গণেশ

Published By: Khabar India Online | Published On:

খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ গণেশ হলেন হিন্দুধর্মের সর্বাধিক পরিচিত ও সর্বাধিক পূজিত দেবতাদের অন্যতম। তিনি গণপতি, পিল্লাইয়ার (তামিল:பிள்ளையார், মূলত তামিলনাড়ু ও তামিল-অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে) বিঘ্নেশ্বর, যানইমুগতবন (তামিল:யானைமுகதவன்), বিনায়ক, গজপতি, একদন্ত ইত্যাদি নামেও পরিচিত। ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের বিভিন্ন অঞ্চলে গণেশের মন্দির ও মূর্তি দেখা যায়। সকল হিন্দু সম্প্রদায়েই গণেশের পূজা প্রচলিত রয়েছে। জৈন ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যেও গণেশ-ভক্তিবাদ মিশে গিয়ে গণেশ পূজার প্রথা বিস্তার লাভ করেছে।

গণেশ তার বিভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্য প্রসিদ্ধ। কিন্তু তার হাতির মাথাটিই তাকে সর্বাধিক পরিচিতি দান করেছে। গণেশকে বিঘ্ননাশকারী, শিল্প ও বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক এবং বুদ্ধি ও জ্ঞানের দেবতা রূপে পূজা করা হয়। বিভিন্ন শুভকার্য, উৎসব ও অনুষ্ঠানের শুরুতেও তার পূজা প্রচলিত আছে। অক্ষর ও জ্ঞানের দেবতা রূপে লেখার শুরুতেও গণেশকে আবাহন করা হয়। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে গণেশ-সংক্রান্ত একাধিক পৌরাণিক উপাখ্যান পাওয়া যায়। এই উপাখ্যানগুলি থেকে গণেশের জন্মবৃত্তান্ত, লীলাকথা ও তার স্বতন্ত্র মূর্তিতত্ত্বের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন -  Cricketer Wife: ‘হটনেস’ পোলার্ডের স্ত্রী-র, নেট পাড়ায় উষ্ণতা বাড়লো সাহসী ফটোশুটে, তরুণদের ঘুম উড়েছে

প্রাক-বৈদিক ও বৈদিক যুগের দেবতাদের মধ্যে গণেশের গুণাবলি বিদ্যমান ছিল। কিন্তু সেই গুণাবলি গণেশের উপর আরোপ করে পৃথক দেবতা রূপে তার পূজা প্রথম প্রসার লাভ করে গুপ্তযুগে (খ্রিস্টীয় ৪র্থ ও ৫ম শতাব্দ)। খ্রিস্টীয় ৯ম শতাব্দীতে হিন্দুধর্মের অন্যতম শাখা স্মার্ত সম্প্রদায়ের পাঁচ জন প্রধান দেবতার তালিকায় গণেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়া গাণপত্য নামে একটি পৃথক গণেশ-কেন্দ্রিক হিন্দু সম্প্রদায়েরও উদ্ভব ঘটে। এই সম্প্রদায়ে গণেশ সর্বোচ্চ ঈশ্বর রূপে পূজিত হন।আর তখন থেকেই অর্থাৎ ৯ম খ্রিষ্টীয় সাল থেকে সকল মূর্তি পূজার আগে গণেশের পূজা করা শুরু হয়। গণেশ-সংক্রান্ত প্রধান ধর্মগ্রন্থগুলি হল গণেশপুরাণ, মুদ্গলপুরাণ ও গণপতি অথর্বশীর্ষ।গণেশকে বিভিন্ন উপাধি ও বিশেষণে ভূষিত করা হয়। এগুলির মধ্যে ‘গণপতি’ ও ‘বিঘ্নেশ্বর’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। হিন্দুধর্মের সম্মানসূচক ‘শ্রী’ উপাধিটিও প্রায়শই গণেশের নামের আগে যুক্ত করা হয়।

