লিজ ট্রাসের পদত্যাগের পর, সোমবার (২৪ অক্টোবর) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুক্তরাজ্যের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন ঋষি সুনাক। ২০১৫ থেকে ২০২২ মাত্র ৭ বছরেই উল্কার গতিতে একজন সাধারণ সংসদ সদস্য থেকে শীর্ষপদে উত্থান ঘটল ঋষি সুনাকের। আগে তার জীবনে ঘটে অনেক ঘটনা, যেমন কাজ করেছেন ব্যাংকে আবার ওয়েটারের কাজও করেছেন।
১৯৮০ সালের ১২ মে সাউদাম্পটনের এক অভিবাসী পরিবারে জন্মেছিলেন তিনি। তার বাবা যশবীর এবং মা ঊষা দুজনেই ছিলেন ফার্মাসিস্ট। গত শতাব্দীর ছয়ের দশকে পূর্ব আফ্রিকা থেকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দিয়েছিল তাদের পরিবার। তাদের শিকড়ের সন্ধান পাওয়া যায় পঞ্জাবে। সুনাকদের পৈত্রিক ভিটে ছিল গুজরানওয়ালায়। যা এখন পাক পাঞ্জবের অন্তর্গত। ১৯৩০-এর দশকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে, তারা পূর্ব আফ্রিকায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।
উইনচেস্টার কলেজ থেকে তার স্কুলশিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন সুনাক। ইংল্যান্ডের এই বেসরকারী স্কুল, তাদের দেশকে একের পর এক চ্যান্সেলর দেয়ার জন্য সুপরিচিত। মজার বিষয় হল, হাত খরচা জোগারের জন্য গ্রীষ্মের ছুটিতে তিনি সাউদাম্পটনের এক ভারতীয় রেস্তোরাঁয় ওয়েটার হিসেবেও কাজ করতেন।
তিনি দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলেন।
২০০১-এ সেখান থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর, ‘গোল্ডম্যান শ্যাক্স’ সংস্থায় একজন আর্থিক বিশ্লেষক হিসেবে যোগ দেন। ২০০৪ পর্যন্ত তিনি এই বিনিয়োগ ব্যাংকিং সংস্থায় কাজ করেছিলেন।
তিনি পাড়ি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়তে গিয়েছিলেন। তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল তার স্ত্রী অক্ষতা মূর্তির। তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ধনকুবের এন আর নারায়ণ মূর্তির কন্যা হলেন অক্ষতা মূর্তি। ২০০৯ সালে অক্ষতা ও ঋষির বিবাহ হয়। এই দম্পতির দুই মেয়ে আছে, অনুষ্কা এবং কৃষ্ণা।
২০১৫ সালে প্রথম রাজনীতির ময়দানে পা রাখেন। ইয়র্কসের রিচমন্ড আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৭ এবং ২০১৯ সালে একই কেন্দ্র থেকে পুননির্বাচিত হয়েছিলেন সুনাক। থেরেসা মে-র মন্ত্রিসভায় তিনি যোগ দিয়েছিলেন একজন জুনিয়র মন্ত্রী হিসেবে।
২০১৯ সালে বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর, সুনাককে ব্রিটিশ কোষাগারের প্রধান সচিব করেছিলেন। ২০২০-র ফেব্রুয়ারিতে কোভিড মহামারি চলাকালীন তার পদোন্নতি হয়। তাকে ব্রিটিশ চ্যান্সেলর অর্থাৎ অর্থমন্ত্রীর পদে নিয়োগ করেন জনসন। কোভিড-১৯ মহামারির সময় ব্রিটেনের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করার জন্যতিনি যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন, তা উচ্চ প্রশংসিত হয়েছিল।
সুনাক কখনই প্রকাশ্যে তার সম্পত্তি প্রকাশ করেননি। রাজনীতিতে আসার আগে কর্মজীবনে তুমুল সাফল্যের জোরে ২০ বছরের কোঠাতেই তিনি কোটিপতি হয়ে উঠেছিলেন বলে শোনা যায়। বিয়ের পর যে তার অর্থভাগ্যের দরজা আরও প্রসারিত হয়েছিল। চলতি বছরে সুনাক ও তার স্ত্রীর সম্পত্তি নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে তার স্ত্রী ইনফোসিস সংস্থা থেকে যে আয় করেন, তার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারকে কোনও কর দেন না বলে, তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ঋষি সুনক। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে ট্রাসের কাছে পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল এই সমালোচনা।
সূত্রঃ টিভিনাইন। ফাইল ছবি।