কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায়। যিনি বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকতে-আঁকতে একদিন ভারতীয় ফিল্মের ললাটলিখনও এঁকে ফেললেন। ভারতীয় ছবির প্রথম পুরুষ। যার ‘পথের পাঁচালী’, ‘অপরাজিত’, ‘অপুর সংসার’, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’, ‘অভিযান’ এবং ‘চারুলতা’ ইত্যাদির মাধ্যমে নতুন করে ভারতীয় ছবির জন্ম সম্ভব করে তোলা সত্যজিৎ।
তিনি আক্ষরিক অর্থেই আমাদের সবার কাছে ‘মানিক’।
View this post on Instagram
আজ সত্যজিৎ রায়ের ১০২তম জন্মবার্ষিকী। তার সঙ্গে কাটানো কিছু মুহূর্তের স্মৃতিচারণ করলেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। উঠে এল অনেক অজানা গল্প।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানেই তাকে বলতে শোনা যায়, ‘এই মহান মানুষটিকে নিয়ে কথা বলার যোগ্যতা আমার নেই। আমার শ্রদ্ধা আমার প্রণাম। একটা ছোট্ট ঘটনা আমি বলতে চাই, সেটা ভীষণ ব্যক্তিগত। যে বাড়িটায় ঢুকতে প্রচুর মানুষ ভয় পায়, ঠিক সেভাবেই ভয় পেয়ে আমিও গিয়েছিলাম সেখানে আমার বোনের বিয়ের একটা কার্ড দিতে। তখন আমার ১৬ কি ১৭ বছর বয়স। আমি বেল মারলাম। দরজাটা খুললেন মানিক জ্যেঠু, মানে অবশ্যই আমাদের শ্রদ্ধেয় সত্যজিৎবাবু। আমি ভেবেছিলাম, কার্ডটা মানিক জ্যেঠু দরজা থেকেই নিয়ে নেবেন। আমার বোনের বিয়ে, আমি নেমতন্ন করলাম, তারপরেই আমি বেরিয়ে আসব। উনি আমায় ভিতরে নিয়ে গেলেন, জল খাওয়ালেন, কথা বললেন। এবং সেই কথাগুলো সিনেমা সংক্রান্ত নয়। একেবারে ব্যক্তিগত কথা। মা কেমন আছেন বোন কেমন আছেন, কী হচ্ছে। পরে, আজ যখন সেই ঘটনার কথা মনে করি, তখন বুঝতে পারি কেন তিনি অন্যতম সেরা একজন পরিচালক। উনি বোধহয় আমার মনের অবস্থাটা বুঝতে চেয়েছিলেন। একটা ১৭ বছরের ছেলে একা এসে তার বোনের বিয়ের নিমন্ত্রণ পত্র দিচ্ছে। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে, ওই সময়টুকু আমার কাছে একটা বিশাল অনুপ্রেরণা ছিল। আসলে এরা এত বড় মাপের মানুষ, এত বড় মাপের পরিচালক এইজন্যেই। তার ভিতরটা বুঝতে পারা ছিল অস্ভব। তখন বুঝিনি। তখন এটা আমার কাছে উত্তেজনা। পরবর্তীকালে বুঝেছিলাম, মানুষটা ওইটুকু সময় যে আমায় দিলেন, পনের, কুড়ি মিনিট। সেটা যেন আসলে আমাকে কোথাও একটা অদ্ভূত শক্তি জোগালেন। আপনাকে আমার প্রণাম, শ্রদ্ধা…. সবসময়।’
এই ভিডিওর সঙ্গে তিনি একটি ক্যাপশন যোগ করেন। সেখানে বুম্বাদা লেখেন ‘মানিক জেঠু আমাদের মনে চির-উজ্জ্বল। উজ্জ্বল তার সৃষ্টি ও স্মৃতি। ২রা মে সত্যজিৎ রায়ের জন্মবার্ষিকী। কিছু বিশেষ স্মৃতি আজ ভাগ করে নিলাম আপনাদের সঙ্গে।’
তারপর পোস্টে কমেন্টের বন্য। কেউ লিখেছেন, ‘এমন একটি মানুষকে পেয়ে আমরা ধন্য। সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘এমন অভিজ্ঞতা আমারও হয়েছে । মানিকদাকে গভীর শ্রদ্ধা জানাই!’
সত্যজিৎকে ‘সিনেমার কবি’ আখ্যা দিয়েছিল ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’।
ছবিঃ সংগৃহীত