‘গণেশ’ নামটি একটি সংস্কৃত শব্দবন্ধ। ‘গণ’ ও ‘ঈশ’ শব্দদুটির সন্ধির মাধ্যমে এই শব্দটির উৎপত্তি। ‘গণ’ শব্দের অর্থ একটি গোষ্ঠী, সমষ্টি বা বিষয়শ্রেণি এবং ‘ঈশ’ শব্দের অর্থ ঈশ্বর বা প্রভু। গণেশের নামের পরিপ্রেক্ষিতে ‘গণ’ শব্দটির মাধ্যমে বিশেষভাবে একই নামের একপ্রকার উপদেবতার গোষ্ঠীকে বোঝায়।

আরও পড়ুন -  Jyotipriyo Mallick: বড় আপডেট, কালো টাকা সাদা করতেই খোলা হয়েছিল এই ৩ কোম্পানি

‘বিনায়ক’ (विनायक; vināyaka) নামটি গণেশের একটি বহুল-পরিচিত নাম। এই নামটি পুরাণ ও বৌদ্ধ তন্ত্রগুলিতে বহু বার উল্লিখিত হয়েছে। মহারাষ্ট্রের আটটি বিখ্যাত গণেশ মন্দিরের নামকরণের ক্ষেত্রেও এই নামটির প্রতিফলন লক্ষিত হয়। এই আটটি মন্দিরকে ‘অষ্টবিনায়ক’ (মারাঠি: अष्टविनायक, aṣṭavināyaka) মন্দির বলা হয়। ‘বিঘ্নেশ’ (विघ्नेश; vighneśa) ও ‘বিঘ্নেশ্বর’ (विघ्नेश्वर; vighneśvara) (বিঘ্নের ঈশ্বর) নাম দুটি থেকে বোঝা যায় যে, হিন্দুধর্মে তার প্রধান কাজ বিঘ্নের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন ও বিঘ্ন অপসারণ।

তামিল ভাষায় গণেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হল ‘পিল্লাই’ (তামিল: பிள்ளை) বা ‘পিল্লাইয়ার’ (பிள்ளையார்)। এ. কে. নারায়ণের মতে, ‘পিল্লাই’ শব্দের অর্থ ‘শিশু’ এবং ‘পিল্লাইয়ার’ শব্দের অর্থ ‘মহান শিশু’। তিনি আরও বলেছেন যে, দ্রাবিড়ীয় ভাষাগোষ্ঠীতে ‘পাল্লু’, ‘পেল্লা’ ও ‘পেল্ল’ শব্দগুলির মাধ্যমে ‘দাঁত বা হাতির দাঁত’ বোঝায়। অনিতা রাইনা থাপান বলেছেন যে, ‘পিল্লাইয়ার’ নামটির মূল ‘পিল্লে’ শব্দটির আদি অর্থ সম্ভবত ‘হস্তীশাবক’। কারণ, পালি ভাষায় ‘পিল্লাকা’ শব্দের অর্থ তাই।

আরও পড়ুন -  দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির শুভেচ্ছা

বর্মি ভাষায় গণেশ ‘মহা পেইন্নে’ (မဟာပိန္နဲ, উচ্চারিত: [məhà pèiɴné]) নামে পরিচিত। এই নামটির উৎস পালি ‘মহা বিনায়ক’ (မဟာဝိနာယက) নামটি। থাইল্যান্ডে গণেশের জনপ্রিয় নামটি হল ‘ফ্রা ফিকানেত’। অধুনা ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম ভূখণ্ডে প্রাচীনতম যে সব মূর্তি ও উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে, তা খ্রিস্টীয় ৭ম ও ৮ম শতাব্দীর সমসাময়িক। এগুলিতে ভারতের ৫ম শতাব্দী বা তার পূর্ববর্তী গণেশ মূর্তি ও তার বিবরণের প্রতিফলন দেখা যায়।

শ্রীলঙ্কার সিংহল বৌদ্ধ অঞ্চলগুলিতে গণেশ ‘গণ দেবিয়ো’ নামে পরিচিত। সেখানে বুদ্ধ, বিষ্ণু, স্কন্দ ও অন্যান্য দেবতার সঙ্গে গণেশের পূজাও প্রচলিত আছে। সূত্র – সংগৃহীত।