিকল্পিত ও নিরবচ্ছিন্ন টিকাকরণ সুনিশ্চিত করা :

প্রধানমন্ত্রী পুনরায় আশ্বাস দিয়ে বলেন, সরকার টিকা উদ্ভাবনের সমস্ত প্রক্রিয়ায় তীক্ষ্ণ নজর রেখে চলেছে। সেই সঙ্গে, বিশ্ব নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ সহ অন্যান্য দেশের সরকার, বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির পাশাপাশি, ভারতীয় টিকা উদ্ভাবক সংস্থাগুলির সঙ্গেও নিরন্তর যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, সমস্ত প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক যাচাই প্রক্রিয়া পূরণ হওয়ার পরে সাধারণ মানুষের জন্য টিকা সুনিশ্চিত করা হবে।তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষের জীবন রক্ষায় যেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তেমনই প্রত্যেকের কাছে যাতে টিকা পৌঁছয়, তা সুনিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিকে প্রতিটি পর্যায়ে একযোগে কাজ করতে হবে, যাতে টিকাকরণ অভিযান সুষ্ঠুভাবে, সুপরিকল্পিত উপায়ে ও নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচালনা করা যায়।

প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, রাজ্যগুলির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে টিকাকরণের বিষয়টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনার সময় প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত কোল্ডচেন বা হিমঘরের ব্যাপারেও কথা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীরা যাতে নিয়মিতভাবে রাজ্যস্তরীয় স্টিয়ারিং কমিটি এবং রাজ্য ও জেলাস্তরীয় টাস্কফোর্সগুলির কাজকর্মের ওপর নজর রাখেন, তার জন্য প্রধানমন্ত্রী তাদের অনুরোধ জানিয়েছেন।

পূর্ব অভিজ্ঞতার ব্যাপারে আগাম সতর্ক করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড টিকা সম্পর্কে বিভিন্ন গুজব ও কুৎসা ছড়াতে পারে। এমনকি, টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও গুজব ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রেক্ষিতে তিনি যে কোনও অযাচিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যাপক সচেতনতা গড়ে তোলার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, এই কাজে নাগরিক সমাজ, এনসিসি এবং এনএসএস – এর ক্যাডেট বা স্বেচ্ছাসেবক ও গণমাধ্যমকে কাজে লাগানো যেতে পারে।

আরও পড়ুন -  Web Series: লজ্জার সীমা অতিক্রম এই ওয়েব সিরিজে, এই ভিডিও দেখলে শরীর ঘামবে

মুখ্যমন্ত্রীদের বক্তব্য :

বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ নেতৃত্বের প্রশংসা করে রাজ্যগুলিতে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারকে ধন্যবাদ দেন। মুখ্যমন্ত্রীরা নিজ নিজ রাজ্যের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ পেশ করেন। তাঁরা জানান, করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি, কোভিড পরবর্তী বিভিন্ন সমস্যা, নমুনা পরীক্ষার হার বাড়াতে গৃহীত উদ্যোগ, রাজ্য সীমান্ত এলাকায় নমুনা পরীক্ষার উদ্যোগ, বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা পরীক্ষা, জনসমাগম এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, কার্ফিউ বলবৎ সহ একাধিক প্রভৃতি পদক্ষেপ সম্পর্কে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। মুখ্যমন্ত্রীরা আরও জানান, সচেতনতা অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি, মাস্ক ব্যবহার বাড়াতেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। টিকাকরণ অভিযান সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীরা আলোচনা করেন এবং এ ব্যাপারে মতামত দেন।

বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব শ্রী রাজেশ ভূষণ বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় প্রস্তুতি সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ পেশ করেন। তিনি নমুনা পরীক্ষার হার বাড়ানো, ৭২ ঘন্টার মধ্যে আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে তাঁদের নমুনা পরীক্ষা, আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষার হার বাড়ানো, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ক্ষেত্রে উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সহ রাজ্যগুলির কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সংশোধন ও পরিমার্জনের বিষয়ের আলোচনা করেন। নীতি আয়োগের সদস্য ডঃ ভি কে পল কোভিড টিকার বন্টন, সরবরাহ ও সুষ্ঠু পরিচালনা নিয়ে বিবরণ পেশ করেন। সূত্র – পিআইবি।