ঋতুপর্ণ ঘোষ (Rituporno Ghosh) মানেই একরাশ স্মৃতি। অভিনয়ের খুঁটিনাটি, সৃজনশীলতা ও অনেক ভালোবাসার আরেক নাম ঋতুপর্ণ। ঋতুপর্ণর হাত ধরেই মিমি চক্রবর্তী (Mimi Chakraborty)-র প্রবেশ টলিউডে।
মিমি অভিনয়ের টানে জলপাইগুড়ি থেকে কলকাতায় এসে কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। ইচ্ছা ছিল পড়াশোনার পাশাপাশি অভিনয় করবেন। প্রথম দুটি বছর কলেজে মন দিয়ে পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু থার্ড ইয়ারে তাঁর বন্ধুরাই তাঁকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন লক্ষ্যের কথা। পড়াশোনার পাশাপাশি মডেলিং শুরু করেন মিমি। তাঁর প্রথম সিরিয়াল ‘চ্যাম্পিয়ন’। উপার্জন করেছিলেন পনের হাজার টাকা। কিন্তু মাত্র চার মাস চলার পরেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এই সিরিয়াল। এরপরেই তাঁকে ডেকে পাঠান পরিচালক সুদেষ্ণা রায় (Sudeshna Ray)।
সুদেষ্ণার সূত্রেই ঋতুপর্ণর সঙ্গে সাক্ষাৎ। মিটিং হয়েছিল প্রসেনজিৎ (Prosenjit Chatterjee)-র বাড়িতে। ফোনে সুদেষ্ণা ‘গানের ওপারে’-র কথা বলেছিলেন। নির্দেশ ছিল ঋতুপর্ণর সামনে সুন্দর করে ‘মেয়ে মেয়ে’ সেজে আসার। সেই সময় মিমির কাছে ভালো পোশাক ছিল না, ছিল না মেকআপের সরঞ্জাম। চুলও কাঁধ অবধি ছোট করে কাটা। কোথাও গেলে মুখে একটু ক্রিম ও ঠোঁটে লিপবাম লাগিয়ে চলে যেতেন। ফলে বন্ধুদের থেকে ধার করা লিপস্টিক, সালোয়ার-কামিজ পরে নির্দিষ্ট দিনে প্রসেনজিৎ-এর বাড়ির সামনে এসে দেখেন অডিশনের লম্বা লাইন। দেখেই হাত-পা কাঁপতে শুরু করেছে মিমির। সুদেষ্ণাকে ফোন করে অনুনয় করে বললেন, এত জনের মধ্যে তিনি কিছুতেই সিলেক্ট হবেন না। তিনি ফিরে যেতে চান। এর মধ্যেই হঠাৎই সামনে এলেন ঋতুপর্ণ।
মিমিকে এক ঝলক দেখেই ঋতুপর্ণ উচ্ছ্বসিত, এই তো তাঁর পুপে। এরপর নিজের হাতে চোখে কাজল পরিয়ে, শাড়ি পরিয়ে দিয়ে সুদেষ্ণাকে বলেছিলেন, তিনি পুপেকে পেয়ে গিয়েছেন। আর কাউকে দেখতে হবে না। বাকিদের যেন চলে যেতে বলা হয়। হতবাক মিমি তখনও ভয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘামছেন ও ভাবছেন, এসব তাঁর সাথে কি হচ্ছে!
জলপাইগুড়ির প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে মিমি ঋতুপর্ণর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে অভিনয় শিখেছেন, সাজতে শিখেছেন, সঠিক উচ্চারণে সংলাপ বলতে শিখেছেন। রাত জেগে সংলাপ মুখস্থ করে পরের দিন সেটে হুবহু বলতে পারতেন বলে অচিরেই ঋতুপর্ণর প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু ভাবেননি, তাঁর জীবনেও আসবে সেই দুঃখজনক মুহূর্ত। মৃত্যুর কয়েকদিন আগেই ঋতুপর্ণ একবার ডেকেছিলেন মিমিকে, বলেছিলেন তাঁকে নিয়ে ফিল্ম বানানোর কথা। কিন্তু তা আর হল না। চলে গেলেন ঋতুপর্ণ। আজীবন আফশোস রয়ে গেল মিমির, যাঁর দৌলতে মিমি চক্রবর্তী হয়ে উঠলেন, তাঁর একটিও ফিল্মের অংশীদার নন তিনি।