Natyamela: কার্নিভালের মেজাজে নবম চর্যাপদ নাট্যমেলা

Published By: Khabar India Online | Published On:

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ   জমিয়ে শীত আর তার মাঝে আসানসোল উষ্ণ হয়ে উঠলো নাটকীয় ভাবে। রবীন্দ্র ভবন আসানসোলে চর্যাপদের নবম নাট্যোৎসব আয়োজিত হলো গত ১০, ১১, ১২ ডিসেম্বর। কানায় কানায় পরিপূর্ণ ছিলো নাট্য প্রেক্ষাগৃহ।

এতো দর্শক যে আসবেন ভাবতে পারেননি আয়োজক সংস্থাও। তাই উৎসবের দ্বিতীয় দিন পুনরায় টিকিট ছাপাতে হয় তাদের রাতারাতি। গৃহবন্দী মানুষ যেন মুক্তির স্বাদ পেলো চর্যাপদের হাত ধরে। চর্যাপদীয় প্রথা মেনে গাছে জল দিয়ে এই নাট্য উৎসব শুরু হয়।

আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার ডঃ নিখিল চন্দ্র দাস এবং ইসিএলের মেডিকেল অফিসার ডঃ শম্পা চ্যাটার্জী উৎসবের উদ্বোধন করেন। তারাই প্রকাশ করেন চর্যাপদের বার্ষিক থিয়েটার পত্রিকা ”এবং নাটক”এর উৎসব সংখ্যা। পত্রিকার বিষয় “ অবরুদ্ধ সময়ের থিয়েটার যাপন”। এবারের নাট্যমেলা ও পত্রিকা দুটিই উৎসর্গ করা হয় প্রিয় কোভিড যোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে।

আরও পড়ুন -  একটি বিশাল বড় কুমির উরফি জাভেদের পোশাকে! এই দেখে ভক্তরা কি জানালেন?

এদিকে অনবদ্য সৃজনশীলতায় যেন সেজে উঠেছিল রবীন্দ্রববনের প্রাঙ্গণ। দেখা যায় ‘চরৈবেতি – দ্যা শো মাস্ট গো ওন’ শীর্ষক একটি এক্সিবিশন। চর্যাপদের থিয়েটারি কর্মকান্ডের মুহূর্তগুলি সুন্দর ভাবে সাজানো হয় সেখানে।

তিন দিনে পশ্চিমবঙ্গের সাতটি বিখ্যাত নাট্যদলের নাট্য প্রযোজনা মঞ্চায়িত হয়। প্রথম দিন দশ ডিসেম্বর, মঞ্চস্থ হয় দুটি নাটক। অশোকনগর নাট্যমুখের “টু সোলস” নাটক ও নির্দেশনা অভি চক্রবর্তী। নাটকটি ও হেনরীর গিফট ‘অব্ দ্যা মেজাই’ গল্পকে আশ্রয় করে নির্মিত। এই প্রযোজনা ভালোবাসার বার্তা দেয় আমাদের। উপস্থাপন করা হয় ডানকুনি থিয়েটার শাইনের “তোমার ডাকে”, নাটক ও নির্দেশনা শুভজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।নাটকটি অত্যন্ত গবেষণাধর্মী একটি কাজ। দ্বিতীয় দিন আসানসোলের দুটি নাট্যদলের দুটি ভিন্ন ধারার নতুন নাট্য প্রযোজনা মঞ্চস্থ হয়। আসানসোল চর্যাপদ মঞ্চস্থ করে।

সাহিত্যের অন্যতম ধারা ম্যাজিক রিয়েলিজমকে ভিত্তি করে একটি মনস্তাত্ত্বিক নাট্য “আমি শুধু ফোন করতে এসেছিলাম “। কাহিনী নির্যাস গাব্রিয়েল গর্সিয়া মার্কেজ। নাটক ও নির্মাণ রুদ্র প্রসাদ চক্রবর্তী। নাটকের অভিনেত্রী সায়ন্তী চট্টোপাধ্যায়ের কথায়; মানুষের একাকীত্ব, স্বার্থপরতা, নিজের সামান্যতম সুখের জন্য অন্যের ইচ্ছেকে বলি দেওয়া। সামান্য একটা ভুল পদক্ষেপের জন্য জীবনের বিরাট পরিবর্তন এই সব নিয়ে যেন এক জীবন চরিত এই প্রযোজনা।

আরও পড়ুন -  Eyelids: ঘন করার উপায় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে, চোখের পাপড়ি

এই দিনে দেবাংশু দাসের নাটক ও পরিচালনায় পরিবেশিত হয় দোমোহানি বাজার নাট্যসেনার “বাঁধন সনাতনী” নাটকটিও। বর্তমান সময়কে তুলে ধরে এই প্রযোজনা।

শেষদিনে দেখা যায়; আবারও তিনটি ভিন্ন ধারার নাট্য প্রযোজনা। কল্পতরু গুহ নির্দেশিত অমিও মেমোরিয়াল ক্রিয়েটিভ আর্টসের “সতী”। মূকাভিনয়ের মাধ্যমে তুলে ধরেন নারী নির্যাতন। কয়াডাঙ্গা সবুজ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ‘মিরর’। একটি সাইকো থ্রিলার। নাটক ও নির্মাণ রাজেশ দেবনাথ। সব সব শেষে প্রদর্শিত হয় বিভূতিভূষন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনি ‘তালনবমী’ থেকে , বারাসাত কাল্পিক এর ‘পাতার বাঁশি’। নাটককার মুকুন্দ চক্রবর্তী, পরিচালনা দেবব্রত ব্যানার্জী। প্রতিটি নাটকই মানুষের মন জয় করে।

আরও পড়ুন -  New Year 2022: ইংরেজি নববর্ষ-২০২২ সালকে বরণ

আযোজিত হয়; “নবীন প্রজন্মের নাট্যচিন্তা” বিষয়ে একটি নাট্য সেমিনারের বক্তারা ছিলেন রাজেশ দেবনাথ , দেবব্রত ব্যানার্জি , শুভজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, রুদ্র প্রসাদ চক্রবর্তী এবং অরূপ গোস্বামী। এই বছরের ‘চর্যাপদের মুখ’ সম্মান পান চর্যাপদের মঞ্চস্থপতি পার্থসারথি কর। ‘চর্যাপদ চারুকলা সম্মান’এ সম্মানিত করা হয় রাজেশ দেবনাথ , দেবব্রত ব্যানার্জি , শুভজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এছাড়া প্রদান করা হয় চর্যাপদের স্টুডেন্ট স্কলারশিপ।
চর্যাপদের প্রথম ‘নাট্যমিত্র সম্মান’ প্রদান করা হয় রানীগঞ্জের বিধায়ক ও এডিডিএ মাননীয় চেয়ারম্যান শ্রী তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের সহায়তায় চর্যাপদের নাট্যোৎসব অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হয়। নাট্যোমোদী মানুষ আবারও আগমী চর্যাপদ নাট্যমেলার জন্য অপেক্ষায় থাকলো।