হিজাব না পরার অভিযোগে ইরানের পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার হয়ে এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে।
তরুণীর নাম মাহসা আমিনি(২২)। গুরুতর আহত অবস্থায় বৃহস্পতিবার তাকে হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়, শুক্রবার কোমায় থাকা অবস্থায় মারা যান।
ইরান ওয়্যার ওয়েবসাইট এবং শার্গ সংবাদপত্রসহ ইরানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম গুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পড়াশোনা সূত্রে ইরানের কুর্দিস্তান প্রদেশে থাকতেন মাহসা, গত মঙ্গলবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে রাজধানী তেহরান এসেছিলেন।
হিজাব ও বোরকা না পড়ে বাড়ির বাইরে বের হওয়ায় বৃহস্পতিবার মাহসা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে ইরানের মর্যালিটি পুলিশ। হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার দু’ঘণ্টা পরই গুরুতর আহত অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে, গুরুতর শারীরিক নির্যাতনের জেরেই মৃত্যু হয়েছে মাহসার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মাহসা আমিনিকে তুলে নেয়ার সময় পুলিশ ভ্যানের ভেতরে তাকে মারধর করা হয়।
ইরানে লঙ্ঘন পর্যবেক্ষণকারী ১৫০০তাভসির চ্যানেল বলেছে, পুলিশ স্টেশনে পৌঁছনো এবং হাসপাতালে যাওয়ার মধ্যে কী ঘটেছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়, তার মাথায় আঘাত লেগেছিলো বলে জানিয়েছে সংবাদপত্রটি।
শুক্রবার মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর একটি বিবৃতিতে তেহরান পুলিশ বলছে, অফিসার এবং আমিনির মধ্যে কোন শারীরিক সংঘর্ষ হয়নি। ইরানে নারীদের পোষাকবিধি সম্পর্কে ‘ব্যাখ্যা ও নির্দেশনা’ দিতে মাহসাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। থানা হেফাজতে আসার পর আকস্মিকভাবে তার হৃদযন্ত্রে সমস্যা শুরু হয়, সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশের উদ্যোগে তাকে জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে বলেছে, ২২ বছর বয়সী তরুণী মাহসা আমিনির হেফাজতে সন্দেহজনক মৃত্যুর কারণ, যার মধ্যে হেফাজতে নির্যাতন এবং অন্যান্য খারাপ আচরণের অভিযোগ রয়েছে, তা অবশ্যই ফৌজদারিভাবে তদন্ত করা উচিত।
তেহরানের তথাকথিত ‘নৈতিকতা পুলিশ’ দেশের অবমাননাকর এবং বৈষম্যমূলক বাধ্যতামূলক পর্দা আইন প্রয়োগ করার সময় তার মৃত্যুর তিন দিন আগে তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। সমস্ত এজেন্ট এবং কর্মকর্তাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
ইরানের নিউইয়র্ক ভিত্তিক সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের প্রধান হাদি ঘাইমি, আমিনির মৃত্যুকে একটি “প্রতিরোধযোগ্য ট্র্যাজেডি” বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এই মৃত্যুর জন্য ইরানের সরকার দায়ী।
সূত্রঃ আল-জাজিরা, এএফপি। ছবিঃ সংগৃহীত।