খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে ভারত সাফল্যের আরও একটি মাইলফলক অর্জন করেছে। দেশে ৫০ হাজারের বেশি (৫০,০২৫) আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য ও রোগীকল্যাণ কেন্দ্র চালু হয়েছে। এ ধরনের স্বাস্থ্য ও রোগীকল্যাণ কেন্দ্র চালু করার উদ্দেশ্যই হল সুসংহত প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা সাধারণ মানুষের বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। ২০২২-এর ডিসেম্বর নাগাদ আরও ১ লক্ষ ৫০ হাজার এ ধরনের রোগীকল্যাণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। ৫০ হাজারের বেশি রোগীকল্যাণ কেন্দ্র চালু হওয়ায় ধার্য লক্ষ্যমাত্রার এক-তৃতীয়াংশ পূরণ হল। এই স্বাস্থ্য ও রোগীকল্যাণ কেন্দ্রগুলি চালু হওয়ার ফলে দেশের ২৫ কোটির বেশি মানুষের কাছে সুলভে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।
কোভিড-১৯ মহামারীজনিত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও স্বাস্থ্য ও রোগীকল্যাণ কেন্দ্রগুলি চালু করার ক্ষেত্রে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডঃ হর্ষ বর্ধন। কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি, রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সর্বস্তরে যৌথ প্রচেষ্টার ফলে এই রোগীকল্যাণ কেন্দ্রগুলি চালু করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে, স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের আরও কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে বলে ডঃ হর্ষ বর্ধন অভিমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ও রোগীকল্যাণ কেন্দ্রগুলির সঙ্গে যুক্ত সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মী বিশেষ করে, আশাকর্মীরা কোভিড-১৯-এর সময় দৃষ্টান্তমূলক অবদান রেখেছেন। এই আশাকর্মীরা কোভিড-১৯ ভীতি সত্ত্বেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্রগুলির পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোভিড-বহির্ভূত বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরিষেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। এতে বিশেষ করে লাভবান হয়েছেন সদ্যজাত, বয়স্ক ও প্রবীণ ব্যক্তিরা।
উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০১৮ সালে আয়ুষ্মান ভারত কর্মসূচির সূচনা হয়। এই কর্মসূচির দুটি স্তম্ভ রয়েছে। এগুলি হল – স্বাস্থ্য ও রোগীকল্যাণ কেন্দ্র এবং প্রধানমন্ত্রী জন-আরোগ্য যোজনা। দেশের প্রথম আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য ও রোগীকল্যাণ কেন্দ্রের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৮-র ১৪ এপ্রিল। ছত্তিশগড়ের বিজাপুর জেলায় ঝাংলাতে এই কেন্দ্রটির সূচনা হয়।
স্বাস্থ্য ও রোগীকল্যাণ কেন্দ্রগুলি স্থানীয় মানুষকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পরিবার পরিকল্পনা ও পরিকল্পিত উপায়ে গর্ভধারণ, মাতৃত্বকালীন সুযোগ-সুবিধা, সদ্যজাতদের স্বাস্থ্য পরিষেবা, বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলে-মেয়েদের পুষ্টি পরিষেবা প্রভৃতি। এছাড়াও, এ ধরনের কেন্দ্রগুলি থেকে জটিল এবং অসংক্রামক রোগ-ব্যাধির প্রতিরোধেও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা হয়। সুস্থ জীবনযাপনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টির গুরুত্ব সহ যোগচর্চার মতো দৈনিক শরীরচর্চার ব্যাপারেও এই কেন্দ্রগুলি থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রতিটি স্বাস্থ্য ও রোগীকল্যাণ কেন্দ্রে একজন প্রশিক্ষিত কমিউনিটি স্বাস্থ্য আধিকারিক সহ এক বা দু’জন স্বাস্থ্যকর্মী এবং পাঁচ থেকে আটজন আশাকর্মী থাকেন। এঁরা সকলে মিলে গ্রামে গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেন।
আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য ও রোগীকল্যাণ কেন্দ্র ৬৭৮টি জেলাতেই চালু হয়েছে। এছাড়াও এই জেলাগুলিতে ২৭,৮৯০টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ১৮,৫৩৬টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৩,৫৯৯টি শহরাঞ্চল প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। স্বাস্থ্য ও রোগীকল্যাণ কেন্দ্রের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার দরুণ ২৮ কোটি ১০ লক্ষের বেশি মানুষ লাভবান হয়েছেন যার মধ্যে ৫৩ শতাংশের বেশি মহিলা। এমনকি, ১ কোটির বেশি মানুষকে বিনামূল্যে উচ্চ রক্তচাপজনিত ওষুধ ও পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের পাশাপাশি, স্বাস্থ্য ও রোগীকল্যাণ কেন্দ্রগুলি থেকে ৩০ লক্ষের বেশি স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ই-সঞ্জীবনী প্ল্যাটফর্মের রূপায়ণে এই কেন্দ্রগুলি বড় ভূমিকা নিয়েছে। ই-সঞ্জীবনী প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কোভিড-১৯ সময়ে রোগীর সঙ্গে চিকিৎসকদের সরাসরি যোগাযোগ করে দেওয়া হয়েছে যাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উপস্থিত না হয়েই চিকিৎসকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ পাওয়া যায়।
২০২০-র ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত রাজ্যভিত্তিক চালু আয়ুষ্মান ভারত – স্বাস্থ্য ও রোগীকল্যাণ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান নিম্নরূপ :
ক্রমিক সংখ্যা
রাজ্য
১৮/১১/২০২০ পর্যন্ত আয়ুষ্মান ভারত – স্বাস্থ্য ও রোগীকল্যাণ কেন্দ্র
উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র
প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র
শহরাঞ্চলীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র
মোট
১
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ
58
17
5
80
২
অন্ধ্রপ্রদেশ
1122
1145
241
2508
৩
অরুণাল প্রদেশ
91
38
4
133
৪
আসাম
878
379
52
1309
৫
বিহার
207
877
98
1182
৬
চণ্ডীগড়
33
2
35
৭
ছত্তিশগড়
1450
402
45
1897
৮
দাদরা ও নগর হাভেলি
52
8
0
60
৯
দমন ও দিউ
26
4
0
30
১০
দিল্লি
এই কর্মসূচি রূপায়িত হচ্ছে না
১১
গোয়া
9
54
5
68
১২
গুজরাট
3523
1108
222
4853
১৩
হরিয়ানা
159
364
100
623
১৪
হিমাচল প্রদেশ
275
422
6
703
১৫
জম্মু ও কাশ্মীর
505
305
16
826
১৬
ঝাড়খণ্ড
852
132
52
1036
১৭
কর্ণাটক
1572
1896
336
3804
১৮
কেরল
0
733
83
816
১৯
লাদাখ
0
0
0
0
২০
লাক্ষাদ্বীপ
0
3
0
3
২১
মধ্যপ্রদেশ
3026
1128
130
4284
২২
মহারাষ্ট্র
4117
1825
439
6381
২৩
মণিপুর
111
39
1
151
২৪
মেঘালয়
70
34
19
123
২৫
মিজোরাম
44
54
8
106
২৬
নাগাল্যান্ড
101
47
7
155
২৭
ওড়িশা
304
1225
86
1615
২৮
পুদুচেরী
77
37
2
116
২৯
পাঞ্জাব
1607
346
93
2046
৩০
রাজস্থান
131
1859
116
2106
৩১
সিকিম
43
13
0
56
৩২
তামিলনাড়ু
858
1371
453
2682
৩৩
তেলেঙ্গানা
274
624
221
1119
৩৪
ত্রিপুরা
266
32
5
303
৩৫
উত্তরপ্রদেশ
3509
1468
391
5368
৩৬
উত্তরাখণ্ড
262
246
36
544
৩৭
পশ্চিমবঙ্গ
2311
268
325
2904
মোট
27890
18536
3599
50025
সূত্র – পিআইবি।