খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ উপরাষ্ট্রপতি শ্রী এম ভেঙ্কাইয়া নাইডু সুপ্রিম কোর্ট থেকে নিম্ন আদালত পর্যন্ত ক্রমবর্ধমান মামলা জমে থাকার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সরকার ও বিচার বিভাগকে এই বিষয়টি দ্রুত সমাধান করে সুবিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। ভার্চুয়াল মাধ্যমে আজ অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ডঃ বি আর আম্বেদকর আইন মহাবিদ্যালয়ে ৭৬ তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে ভাষণে একথা জানান তিনি। উপরাষ্ট্রপতি দ্রুত ন্যায়-বিচার প্রদানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। দীর্ঘদিন ধরে অনেক মামলার ওপর স্থগিতাদেশের কারণে নিষ্পত্তি না হয়ে সেগুলি জমে রয়েছে। যারফলে ন্যায়-বিচার পাওয়া অনেক ক্ষেত্রেই ব্যায়বহুল হয়ে উঠছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
উপরাষ্ট্রপতি বলেন, জনস্বার্থ মামলাগুলিকে কখনই ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থে দেখা উচিৎ নয়। বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে তা ভাবা উচিৎ বলেও তিনি মতপ্রকাশ করেছেন। আইনের শিক্ষার্থীদের দূর্গতদের পক্ষ নিয়ে সওয়াল করার এবং তাদের আইনী জ্ঞানকে প্রান্তিক মানুষের ক্ষমতায়ণের পক্ষে কাজে লাগানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন শ্রী নাইডু। দরিদ্র প্রান্তিক মানুষদের আইনী সহায়তা প্রদানের পরামর্শও দেন তিনি। উদীয়মান আইনজীবীদের পেশাদারিত্ব ও নৈতিক আচরণ মেনে চলারও আহ্বান জানান তিনি। উপরাষ্ট্রপতি বলেন, দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তারা যেন নির্ভীক ও পক্ষপাত শূন্য হন। তিনি বলেন, আইনজীবীরা যেখানেই থাকুন না কেন তাঁরা যেন ন্যায়ের পক্ষে লড়াই করেন।
আইনের খসড়া তৈরি করার সময় অস্পষ্টতা এড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে উপরাষ্ট্রপতি বলেন আইন সহজ ও জটিলতামুক্ত হতে হবে। আইনের উদ্দেশ্য খুব স্পষ্ট হওয়া উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শ্রী নাইডু বলেন, আইনজীবীরা সামাজিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। তাই সমাজ বিকশিত হয় এমন আইন তৈরি করতে হবে। অবশ্যই ন্যায়-বিচার, ন্যায় পরায়ণতা, মমত্ববোধ এবং মানবতার দিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করতে হবে।
শ্রী নাইডু বলেন, যে আইনগুলি প্রগতিশীল সমাজে স্থান পায়না সেগুলিকে অবশ্যই সংশোধন করা প্রয়োজন। ন্যায়-বিচার ব্যবস্থা উন্নতির জন্য সর্বাত্মক প্রয়াস চালানোর আহ্বানও জানান তিনি। উপরাষ্ট্রপতি বলেন, সাধারণ মানুষ যাতে খুব সহজে আইনী পরিকাঠামো ও ন্যায়-বিচারের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন তার ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি আইনী স্বাক্ষরতা প্রসারণের ওপরও জোর দেন।
নতুন শিক্ষানীতি সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, এই শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক থেকে উচ্চপ্রাথমিক শিক্ষা পর্যন্ত মাতৃভাষার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। নিত্য দৈনন্দিন জীবনে মাতৃভাষার ব্যবহার, চর্চা ও প্রচার করার প্রয়োজন রয়েছে বলেও তিনি জানান। উপরাষ্ট্রপতি বলেন, শিক্ষা হোক বা প্রশাসন কিংবা বিচারবিভাগ, সর্বত্রই মাতৃভাষায় কথা বলতে, তর্ক-বিতর্ক চালাতে এবং লিখতে-পড়তে সক্ষম হতে হবে।
গান্ধীজির উদ্ধৃতি তুলে ধরে শ্রী নাইডু বলেন, রাম রাজ্যের প্রাচীন আদর্শ নিঃসন্দেহে প্রকৃত গণতন্ত্রের মধ্যে একটি। সেখানে মধ্যবিত্ত নাগরিক কোনও বিস্তৃত ও ব্যায়বহুল পদ্ধতি ছাড়ায় দ্রুত সুবিচার পেতেন।
উপরাষ্ট্রপতি বলেন, যখন বিচার-বিভাগ সহ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করি তখন আমরা তার থেকে কিছু প্রত্যাশাও করি।তাই তিনি তরুণ শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে আইন পেশায় নজর দিতে বলেন। শ্রী নাইডু বলেন, আইনজীবীদের সবসময় ক্ষমতাহীন ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
এই মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ডঃ সি আর রেড্ডির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে তাঁর ছাত্রাবস্থার কথা স্মরণ করেন উপরাষ্ট্রপতি। এদিন এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি টি রজনী এবং বিচারপতি বাট্টু দেবানন্দ, অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পি.ভি.জি.ডি প্রসাদ সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। সূত্র – পিআইবি।