চোট কাটিয়ে মাঠে ফেরা নেইমারের সময়টা খুব একটা ভালো যাচ্ছিলো না পিএসজির জার্সিতে। তবে ব্রাজিলের হলুদ জার্সি গায়ে চড়ালেই যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন তিনি। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়ে নেইমার আলো ছড়িয়েছেন তার স্বমহিমায়। সাথে জ্বলে উঠেছেন অন্যরাও। তাতেই বিখ্যাত মারাকানায় চিলির বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় তুলে নিয়েছে তিতের শিষ্যরা।
নেইমারের সাথে ব্রাজিলের হয়ে গোল করেছেন ফরোয়ার্ড লাইনের সবাই। দলে ফিরেই স্কোরবোর্ডে নাম তুলেছেন মাঝে নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে থাকা কৌতিনহোও। বার্সার হয়ে মাঝের সময়টা বড্ড দুর্বিষহ কেটেছে এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের, বার্সা ছেড়ে ওয়েস্ট হ্যামে এসে নতুন করে ফিরে পেয়েছেন নিজেকে। সেই ধারা কৌতিনহো অব্যাহত রেখেছেন জাতীয় দলের হয়েও।
শুরু থেকেই পুরোদমে দাপট শুরু ব্রাজিলের। বাঁশি বাজার মাত্র ৩২ সেকেন্ডেই চিলির জালে শট নেয় ব্রাজিল। তবে গোলরক্ষক ক্লদিও ব্রাভো সে যাত্রায় বাচিয়ে দিয়েছেন দলকে।
পুরো ৯০ মিনিটই আক্রমণের পর আক্রমণ করে চিলির রক্ষণভাগকে তটস্থ করে রাখে নেইমার-ভিনিসিয়াসরা। ম্যাচের ৫৮ শতাংশ বল নিজেদের পায়ে রেখে ব্রাজিল গোলের জন্য শট নিয়েছে ১৮ টি, যার অর্ধেকই ছিলো লক্ষ্যে। অন্যদিকে ভ্রাজিলের আক্রমণ সামলাতেই ব্যস্ত থাকা চিলি পুরো ম্যাচে ১০ টি শট নিলেও লক্ষ্যে রাখতে পেরেছে মাত্র দুটি।
ম্যাচের ১৯ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো ব্রাজিল। বাঁদিক থেকে ভিনিসিয়াসের বাড়ানো পাস একদম গোলরক্ষকের সামনে পেয়ে গিয়েছিলেন ব্রাজিলের পোস্টারবয় নেইমার, এ যাত্রায় আবারও চিলির ত্রাতা সেই ব্রাভো। নেইমার পায়ে বল লাগালেও সেটি আটকে দেন ব্রাভো।
মিনিট চারেক পর নেইমারের উঁচু করে দেয়া এক ক্রসে লাফিয়ে উঠে দারুণ এক হেড করেন থিয়াগো সিলভা। চিলির রক্ষাকর্তা আবার সেই ব্রাভো। ম্যাচের ৩৭ মিনিটেও ব্রাভোর সামনে আরও একবার আটকে যায় ব্রাজিল। নেইমারের আরো একটি শট এক পা দিয়েই প্রতিহত করেন তার এই সাবেক বার্সা সতীর্থ। চিলির গোলবারের নিচে ব্রাভো না থাকলে গোল সংখ্যা দুই হালিতেও পৌঁছাতে পারতো ব্রাজিলের।
ব্রাভোর বাঁধা পেরিয়ে ব্রাজিল প্রথম গোল পায় ম্যাচের ৪৪ মিনিটে গিয়ে। নেইমারকেই বক্সের মধ্যে ফেলে দেন চিলির মারিসিও ইসলা। পেনাল্টি থেকে এবার বাঁদিক দিয়ে ব্রাভোকে পরাস্ত করে ব্রাজিলকে ১-০ তে এগিয়ে নেন নেইমার।
এই গোলেই যেন খুলে যায় চিলির গোলমুখ। নেইমারের গোলের মিনিট খানেক পরেই এবার দলের হয়ে দ্বিতীয় গোল করন ভিনিসিয়াস। প্রথমার্ধ্বের ইঞ্জুরি টাইমে অ্যান্টোনির অ্যাসিস্ট থেকে বাঁ পায়ের শটে ব্রাজিলকে ২-০ তে এগিয়ে নেন রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড।
২-০ গোলে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধ্বে খেলতে নামা চিলি অবশ্য ব্যবধান কমাতে পারতো দুই মিনিটের মাথাতেই। জোয়াকিন মন্তেসিনোস ব্রাজিলের জালে বল পাঠালেও আর্তুরো ভিদালের অফ-সাইডের কারণে বাতিল হয় সেই গোল।
ম্যাচের ৬৩ মিনিটে লুকাস পাকুয়েতার বদলি হিসেবে মাঠে নামেন দলে ফেরা কৌতিনহো। ফর্মহীনতায় মাঝে দলের বাইরে থাকা কৌতিনহো গোল পেয়ে যান মাঠে নামার ৯ মিনিটের মাথাতেই। এবার অবশ্য ভুলটা করে বসেন ব্রাভোই। ছুটে গিয়ে ব্রাজিলের ফরোয়ার্ড অ্যান্টোনিকে ফেলে দিয়েছিলেন ডি বক্সের ভেতরেই। রেফারিও বাজিয়ে দেন পেনাল্টির বাঁশি। স্পট-কিক থেকে দলকে এগিয়ে নিতে একটুও ভুল করেননি কৌতিনহো। সাথে যেন তিতেকেও জানিয়ে দিলেন ব্রাজিল দল থেকে এখনও বাতিলের খাতায় পড়ছেন না তিনি। খেলা শেষ হওয়ার আগে ব্রাজিলের হয়ে গোলের পূরণ আরেক বদলি ফরোয়ার্ড রিচার্লিসন।
বক্সের ডান দিক থেকে নেয়া তার বাঁ পায়ের জোড়ালো শট ব্রাভোকে পরাস্ত করে জড়িয়ে যায় চিলির জালে। ম্যাভ শেষে ৪-০ গোলের বড় জয়ের তৃপ্তি নিয়েই মাঠ মারাকানার দর্শকরা।
ছবি- টুইটার